সিলেটের ১৬ উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, কাজ করছে না মোবাইল নেটওয়ার্ক
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
সিলেট: বন্যায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়া সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা আরও বেকায়দায় পড়েছেন বিদ্যুৎ না থাকায়। এখন পর্যন্ত পুরো সুনামগঞ্জসহ বিভাগের ১৬ উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ মোবাইল মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয়।শুক্রবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গ্রিডে সমস্যা হওয়ায় সুনামগঞ্জের সব উপজেলাসহ বিভাগের ১৬ উপজেলা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া সিলেট বিভাগে পানি ক্রমেই বাড়ছে। এতে বিদ্যুতের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সিলেটের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে রানওয়েতেও পানি ঢুকে পড়েছে।
বিদ্যুতের কারণে নেটওয়ার্কের সমস্যায় ঠিকমত কাজ করছে না মোবাইল ফোনও। উদ্ধার যানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট এখন একেবারেই বিচ্ছিন্ন। বিভাগের চার জেলার ৪০ উপজেলার মধ্যে ১৬টি বিদ্যুৎহীন। ফলে মোবাইল ফোন যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় কোনরকমে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় বন্যার্তরা কথা বলতে পারছেন না, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে না। সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ বলে জানা গেছে।গ্রামীণফোন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার কিছু কিছু টাওয়ার বন্ধ ছিল, এ সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে।টেলিটক সিলেট জোনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের ৬০ শতাংশ টাওয়ার ডাউন হয়ে গেছে। হাওর এলাকায় অবস্থা বেশি খারাপ। যেখানে-যেখানে সম্ভব হচ্ছে, কর্মীরা জ্বালানি তেল নিয়ে গিয়ে জেনারেটর চালু রাখার চেষ্টা করছে। সিলেটের হাওর এলাকারও অবস্থা একই। শহরের কিছু এলাকায় নেটওয়ার্ক ঠিক আছে। যেগুলোতে সম্ভব হচ্ছে টাওয়ার চালু করতে জেনারেটর চালানোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় জ্বালানি পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে।বাংলালিংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় পোর্টেবল জেনারেটর (বহনযোগ্য) পৌঁছে মোবাইল টাওয়ার সচল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।এদিকে সুনামগঞ্জে দ্রুত টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।বন্যাদুর্গত সিলেট ও সুনামগঞ্জে উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণে সেনা সদস্যদের মাঠে নামানোর কথা জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষকে উদ্ধার করা এবং নিরাপদে নিয়ে আনা। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।
বৃষ্টি আর ভারতের মেঘালয়-আসামের উজানের ঢলে চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৭০ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ১২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।আর এ কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে পূর্বাভাসে।