২০ অক্টোবরের মধ্যে হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নির্দেশ: সিইও বিশ্বজিত কে তিরস্কার
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকা: সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ গ্রেফতারের শিকার লন্ডন প্রবাসী ৭ পরিচালকদের প্রতিষ্ঠান হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ঘিরে সৃষ্ট সংকট নিরসনে অবশেষে হস্তক্ষেপ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ ও আমানত সুরক্ষার স্বার্থে পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা দূর করতে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালকদের নিয়ে মিটিং করেছে আইডিআরএ। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা ওই মিটিং থেকে পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন পর্ষদ গঠন করে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বিবাদমান পরিচালকদের নির্দেশ দিয়েছে আইডিআরএ। একইসঙ্গে অতিদ্রুত গ্রাহকদের বকেয়া বীমা দাবি পরিশোধ, সম্পদ ও আমানত সুরক্ষাসহ আগামী দিনে কোম্পানিটি কীভাবে পরিচালিত হবে সেসংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনাও জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিবাদমান পরিচালকদের উভয় পক্ষ আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর , সোমবার নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে মিটিংয়ে বসতে সম্মত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত আইডিআরএ কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত ওই মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে আইডিআরএ’র সদস্য (আইন) মোঃ দলিল উদ্দিন, সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান, সদস্য (নন লাইফ) মোঃ নজরুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র এস এম শাকিল আখতার উপস্থিত ছিলেন। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের মধ্যে নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রাজ্জাক , ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জামাল মিয়া, উদ্যোক্তা পরিচালক মোঃ কামাল মিয়া, উদ্যোক্তা পরিচালক মোঃ জামাল উদ্দিন, উদ্যোক্তা পরিচালক আবদুর রব, উদ্যোক্তা পরিচালক মোঃ আব্দুল আহাদ, উদ্যোক্তা পরিচালক মোঃ আবদুল হাই, উদ্যোক্তা পরিচালক শামীম আহমেদ, মোহাম্মদ জুলহাস, সালেহ হোসেন, হোসনে আরা নাজ, স্বতন্ত্র পরিচালক ইসতিয়াক হোসেন চৌধুরী ও শওকতুর রহমান উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র এস এম শাকিল আখতারের কাছে মিটিং সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যাংক বীমা-অর্থনীতিকে তিনি বলেন, আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে নিজেদের মাঝে সমঝোতা বা আলোচনার মাধ্যমে নতুন পর্ষদ গঠন করে আইডিআরএ’কে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দ্রুত গ্রাহকদের বকেয়া বীমা দাবি পরিশোধ, সম্পদ ও আমানত সুরক্ষাসহ আগামী দিনে কোম্পানিটি কীভাবে পরিচালিত হবে সেসংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনাও জানাতে বলা হয়েছে।
পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের কাছে মিটিং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইডিআরএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী সমঝোতার মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে সোমবার পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে।
মিটিং সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই মিটিংয়ের শুরুতে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য শোনেন আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান। এরপর মোহাম্মদ জুলহাসের বক্তব্য শোনেন তিনি।
সূত্র জানায়, মিটিংয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনসংক্রান্ত রেজুলেশন এসেছে। যে পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। মোহাম্মদ জুলহাসকে উদ্দেশ্য করে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, আপনিও বলছেন আপনার নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠিত হয়েছে। কিন্তু সে সংক্রান্ত কোনো রেজুলেশন আমরা পাইনি। মোহাম্মদ জুলহাসের উদ্দেশ্যে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, সাতজন পরিচালককে কারাবন্দি রেখে আপনি বোর্ড গঠন করতে পারেন না। আপনি বলছেন, ২২ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টায় বোর্ড গঠন করার পরে সাতজন পরিচালক গ্রেফতার হয়েছেন। অথচ উনারা বলেছেন, দুপুর সোয়া একটার দিকেই কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) চলাকালেই পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেছে। তাহলে আপনি কীভাবে, কোথা থেকে, কাদেরকে নিয়ে মিটিং করলেন বা বোর্ড গঠন করলেন? এ সময় মোহাম্মদ জুলহাসের পক্ষ থেকে সিইও’র সই করা পরিচালনা পর্ষদ গঠন সংক্রান্ত রেজুলেশন দেখালে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলকে তিরস্কার করা হয়। সিইও’র বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, যোগদানের মাত্র তিনমাসের মধ্যে কীভাবে একই কোম্পানির দুটি পরিচালনা পর্ষদের রেজুলেশনে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সই করতে পারেন? একটি রেজুলেশন কেন আবার, কার স্বার্থে আপনি গোপন করে রাখলেন? এবং দুটি পরিচালনা পর্ষদের রেজুলেশনে সই করে কোম্পানিতে সৃষ্ট অচলাবস্থার মধ্যে কীভাবে কক্সবাজারে সম্মেলন করতে গেলেন? তবেএসময় সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল এসব প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি আইডিআরএ’র কাছে।
সূত্র জানায়, সভায় হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। ওই সভা থেকেই হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালনা পর্ষদে কারা কারা থাকবেন এবং কে চেয়ারম্যান হবেন পরিচালকদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। তবে মোহাম্মদ জুলহাস সময় চাওয়ায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সভায় আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, হোমল্যান্ড আপনাদের কোম্পানি। আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ২০ অক্টোবরের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। যদি এই সিদ্ধান্ত নিতে আপনারা ব্যর্থ হন তাহলে আইডিআরএ গ্রাহকের স্বার্থে পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। যে কোন বোর্ড আপনারা গঠন করতে পারেন, কিন্তু গ্রাহকদের স্বার্থ ও আমানতের সুরক্ষার প্রয়োজনে সেই বোর্ড ভেঙে দেয়ার আইনি ক্ষমতা আইডিআরএ’র রয়েছে।
এদিকে বুধবার চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকসহ নতুন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছালে বোর্ড রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় পান। এমনকি অফিস সময় শেষ না হলেও তালাবদ্ধ পান সিইও’র কক্ষও। জানা যায়, নতুন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা আসার মাত্র কিছু সময় আগেই দ্রুত অফিস ত্যাগ করেন মোহাম্মদ জুলহাস ও সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল।
সূত্র: দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি