মক্কার তরমুজ কাহিনী

আকবর হোসেন
অতিথি করেসপন্ডেন্ট, সত‍্যবাণী

মক্কা শরীফ, সৌদি আরব থেকে: তার নাম মুহাম্মদ সোহাগ। মক্কা শরীফে হোটেলের পাশে তরমুজ বিক্রেতা। দৃষ্টিনন্দন, বাইরে কুতকুতে সবুজ, ভেতর লাল তরমুজ। সে বাংলায় ডাকছে দেশী কাস্টমারদের। তরমুজ লাগবে, ভালো তরমুজ! সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে হোটেলের বাইরে সেলুনের খুঁজে বের হলে ফুটপাতে তার সাথে দেখা।

এটি তার স্ট্যান্ড নয়। কাজ করে এক সৌদি মহাজনের সাথে। অন্য পাশে দাঁড়ানো তিনি। সোহাগ আমার কাছে তরমুজ বেচতে চায়। আমি বললাম, আমিতো হোটেলে। কীভাবে কাঁটবো! সে যেনো আমাকে কেঁটে দিতেই চাইছিলো। তারপর কথায় কথা উঠলো। বাড়িঘর জানা হলো। ভাবছিলাম তার কথাবার্তায় সে সিলেটের নয়। কিন্তু সে আমাকে চমকে দিয়ে জানান দিলো সে সিলেটেরই। সিলেটের কোথায়? জানালো জগন্নাথপুর। তারপর বললো কলকলিয়া গ্রাম। আমি বললাম আমার বাড়ী রানীগঞ্জ। সে জিজ্ঞেস করলো ব্রিজের পাশে কিনা। সে এতটুকু জানে। এ যেনো এক small world!

সোহাগ এসেছে কয়েক বছর হলো। অন্য শহরে কাজ করতো। যা খরচপাতি করে এসেছে সৌদিতে তা তুলে ফেলেছে জানালো। তার ভাষায় সে বলে ‘আসল বাওয়াইলাইসী’। আপাতত তরমুজের সাথেই আছে। রোজা মাসে অন্য কাজ করবে। পাশে দাঁড়িয়ে মুদির (মালিক) আব্দুল করিম আমাদের কথাবার্তা শুনছিলো আর হয়তো ভাবছিলো এক তরমুজ বিক্রি করতে এতো কথাবার্তা কেনো! এরই মধ্যে সোহাগ কী যেনো আরবিতে তার মালিককে বললো সব বুঝলাম না। তবে আঁচ করলাম সে বলেছে আমি তার দেশের এবং একই এলাকার লোক।

সোহাগ দিন প্রতি আপাতত ৫০/৬০ রিয়াল পায়। তার চোখে মুখে বেশ আনন্দের ঝিলিক দেখলাম। টগবগে এক কিশোর যুবক, তার আচরণে আমি মুগ্ধ হলাম। ও হাঁ, তরমুজ কিনবো, কী করবো? হঠাৎ ভাবলাম এই তরমুজ লন্ডনে লাগেজে ভরে নিলে কেমন হয়? জানি হোম মিনিস্টার বলবেন এটা কেনো বয়ে নিয়ে এসেছি কিন্তু ভেতর লাল দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। আমাদের ফ্যামিলিতে খুবই অসুস্থ এক আপনজন, তিনি খুশি হবেন আমার বিশ্বাস। উনার জন্যই আসলে তরমুজটি কিনতে চাইলাম। তাকে বললাম, এই তরমুজ আমার সাথে যাবে লন্ডনে ফ্লাইটে। নষ্ট হবে না তো? এই কথা শুনে সে একটু শক্ত দেখে একটি তরমুজ আমাকে একটি পলিথিন ব্যাগে ভরে দিলো। দাম বললো ৫ রিয়াল। আমি তাকে পে করতে চাইলাম কিন্তু বাদ সাধলেন মুদির আব্দুল করিম। তিনি নাছোড়বান্দা, আমার কাছ থেকে পয়সা নেবেন না। বার বার আমি এর দাম দিতে চাইলাম। কিন্তু তিনি সোহাগকে আরবিতে বললেন তিনি আমাকে এই তরমুজ হাদিয়া হিসেবে দিয়েছেন। কী আর করা! শুকরিয়া জানালাম। হাদিয়া তো আর ফিরিয়ে দেয়া যায় না।

এই তরমুজ কাহিনী যখন লিখছিলাম তখন বিখ্যাত রম্য লেখক একজন পরিব্রাজক, অনেক সুখপাঠ্য ভ্রমণ কাহিনীর লেখক আমাদের গর্ব সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা মনে পড়লো। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, তাঁর জন্য দুয়া করি।

আজ মদীনা শরীফ যাবো শুনে সৌদি মুদির আব্দুল করিম আমার কাছে দুয়া চাইলেন। এর আগে আমার স্মৃতির জন্য ফটো তোলারও অনুমতি দিয়ে তিনি আমাকে ধন্য করলেন।

 

You might also like