উত্তেজনার মধ্যেই গোয়েন্দাপ্রধানকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ইসরাইল: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা বিরোধীদের সঙ্গে তার সরকারী জোটের সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের হামলার ব্যর্থতা নিয়ে শিন বেতের অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর থেকেই এই টানাপোড়েন চলছিল।রবিবার (১৬ মার্চ) এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “আমি সরকারের কাছে শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রস্তাব দিচ্ছি। বর্তমানে ইসরায়েল অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে, তাই প্রধানমন্ত্রী ও নিরাপত্তা প্রধানের মধ্যে সম্পূর্ণ আস্থা থাকা জরুরি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই আস্থা আর নেই।” তার এই প্রস্তাব বুধবার সরকারের বৈঠকে আলোচনার জন্য তোলা হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের চ্যানেল ১২।এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে শিন বেতের সেই তদন্ত, যেখানে ৭ অক্টোবরের হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। নেতানিয়াহু এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন, এতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুপস্থিত। অন্যদিকে, বিরোধী দলীয় নেতারা মনে করছেন, নেতানিয়াহু দায় এড়াতে এবং নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করতে চাইছেন।ইসরায়েলের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ এই সিদ্ধান্তকে “লজ্জাজনক” বলে মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন, নেতানিয়াহু জাতীয় নিরাপত্তার চেয়ে নিজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু দায় এড়াতে চাইছেন, কিন্তু সত্য লুকোনো যাবে না। ৭ অক্টোবরের ব্যর্থতার জন্য তিনিই প্রধান দায়ী।” লাপিদ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটস পার্টির প্রধান ইয়ায়ির গোলান এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “নেতানিয়াহু তদন্ত বন্ধ করতে চাইছেন, কারণ এতে তার ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে সন্দেহজনক সম্পর্ক প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি ক্রমশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের দমন করার চেষ্টা করছেন।” অন্যদিকে, সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গান্তজ বলেছেন, “এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর এবং এটি রাজনৈতিক স্বার্থের জন্যই নেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির যোগাযোগমন্ত্রী শলোমো কারহি বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “রোনেন বার একজন স্বৈরাচারী কর্মকর্তা, যার উপস্থিতি ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।” উগ্র ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন-গভির এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেন, “এটি দেরিতে হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত।” তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদাঙ্ক অনুসরণ করে “গভীর রাষ্ট্রের” (Deep State) বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্ত নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর আগে, ২০২২ সালে তার কট্টর ডানপন্থী সরকার বিচার বিভাগের সংস্কারের পরিকল্পনার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বিরোধীরা বলছে, এটি ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একটি অপকৌশল।গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও নেতানিয়াহুর সরকার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গত বছর নভেম্বরে নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার মামলা চলছে। নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি