গোপন সীমানা


শামীম আহমদ তালুকদার                            

পর্ব-৩

আমির আলী ও ইলিয়াছ আলী দু’জন মিলে তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অত্যন্ত কৌশলে স্বপ্নগুলো তছনছ করে দিতে লাগলেন। পেট্রল পাম্পে মাসিক কার্ড নিয়ে বিভিন্ন (মোয়াছ্ছাছা) ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের গাড়ীগুলোতে পেট্রল ও ডিজেল নিয়ে থাকেন।এক একটি কার্ড বিশ থেকে পঞ্চাশ লিটার । ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের গাড়ীর চালকরা পেট্রল পাম্পে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে যোগ সাজেস করে পঞ্চাশ লিটারের স্থলে ত্রিশ লিটার ভরে বাকি বিশ লিটারের টাকা পেট্রল পাম্প শ্রমিক ও চালক ভাগ করে নেন। এ ছাড়াও নগদে যে সকল আরবিয়ানরা পেট্রল বা ডিজেল নিতেন তারা গাড়ী পার্কিং করেই বলে থাকেন (আব্বি) ফোল।মিটারে হিসাব আটান্নব্বই রিয়াল বা অনুরূপ হলে ভাল আরাবিয়ানরা একশত রিয়ালের নোট দিয়ে যান। এভাবে প্রতিদিন অতিরিক্ত আরো দেড় দুইশত রিয়াল হয়। কিন্ত এর পরও প্রতিদিন হিসেব নিকেশে কম পড়ছে। আমি বিষয়টি (কফিল) বসকে বুঝিয়ে বলব সেই রকম আরবি ভাষা শিখা হয়নি। কিছুটা আরবি জানেন এমন একজন বাংলাদেশী ভাইকে দিয়ে বস এর সাথে বিষয়টি সেয়ার করার চেষ্টা করলাম। প্রতিদিন হিসেবে টাকা কমছে এভাবে কমতে থাকলে বেতনের টাকা ভর্তুকি দিয়ে দেশ থেকে টাকা আনতে হবে।

সমাজে বিভিন্ন সালিশ বৈঠকে সামাজিক শান্তি স্মৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করা হয়।এই প্রচলিত কথার উদ্বৃতি দিয়ে চুর, ডাকাত, জোয়ারীদের পার করে নিয়ে যায় সমাজের এক শ্রেনীর আধিপত্যবাদী সালিশ ব্যক্তিরা। আবার ক্ষেত্র বিশেষ জোয়ারী, সুদখুরদের ও দেখা যায় সমাজের হর্তা- কর্তা হিসেবে। সামাজিক শান্তি স্মৃঙ্খলার কথা বিবেচনায় হয়তো তারা কর্তা হয়ে যান। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে পারেননা সাধারন মানুষ। কেউ প্রতিবাদী হলে গলা চেপে, বুকে পাচাপা দিয়ে ধরা হয়। আর প্রবাসে দেখছি আধিপত্যবাদীদের উত্তরসুরীরা ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করছে। ভাষার মাইর দিতেছে। আমির আলী ও ইলিয়াছ আলী আমাকে বললেই পারতেন। অন্তত স্বপ্ন ও সামাজিক শান্তি স্মৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে তাদের চুরি করার সুযোগ দিয়ে দিতাম এবং চুরির টাকায় ভাগ বসাতাম না।বস্ (কফিল) শেষ পর্যন্ত সদয় হয়ে আমাকে সুপার মার্কেটের গোডাউনে নিয়ে গেলেন। সুপারমার্কেটে প্রতি সপ্তাহে এক হাজার দুই শত ব্যাগ চাল, ময়দা, আটা, চিনি বিক্রি হয়। এগুলো জেদ্দা শহর থেকে মার্কেটের নিজস্ব লরি (ট্রাক) পরিবহন করে। প্রতি রোববার লরি গোডাউনে সামনে আসা মাত্র (আনলোড) খালাস করতে হয়। আমার সঙ্গে সহকর্মী সাইফুল ইসলাম। একজন লরির উপরে একজন নিচে। দুই বগলের নিচে পঞ্চাশ কেজি ওজনের দুটি ব্যাগ। এভাবে বিরতি নিয়ে পালা বদল করে গভীর রাত পর্যন্ত চলতো খালাসি কাজ। সপ্তাহ ব্যাপি এগুলো আবার খুচরা বাজারে বিক্রি করা ও গ্রাহকদের গাড়ীতে তুলে দেওয়া। আরবিয়ান গ্রাহক মার্কেটে প্রবেশ করেই অর্ডার করে থাকেন। রুজ, দাগিগ, বুধরা, সুক্কার, ওয়াহিদ-ওয়াহিদ। অথ্যাৎ এক বস্তা করে চাল, ময়দা, আটা ও চিনি।

একজন খালাসি হিসেবে অসাধারন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। দৈনদিন চিন্তা-ভাবনা ও চেতনার মাধ্যে একটি বড় জায়গা দখল করে থাকে স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে বলেই হয়তো মানুষ বেঁচে থাকে। তবুও আমি তিলোত্তমা শহর লন্ডন যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। আমাকে স্বপ্ন সব সময় তাড়া করে চলেছে।নয়শত রিয়াল মাসিক বেতন কথা থাকলেও মাস শেষে আব্দুল্লাহ আলি বাদশা আমার হাতে ছয়শত রিয়াল ধরিয়ে দিলেন। তার সাথে তর্ক হল। কিন্ত তিনি নয়শত রিয়াল বেতনের কথা অস্বীকার করে গেলেন। মনে মনে ভাবছি বেতন না দিলেও কাজ করবো। অধিকার আদায়ে লড়াই করতে হলে আমাকে আরবি ভাষা শিখতে হবে। তার পর প্রতিবাদ প্রতিরোধ ও সংগ্রাম করবো। এভাবে বছর কেটে গেলো। আকামা (পরিচয় পত্রের) মেয়াদ প্রায় বাকি এক সপ্তাহ। আব্দুল্লাহ আলি বাদশাকে জানিয়ে দিলাম আকামার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর নবায়ন না করে দেশে ফিরে যেতে চাই। আলি বাদশা খুব সক্ষেপে একটু অপেক্ষা করার কথা বললেন। আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ম্যানাজারের অফিস কক্ষে আমাকে ডেকে নেওয়া হলো। অফিসে বসে আছেন মার্কেটের ম্যানাজার ফিলিস্তিনের নাগরিক রাইদ ও বস্ আব্দুল্লাহ আলি বাদশা। আমার কাছে জানতে চাওয়া হলো কেন দেশে ফিরে যেতে চাই ? জবাবে সব সমস্যাগুলো উপস্থাপন করলাম এবং এত অল্প বেতনে কাজ করে আমার খাবার খরছ শেষে এক টাকাও দেশে পাঠাতে পারছিনা জানিয়ে দিলাম। তিনি সমস্যা সমাধান করবেন ও মাসিক বেতন এক হাজার পঞ্চাশ রিয়াল দিবেন বলে আশ^স্থ করলেন। আব্দুল্লাহ আলি বাদশা জানালেন এখন থেকে সেইলস্ বিভাগে কাজ করার জন্য। আরো দুই বছরের জন্য আকামা নবায়ন করা হল।

কিন্ত আমার পদোন্নতি মেনে নিতে পারছিলেন না দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত খালাসি সাইফুল ইসলাম। ফিলিস্তিনি নাগরিক ম্যানাজার রাইদ দেশে চলে যাওয়ার সময় খালাসি সাইফুল ইসলাম ম্যানাজার হবেন। আব্দুল্লাহ আলি বাদশা এমন ইঙ্গিত সাইফুল ইসলামকে দিয়েছেন জানতে পারলাম। যাতে করে শত্রুর সংখ্যা কমাতে এ কথা সহকর্মীদের জানিয়ে দিলাম যে আমি ম্যানাজার হতে আসিনি। আমি লন্ডন যেতে এসেছি। একজন খালাসি আর লন্ডন তার কাছে বেমানান মনে হয়েছে।কিন্তু সত্য অপ্রিয় হলেও সত্য। কিছু অপ্রিয় সত্য বলতে নেই। কয়েকমাস পর সাইফুল ইসলাম সেইলস্ বিভাগে যোগ দিলেন। দু’জনেই মিলে মিশে কাজ করছি। সকাল ছয় ঘটিকা থেকে রাত এগার ঘটিকা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। দুপুরের খাবার খেতে আধা ঘন্টার বিরতি। একজন খাবার খেয়ে ফিরলে অপরজন গিয়ে খাবার খেতে হত। মার্কেটের মাল রাখার জন্য আলমারি, শো কেশ বা রেক এর নিচ পরিষ্কার করার জন্য সাইফুল ইসলামকে বলেছেন আলি বাদশা। সাইফুল রেক এর নিচের স্টীল খুলার পর দেখতে পেলেন অনেক দামী ড্রিং এর খালি ক্যান পড়া রয়েছে। আলি বাদশা চমকে গেলেন। আমাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করা হল এসব কি ? আমিতো হতবাক হয়ে গেলাম। এভাবে এক এক করে সবকটি স্ট্যান্ড বা রেক এর নিচ খুলে প্রায় সাড়ে তিনশত রিয়াল মুল্যের খালি ড্রিং এর ক্যান পাওয়া গেলো। আমরা দু’জন কাজ করি। এছাড়াও রয়েছেন ফিলিস্তিনি ম্যানাজার রাইদ। রাত ১১টার পর আমি চলে যাই। এর পর যারা থাকেন তাদের উপর দায়ভার না দিয়ে আলি বাদশা একক ভাবে আমার উপর দায়ভার চাপিয়ে দিলেন। এত বড় একটা মার্কেট। তখন সিসি ক্যামেরা ছিলনা। দুষ্ট গ্রাহকরা টাকা পরিশোধ না করার জন্য ড্রিং করে হয়তো নিচে রেখে গেছে। সাইফুল ইসলামও এটা করে থাকতে পারেন। কিন্ত না দেখে সাক্ষ্য প্রমান ছাড়া দোষারোপ করতে পারিনা। কাজটা একদিনের নয়। অনেকদিন ধরে চলে আসছিল। কয়েকটা খালি ক্যান পেয়েছিলাম এক বছর আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কিন্ত আলি বাদশা মাস শেষে বেতন থেকে সাড়ে তিনশত রিয়াল কেটে নিলেন।

আল্লাহ সর্ব শক্তিমান। সম্মান ও ক্ষমার মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা অপমান করেন। সমাজে হিংসা, লোভ, আধিপত্য ও ক্ষমতার দ্বন্ধে নিপতিত গোষ্ঠী, চাকরি, উপার্জন ও ক্ষমতাকে আল্লাহর নিয়ামত না মানাই অনিষ্টের কারন। সাইফুল ইসলামের সাথে এক কক্ষে থাকলেও রান্না ও খাবার পৃথক খেতে শুরু করেছি। কথা বলাও একবারে সীমিত পরিসরে। একদিন সকালে মার্কেট খুলার পর ম্যানাজার রাইদ বিশেষ প্রয়োজনে বাহির চলে গেলেন। রাইদ আসার আগ পর্যন্ত সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়ে যান। আগের দিন রাত বার ঘটিকার সময় কাজ শেষে মার্কেট থেকে বাসায় ফিরেছি। এত দীর্ঘ সময় ডিউটি করে খুব একটা ক্লান্ত বোধ করছিলাম। এছাড়াও মনটা ভাল নেই। চার পাশের সবগুলো দরজা খুলার পর মুল ফটক দিয়ে মার্কেটের ভিতর প্রবেশ করেছি। সাইফুল ইসলামের ফরমায়েশ মকনেছা করতে হবে। মকনেছা হচ্ছে একটি মিশিন যার মাধ্যমে বাতাশের সাহায্যে কার্পেট থেকে ধুলাবালি সহজেই পরিষ্কার করা যায়। সাইফুল ইসলামকে বলেছিলাম খুব একটা ক্লান্ত একটু পরে করছি। একটু পরে কেন বললাম অশালীন ভাষায় গালি দিতে শুরু করেন। পিছন ফিরে এগিয়ে এসে বাম হাত দিয়ে তার সার্টের কলার ধরে কাউন্টারের ভিতর থেকে বাহিরে নিয়ে এসে ঝাপটা মেরে ধরেছি। একদিকে আরবিয়ান কফিলের মানষিক নির্যাতন তার উপর বাংলাদেশী ভাইও একমিনিটের সময় দিচ্ছেনা এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। হঠাৎ আলি বাদশার পিতা এসে দেখলেন দু’জনের মধ্যে রেসলিং এর দৃশ্য। তিনি দু’জকে শান্ত হতে বলেন। আলি বাদশাকে মুঠোফোনে বিষটি জানান। আমি চলে গেলাম শয়ন কক্ষে। বিকেল বেলা আলি বাদশা এসে আমাকে খবর দিলেন। মার্কেটে যাওয়ার পর তিনি বললেন আমার কফিল হাসান মর্দি রমাদ্বান আল জাহরানী এসে বিষটি দেখবেন। আসল কফিলের নাম প্রকাশ করে আরেকটি চমক দিলেন আলি বাদশা। হাসান মর্দি রমাদ্বান আল জাহরানী হলেন আলি বাদশার ব্যবসায়ী পার্টনার। তিনি সন্ধ্যায় আসলেন। সমাধানে জন্য করণীয় সব কিছু করলেন। কিন্ত সাইফুল নির্লজ্যের মত সব কিছু হাঁসি মুখে মেনে নিয়েছে।
প্রবাসে একজন শ্রমিক কতটা কষ্ট করছে এই চিন্তাটা পরিবারের কেউ না করলেও কত আয় করেন সেগুলো কিভাবে খরছ করেন তার হিসেব সব সময় আত্মীয় স্বজনরা নিতে ভুল করেনা। পরিবার-পরিজন ছেড়ে অমানুষিক পরিশ্রম করা শারীরিক ও মানসিক কতটা যন্ত্রনার বিশেষ করে একজন মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীই ভাল জানেন। দুই বছরের আকামা। আকামার মেয়াদ শেষ না হলে (কুরোজ নেহায়ী) ভিসা বাতিল করবেন না হাসান মর্দি রমাদ্বান আল জাহরানী। আরবি ভাষা কিছুটা শিখেছি। এখন অন্যের সাহয্য ছাড়াই আরবিয়ানদের সাথে কথা বলতে পারছি। অন্যদিকে রিয়াদ শহরের এক দালালের মাধ্যমে লন্ডনে যাওয়ার ভিসা প্রসেস এর জন্য কথা চলছে। ত্রিশ হাজার রিয়ালে মৌখিক চুক্তি হল। লন্ডন প্রবাসী নিকট আত্মীয় আনিছ উল্লাহ তালুকদার ত্রিশ হাজার রিয়াল দিবেন সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করলেন। কিন্ত আলি বাদশা ও হাসান মর্দি রমাদ্বান আল জাহরানী স্বাভাবিক ভাবে ছুটি দিবেনা। একবার উমরাহ হজে¦র জন্য যেতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে ছুটি দেয়নি। বাংলাদেশ থেকে একটা (থার) টেলিগ্রাম বার্তা নিলাম। টেলিগ্রাম বার্তা পাওয়ার পর আলি বাদশাকে জানালাম। তার চেহারা কেমন যেনো কালো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। অনেক্ষন চিন্তা করে বললেন ঠিক আছে ছুটি দেওয়া হবে। পরদিন ছুটির জন্য আকামা পাসপোর্ট নেওয়া হলো। দুদিনের মধ্যে ছয় মাসের ছুটি সহ পাসপোর্ট হাতে পেলাম। সবার নিকট থেকে বিদায় নিয়ে জেদ্দা শহরে পৌছালাম। জেদ্দা থেকে লন্ডন প্রবাসী আনিছ উল্লাহ তালুকদার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে জানালাম আমি ছয় মাসের ছুটি নিয়ে রিয়াদের উদ্দেশ্যে এক দুদিনের মধ্যে যাত্রা করবো। ভিসা প্রসেস হওয়ার পর টাকা দিতে হবে। তিনি তখন জবাব দিয়েছিলেন, তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কেন বুঝতে পারছেন না ? আপনার সম্মতি নিয়েইতো কাজ শুরু করেছি। তিনি এমন কথা বার্তা শুরু করলেন যেন কিছুই জানেনা। এক পর্যায়ে ফোন কেটে দিলেন। আমি বুঝে নিয়েছি তিনি বয়স্ক হলেও আমার সাথে ছেলে মানুষী কাজ করেছেন। পরদিন জেদ্দা থেকে আলি বাদশাকে ফোন করে জানাই আপাদত আমাকে দেশে যেতে হবেনা। এখন আমি ফিরে আসবো কি ? আলি বাদশা খুব খুশি হয়ে ফিরে যেতে বলেন। কর্মস্থল আল মান্ডাক এলাকায় ফিরলাম। সাইফুল ইসলামের সাথে প্রায়ই বাক-বিতন্ডা হয়ে যেতো। আলি বাদশাকে প্রতি মাসেই এক দুবার ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দিতে হুমকি দিতাম। তিনি আমাকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বাসায় পাঠিয়ে দিতেন। দু’দিন পর আবার খবর দিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করতেন ঘুম পূর্ণ হল ? আমি হেঁসে হেঁসে বলতাম হ্যাঁ।
সকাল ছয়টা থেকে রাত বার ঘটিকা পর্যন্ত কাজ করা অমানুষিক বটে।

তিনি তা অনুভব করতেন। অনুভব করলে কি হবে ? বিবেক যদি জাগ্রত না হয়। এভাবে সব দু:খ কষ্ট মেনে নিয়ে দুই বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন দিন পূর্বে আকামা দিয়ে দিলাম। পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিরাম আমি আর থাকবনা। আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন আলি বাদশা বিশ্রাম করার জন্য আমকে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। এক সপ্তাহ বিশ্রামের পর ডেকে নিয়ে জানতে চাইলেন আকামা নবায়ন করার কথা। তখনও জানিয়ে দিলাম ভিসা বাতিল করে দেন দেশ চলে যাবো। আলি বাদশা মনটা খুব খারাপ করে বলেন হাসান মর্জি রমাদ্বান আল জাহরানি আমার সাথে কথা বলবেন। হাসান মর্জি রমাদ্বান আল জাহরানি অফিসে এসে আমাকে ডাকলেন। আমি একই কথা বলেছি আমাকে দেশে দেশে হবে। তিনি বেতন বাড়িয়ে তিন হাজার রিয়াল দিবেন বলেছেন। তিন মাস পর দেশে যেতে অনুরোধ করেছেন। তার হাতের মুঠোফোন আমার হাতে দিয়ে যত সময় কথা বলার প্রয়োজন দেশের বাড়িতে কথা বলতে বলেছেন। আমি না বলেছি। কারন প্রথম বছর নয়শত রিয়াল বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও দিয়েছেন ছয়শত রিয়াল। ওমরাহ হজে¦র জন্য ছুটি না দেওয়া ও পরবর্তী দুই বছর মেয়াদের প্রথম বছর শেষ হওয়ার পর বেতন এক হাজার দুইশত রিয়ালে বৃদ্ধি করার কথা থাকলে তা না করা। হাসান মর্দি রমাদ্বান আল জাহরানীকে আমার অজান্তে কফিল করা। আরবিয়ানদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েও জেতা যায়না। আমি কয়েকবার (মুয়াজ্ঞিফ) আইনজীবির সাথে কথা বলেছি। আইনজীবি জানান মামলা দিয়ে রায় পেতে আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তাহলে মামলা দিয়ে লাভ কি ? আকামার মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন না করার জন্য আপত্তি করলেই হয়। অনুমতি ছাড়া নবায়ন করতে পারবেনা। যদি করে সে ক্ষেত্রে মামলা দিলে গ্রাউন্ড থাকে। আপত্তি করার পর আমার অনুমতি নেওয়ার সকল কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। কিন্ত আমি নাছড় বান্দা দেশে ফিরবই। অবশেষে ভিসা বাতিল করা হলো। কিন্ত টিকেট দিতে নারাজ হাসান মর্দি রমাদ্বান আল জাহরানী। আরো এক সপ্তাহ যুক্তিতর্ক ও বাক যুদ্ধ শেষে টিকেট দিতে সম্মত হলেন। পরদিন ফ্লাইটের দিন তারিখ জানিয়ে দিলেন। আমি প্রস্ততি নিতে শুরু করলাম। বিদায়ের দিন হাসান মর্দি রমাদ্বান আল জাহরানী স্থানীয় আকিক ইয়ারপোর্টে নিজে গাড়ী ড্রাইব করে নিয়ে আসলেন। ইমিগ্রেশন অফিসারের হাতে পাসপোর্ট টিকেট হস্তান্তর করে তিনি ফিরে যান। আকিক ইয়ারপোর্ট থেকে ডমেস্টিক ফ্লাইটে রিয়াদ বিমান বন্দর। তার পর রিয়াদ বিমানবন্দর থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইলে দীর্ঘ পথ রুদ্ধশ^াসে প্রতিক্ষার পর ঢাকা। মাতৃভূমি জন্মভূমি প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে পৌছে অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি। স্বর্গ সুখ আলিঙ্গন করলাম। ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে অফিসারের হাত থেকে পাসপোর্ট হাতে পেলাম। কিন্ত স্বপ্নের নগরী লন্ডন শহর ভ্রমনের স্বপ্ন, প্রিয় মানুষটাকে এক পলক দেখার ঘুম ভাঙানিয়া ইচ্ছা ও সুপ্ত বাসনার কি হবে ?

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী

You might also like