ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
বাংলাদেশঃ সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আজ শনিবার ( ১৬ মে) রাতেই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘আমফান’।ঝড়টি কোন উপকূলে আছড়ে পড়বে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগুবে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদফতর।এদিকে, করোনা পরিস্থিতির এই সময় ঘূর্ণিঝড় এলে উপকূলবাসীর জন্য জন্য এটি হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। করোনার কারণে যেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কথা বার বার বলা হচ্ছে সেখানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কী হবে তা নিয়েই সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কায় আছেন। তবে দুর্যোগ অধিদফতর জানায়, তারা সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে। থাইল্যান্ড এর নাম দিয়েছে আমফান। আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার এটি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিপথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের ওপরও আছড়ে পড়তে পারে নতুন এই ঘূর্ণিঝড়।
গত বছরের ১০ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে আগানোর পরও বাঁক বদল করে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। ৮১ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা ঝড়ের প্রভাবে প্রচণ্ড বর্ষণ ও জলোচ্ছাসে বাংলাদেশ উপকূলের বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে খুলনা, বাগেরহাট ও পটুয়াখালীতে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর পাশাপাশি বহু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়, গাছাপালা উপড়ে পড়ে এবং কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে।
ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি রবিবার নাগাদ ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। মঙ্গলবার নাগাদ এর গতি ঘণ্টায় ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তবে স্থলভাগের দিকে এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে এর গতি কমতে থাকবে।শনিবার দুপুরে ওই গভীর নিম্নচাপটি উড়িষ্যার পারাদ্বীপ থেকে এক হাজার ৬০ কিলোমিটার এবং পশ্চিম বঙ্গের দিঘা সমুদ্র উপকূল থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলো বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, আমফানের প্রভাবে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে গাঙ্গেয় উপকূলের সব এলাকায়। পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে এটি বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। তবে তা নির্ভর করছে ঘূর্ণিঝড়টি কোনদিকে বাঁক নেয় তার ওপর।
গত বছরের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ উড়িষ্যার পারাদ্বীপের কাছ থেকে বাঁক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাশ দিয়ে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আমফানের গতিপ্রকৃতিও সেই রকম বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা মনে করলেও এটি বুলবুলের পথ অনুসরণ করবে কিনা তা এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গভীর নিম্নচাপের কারণে ইতোমধ্যে জেলেদের সাগরে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া যেকোনও পরিস্থিতির জন্য ভারত সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।এদিকে ঘূর্ণিঝড় আমফান বাংলাদেশেও আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৮০ শতাংশ। বর্তমানে নিম্নচাপটির যে গতিমুখ রয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার পথ নির্দেশ করছে। তবে গতিপথ যেকোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে। আর যে গতিতে এগোচ্ছে সেই গতি ধরে রাখলে ১৯ কিংবা ২০ মের দিকে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপটি আজ রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। গতির কারণে মনে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ অথবা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে এটি। যে কোনও নিম্নচাপের গতি প্রথম দিকে কম থাকে। এখন গতি কম থাকায় গতকাল থেকে খুব বেশি এগোয়নি নিম্নচাপটি। কিন্তু রাতেই এটি গতি আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করবে। যত এগিয়ে আসবে ততই এর এগিয়ে আসার গতি এবং ঘূর্ণন গতি দুইই বাড়তে থাকবে।’
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সভায় আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোনের নামকরণ নিয়ে একটি ঐকমত্য হয়। সদস্য দেশগুলোর দাবির মুখে ২০০৪ সাল থেকে এ অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেওয়া শুরু হয়। এক্ষেত্রে পূর্বনির্ধারিত একটি নামের তালিকা থেকে একেকটি ঝড়ের নাম দেওয়া হয়। কোনও ঝড়ের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৩৯ মাইল হয়, তাহলে তাকে একটি নাম দেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া অফিসগুলো এই নামকরণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়ার কারণও বেশ সহজ। এগুলোর এমন নাম দেয়া হয় যেন বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষ সহজে মনে রাখতে পারে। এবারের ঝড়টির নাম থাইল্যান্ডের দেওয়া।