নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে লন্ডনে মানববন্ধন

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোরের নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষক লাঞ্চনার প্রতিবাদে লন্ডনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকে ও বাউল করিম এডুকেশন এন্ড কালচারাল সেন্টার ইউকে।

২২ জুলাই শুক্রবার লন্ডন সময় সন্ধ্যা ছয় ঘটিকায় পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে অবস্থিত শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখা, সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকে, বাউল শাহ আব্দুল করিম এ্যাডুকেশনাল এন্ড ক্যালচারাল সেন্টার ইউকে – এর যৌথ আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাজ্য শাখা, শেখ মুজিব রিসার্স সেন্টার ইউকে, শহীদ সোলেমান স্মৃতি সংসদ, উদীচী – সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস, বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন (বিএইচএ), সেক্যুলার মুভমেন্ট বাংলাদেশ, ডকল্যান্ড থিয়েটার, ক্যাম্পেইন ফর প্রটেকশন অব রিলিজিয়াস মাইনোরিটিজ ইন বাংলাদেশ (সিপিআরবি), ওম শান্তি এ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড হিন্দু ক্যালচারাল এ্যাসোসিয়েশন, শ্রী শ্রী লোকনাথ ভক্ত এ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড কিংডম হিন্দু ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা ও কর্মীরা এই প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।

বাউল করিম এডুকেশনাল ও কালচারাল সেন্টার ইউকে-এর কনভেনার, ডাকসুর সাবেক সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিবিদ যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযুদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতানের সভাপতিত্বে ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা মুনিরা পারভীন-এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত  সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি বাংলাদেশ থেকে হিন্দু নির্মুল করতে চায়, এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমান্নয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই এইসব হামলার ঘটনা ঘটছে। এর অন্যতম কারণ নীরবতা, বিচারহীনতা এবং ধর্মীয় রাজনীতি। বক্তারা অনতিবিলম্বে বিভিন্ন দলের ভিতরে ও সমাজে আইন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চর্চা নিষিদ্ধ , দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যাস্বল্প মানুষের মন্ত্রণালয় চালু করে তাদের স্বার্থ রক্ষা ও আইন সংস্কারের দাবী জানান। বক্তারা এ জাতীয় হামলার বিচার দ্রুত বিচার আইন প্রয়োগ-এর মাধ্যমে দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন,  আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মূল্যবোধ ও মানবিকতার বিকাশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ও প্রণোদনায় দেশের ৬৪ জেলার পাড়ায় পাড়ায় সম্প্রীতির সেল গঠন করতে হবে যেখানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপূরক হাজার বছরের বাঙালী শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপূরক সাংস্কৃতিক আন্দোলন সৃষ্টি করা যায়।  এই কাজে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকারকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।

ডাকসুর সাবেক সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিবিদ যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী মহল এখনোও সক্রিয়, তারা পরিকল্পিতভাবে প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী সমাজবিরোধী কর্মের সাথে যুক্ত। নড়াইলের ঘটনা এর বাইরের বিষয় নয়। এতে করে আমাদের দেশ মনস্তাত্বিকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ছে, দুর্বল হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, আজকের এই সমাবেশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত কোনো সমাবেশ নয় বরং এটি একটি মানবতাবাদী চর্চা ও পদক্ষেপ। ধর্ম, নৃগোষ্ঠী, বর্ণ বা মানবতাবিরোধী যেকোনো ক্ষয়িষ্ণু চিন্তার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভেদের এইসব মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ শুধু নড়াইলেই নয় বরং সারা বিশ্বে মানবতাবিরোধী যত কাজকর্ম চলছে আমরা এই সমাবেশ থেকে তার দৃঢ় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এর প্রতিকার হিসাবে তিনি মানুষে মানুষে বিভেদ দূর করার লক্ষ্যে মানবিকতার ভিত্তিতে সম্প্রীতিকেই প্রধান সমাধান হিসাবে উল্ল্যেখ করেন এবং সকল মানবিক মানুষকেই এগিয়ে এসে ব্যাপক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সভার শুরুতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন- উদীচী সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস-এর সাধারণ সম্পাদক ব্রিটেনের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পি জোবায়ের আক্তার সোহেল।

সভার এক পর্যায়ে একাত্ততা ঘোষণা করে যোগ দেন ও বক্তব্য রাখেন রেডব্রিজ কাউন্সিল-এর কাউন্সিলর শামসুল ইসলাম, কাউন্সিলর জোসনা ইসলাম এবং মানবাধিকার নেত্রী ও সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট -এর চেয়ারম্যান কাউন্সিলর পুষ্পিতা গুপ্তা। টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার ও কাউন্সিলর আহবাব হোসেন বলেন, এই ধরণের আন্দোলন শুরুর শেষ, এখানে কতজন মানুষ যুক্ত হলেন এটা বড়ো কথা নয় বরং একজন দুইজনের উদ্যোগেই সমাজে মানবতার পরিপূরক বড়ো আন্দোলনের জন্ম হয়। পৃথিবীর যেখানেই সংখালগুদের উপর আক্রমণ আসবে সেখানেই প্রতিবাদ হিসাবে আমাদের এগিয়ে এসে মাঠে নামতে হবে। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে এই সব ঘটনার বিচারের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেবার আহ্বান জানান।

সমাবেশে আরও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- এই প্রতিবাদ সভার বিশিষ্ট সংগঠক, মানবাধিকার নেতা ও ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটির বিপ্লবী সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, মানবাধিকার নেতা আনসার আহমেদ উল্লাহ, সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী, যুক্তরাজ্য জাসদের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ, মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড: রুমানা হাশেম, বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজ কর্মী প্রশান্ত পুরকায়স্থ বিইএম, বিশিষ্ট ব্লগার ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট সুশান্ত দাসগুপ্ত, শহীদ সোলেমান স্মৃতি সংসদ -এর প্রিতিনিধি মোহাম্মদ আজিজ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও মানবাধিকার নেতা এ্যাডভোকেট মুজিবুল হক মণি; লেখক, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বুলবুল হাসান, মানবাধিকার কর্মী এনায়েত সারোয়ার, ওম শান্তি এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট স্বরূপ শ্যাম চৌধুরী; ডকল্যান্ড থিয়েটারের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী স্মৃতি আজাদ; সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক নাজমুন সুলতানা শিখা, সাবেক কাউন্সিলর সোনাহর আলী, যুক্তরাজ্য যুবলীগ নেতা জামাল আহমদ খান, বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন ইউকে -এর সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার কর্মী শ্রী সুজিত চৌধুরী, সাহিত্যিক ময়নুর রহমান বাবুল, বিশিষ্ট প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ রফিকুল হাসান খান জিন্নাহ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড: অসীম চক্রবর্তী প্রমুখ।

সর্বশেষে ব্রিটিশ বাংলা কমিউনিটির দুই নতুন প্রজন্ম শ্রেয়সী দাস ও স্নিগ্ধা রায়, বাউল শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত সম্প্রীতি সঙ্গীত ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান’ গানটির মাধ্যমে সবাইকে যুক্ত করেন ও মুজিবুল হক মনির গণসংগীত দিয়ে প্রতিবাদ সভা শেষ হয়।

 

You might also like