নিশ এর নতুন গান ‘হোম কামিং’: শিকড় টানবে প্রবাসী প্রজন্মকে

সৈয়দ আনাস পাশা
প্রধান সম্পাদক, সত্যবাণী

লন্ডন: ব্রিটেনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মের হার্টথ্রব শিল্পী নিশ। পুরো নাম সৈয়দ নিশাত মনসুর। বাংলা, ইংরেজী, পান্জাবী, হিন্দী ও আরবী ভাষায় রয়েছে তাঁর রচিত গান। শুধু লিখা নয়, গানগুলো তিনি নিজেই গেয়েছেন নিজের দেয়া সুরে। ইউরোপ ছাড়াও এশিয়ান দেশগুলোর তরুণ প্রজন্মের কাছে এমনই জনপ্রিয় এই গানগুলো যে,  বলিউডের জি রিসটে (Zee Rishtey Awards) এওয়ার্ড অনুষ্ঠানের ব্যাকগ্রাউন্ডেও বেজেছে নিশের ‘স্টান্ডিং বাই ইউ’ গানটি। বাংলাদেশ, আমেরিকা ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে নিশ স্টেইজ কাঁপান নিয়মিত।

Nish
বাংলাদেশে গ্রামের পুকুর পাড়ে

২০১৯ এর ডিসেম্বরে বৃহত্তর পরিবারের সবার সাথে নিশ গিয়েছিলেন শিকড়ভূমি বাংলাদেশে। দেশটির অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত এই শিল্পী লন্ডন ফিরে এখন শিকড় প্রেমে বিভোর।

৩রা মার্চ, বুধবার বাংলাদেশ নিয়ে ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন একটি গান। ‘হোম কামিং’ নামের বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় রচিত এই গানটি রিলিজ হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভিউজ হয়েছে হাজার হাজার। গানটিতে বাংলাদেশের গ্রামীন জনপদের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অধিকাংশই নিশ এর সফরকালীন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে মোবাইলে ধারণকৃত। গানটির কথায় ফুটে উঠেছে শিকড়ের প্রতি শিল্পীর হৃদয়ের টান,  দেশের বাইরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রজন্মের প্রতি রয়েছে শিকড়ে ফিরে যাওয়ার আহবান। গানটির ইংরেজী লিরিকসের একটি জায়গায় বলা হয়েছে অনেকটা এরকম, ‘ ঘুমিয়ে পড়লে আমি চলে যাই বাংলাদেশে। জেগে উঠে দেখি  লন্ডনে।’

বাংলাদেশের সিলেটে

এমন একটি গান রচনায় কিভাবে উৎসাহী হলেন? সত্যবাণীর পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন ছিলো নিশের প্রতি।

তাঁর উত্তর: “২০১৯ সালের শেষ দিকে বৃহত্তর পরিবারের সাথে গিয়েছিলাম বাংলাদেশে। মা-বাবার সাথে শিকড়ে ফিরে যাওয়ার সে কি যে এক অনুভূতি তা আমি টের পেয়েছি ঐ সফরে।

নিশ বলেন, ‘’বাংলাদেশ সফরে ঐসময় লন্ডনে বেড়ে ওঠা মামাতো, খালাতো ভাইবোনসহ গ্রুপে ছিলাম আমরা মোট ২০জন। ঢাকা ও সিলেটসহ গ্রামাঞ্চলে ঘুরেছি আমরা দলবদ্ধভাবে, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে একসাথে উপভোগ করেছি বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের অহংকার টাইগারদের পারফরমেন্স।”

গ্রামের বাড়ীতে ভাইবোনদের সাথে

সত্যবাণীর কাছে শিকড় ভূমির গ্রামীন সৌন্দর্যের অবিরাম বর্ণনা শিল্পী নিশের,  “সুর্যোদয়ের পর পারিবারিক কবরস্তানে পূর্ব প্রজন্মের শয্যাপাশে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আমরা উচ্চারণ করেছি ‘আস সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর। এরপর মা-বাবাদের সাথে নিয়ে শিশির ভেজা সকালে গ্রামের পথে ঘুরেছি পায়ে হেটে,  ফিরে এসে বাড়ীর উঠানে মাটির চুলার পাশে বসে খড়ের আগুনে তৈরী শীতের পিঠার স্বাদ গ্রহন করেছি সবাই মিলে একসাথে। সমবয়সী স্বজনদের সাথে নিয়ে বাড়ীর আঙিনায় রাতে আবার জমিয়েছি বাউল গানের আড্ডা। লুঙ্গী পড়ে বাড়ীর পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে দেখেছি জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।”

ঢাকা লালবাগের কেল্লায়

নিশ বলেন, “আপনারা অনেকেই জানেন সম্প্রতি আমি আক্রান্ত হয়েছিলাম কঠিন এক রোগে। আমার ভক্তদের প্রার্থনায় ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এখন অনেকটা সুস্থ আমি। অসুস্থ অবস্থায় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার একটিই ইচ্ছে ছিলো প্রকৃতির সৌন্দর্যসুধা আরও দীর্ঘকাল উপভোগের যেন সুযোগ দেয়া হয় আমাকে। সেই অসুস্থ অবস্থায়ও আমি বার বার স্বপ্নে ফিরে গিয়েছি আমার শিকড়ভূমিতে। মোটামোটি সুস্থ হওয়ার পর  তৈরী করেছি ‘হোম কামিং’ নামের এই গানটি। এখন অপেক্ষায় আছি কখন আবার বাংলাদেশগামী ফ্লাইটে উঠবো।”

নিশ বলেন, “শিকড়ভূমির সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে বারবার আমি গুনগুন করে গেয়েছি ভূপেন হাজারিকার সেই গানের কলি, ‘আমি এক যাযাবর, পৃথিবী আমাকে আপন করেছে ভুলেছি নিজের ঘর’। নিজেকে প্রশ্ন করেছি, নিজের এত সুন্দর এই শিকড় ভুলে কেমন করে আমরা  পড়ে আছি প্রবাসে?”

নিশ বলেন, “মাতৃভূমির যে সৌন্দর্য আমি উপভোগ করেছি, তা উপভোগ করার অধিকার রয়েছে প্রবাসে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমার প্রজন্মের প্রতিটি নাগরিকের। আমি মনে করেছি আমাদের শিকড়ভূমি যে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, এই ম্যাসেজটি আমাদের এই প্রজন্মের কাছে পৌছানো উচিত। শিল্পী হিসেবে একমাত্র গানের মাধ্যমেই এই ম্যাসেজটি আমি পৌছাতে পারি। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই ‘হোম কামিং’ গানটি।”

গ্রামের বাড়ীতে অন্যান্যের সাথে

সময়ের এই ব্যস্ততম শিল্পীর উপলব্দি, “নিজের মাতৃভাষা ও একটি স্বাধীন ভূখন্ডের  জন্য অকাতরে নিজের বুকের রক্ত দেয়ার সাহস দেখায় যে প্রজন্ম, সেই প্রজন্মের উত্তরসূরী আমরা। শিকড়ভূমির বাইরে জন্ম ও বেড়ে উঠলেও আমাদের সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়তো এটিই। বহু সাংস্কৃতিক এই ব্রিটেনে নিজের শিকড় নিয়ে গর্ব করার মতো এরকম আর কোন সম্প্রদায় আছে কি না আমার জানার নেই।”

প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের প্রতি শিল্পী নিশের আহবান, “যেখানেই থাকিনা কেন,  আমরা যেন শিকড়বিচ্ছিন্ন না হই। Let’s celebrate our roots wherever we are in the world!”

You might also like