বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নায়কদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে : সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ভার্চুয়াল সভায় বক্তারা বলেছেন, ১৯৭৫ সালে দেশ-বিদেশী চক্রান্তে ষড়যন্ত্রকারীরা বাঙালী জাতির অগ্রযাত্রা ও ৩০ লক্ষ শহীদানের তাজা রক্তে অর্জিত মহান স্বাধীনতাকে নিশ্চিন্ন করতে মধ্যযোগীয় বর্বরতায় মেতে ওঠে। এই হত্যাকাণ্ড সভ্যতার ইতিহাসে সবচাইতে বর্বরোচিত ও ঘৃণিত। বক্তারা বলেন, এই কলঙ্কিত ইতিহাসের মূল নায়করা অনেকেই এখনো চিহ্নিত হয়নি। জাতীয় অগ্রযাত্রা ও ইতিহাসের অগ্রযাত্রার স্বার্থে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং কুখ্যাত জেল হত্যার সঠিক ইতিহাস খুঁজে বের করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ও ষড়যন্ত্রের মূল নায়কদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আজ শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সংগঠনের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য।যৌথভাবে সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহদেম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ। আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, প্রেসিডিয়াম সদস্য রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলী, খুশী কবির, রাশেদা কে চৌধুরী, রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী ও সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার প্রমুখ।সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহতের ঘটনা ও কলঙ্কিত জেল হত্যায় নিহত জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সভার বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী মানবিক বিপর্যয়, ৫০ লক্ষের অধিক মানুষের মৃত্যু, কর্মহীনতা, বেকারত্ব, সামাজিক বিপর্যয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একইসাথে করোনা মোকাবেলায় অপ্রতুল প্রস্তুতি ও অনিয়মের ঘটনাবলী উদ্বেগজনক বলে মতামত ব্যক্ত করা হয়। আলোচনায় নেতৃবৃন্দ চলমান লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন কারণে থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা করোনা বিপর্যয়কে আরো গভীরতর করবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়। একই সাথে শিক্ষা সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় বিধি ব্যবস্থা প্রয়োগ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ দ্রæত খুলে দেবার ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানানো হয়।

ভার্চুয়াল আলোচনায় সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে দেশের সর্বস্তরের জনগণের সাথে ব্যাপক সংখ্যক নারীদের অংশগ্রহন আমাদের মুক্তি সংগ্রামকে নতুন মাত্রা দেয়। বঙ্গবন্ধু তার শাসনকালে নারীদের অগ্রযাত্রা ও নারী স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁর শাসন কার্য পরিচালনা করেন। আমরা অতি দুঃখ ও হতাশার সাথে লক্ষ করছি নারী ও শিশু নির্যাতন আজ নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, নৈতিক অবক্ষয় আমাদের অনেক অর্জনকে ধ্বংস করে চলছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন, আদিবাসী নির্যাতন সহ সকল অত্যাচার অনাচার আমাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তাহলেই আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত সন্মান দেখাতে পারবো।ডা. সারওয়ার আলী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল ধর্ম ভিত্তিক ও সামরিক শাসন ভিত্তিক রাষ্ট্রের বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রের আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু সত্যিকার অর্থেই একটি প্রততিশীল, ধর্ম নিরপেক্ষ ও সাম্যের বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। তাই ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড ছিল পাকিস্তানীভাব ধারায় ফিরে যাওয়ার একটি অপচেষ্টা।

নারী নেত্রী খুশী কবির বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকেই হত্যা করা হয়েছে। আমাদের যে চার মূলনীতিকে সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হয়েছে তার প্রতিস্থাপনই হবে আজকের দিনের মূল দাবি।শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, কিভাবে আজ ধর্মন্ধতাকে উস্কেদিয়ে শিক্ষাকে দ্বিধাবিভক্ত ও সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হচ্ছে তা বিশ^য়ের সাথে লক্ষ করছি। বঙ্গবন্ধুই শিক্ষাকে জাতীয় করণের মাধ্যামে সার্বজনীন করেছিলেন। আজ সময়ের দাবি, শিক্ষা আইনে অসাম্প্রদায়িক একমুখী শিক্ষানীতি গ্রহন করে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার সোনার মানুষ গড়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হোক।

অধ্যাপক মামুন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে মূলত পাকিস্তানী ভাবধারার সামরিক ও বেসামরিক আমলারাই নেপথ্যের নায়ক হিসেবে কাজ করেছেন।সভাপতির ভাষণে জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মূলত মুক্তিযুদ্ধকেই হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোশতাকের লুজ কনফেডারেশন এর বিপরীতে তাজউদ্দিন আহমেদ এর বিশ^ শান্তি আন্দোলনের মূল ধারায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিষ্ঠা করা ছিল অন্যতন একটি সফল পদক্ষেপ, যা রাশিয়া ও ভারতকে বাংলাদেশের মিত্র শক্তি হিসেবে পেতে সহযোগিতা করে। ফলে আমাদের মুক্তি আন্দোলন সহজতর হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বাম ও প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দের অকুতভয় অবস্থান আমাদের বিপ্লবী সরকারকে আরো বেশী আস্থাশীল করে। সকল প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির সহ-অবস্থানই হবে মুক্তিযুদ্ধের মূলচেতনায় ফিরে যাওয়া ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মূল স্বোপান।

You might also like