‘মেমসাহেব’-এর স্রষ্টা নিমাই ভট্টাচার্য আর নেই
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী: মেমসাহেব’সহ বহু জনপ্রিয় উপন্যাসের স্রষ্টা বাংলা ভাষার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য মারা গেছেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বেলা ১২টা ১০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) টালিগঞ্জের বাড়িতে কথা সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে খবর প্রকাশ ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।১৯৩১ সালে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার শরশুনা গ্রামে জন্ম নিমাই ভট্টাচার্যের। যশোরের সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। তারপর ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় চলে যান কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন জনপ্রিয় লেখক নিমাই ভট্টাচার্য।
প্রথম জীবনে সাংবাদিকের পেশা গ্রহণ করেন নিমাই ভট্টাচার্য। কলকাতায় সাংবাদিকতা শুরু করলেও পরে দীর্ঘ ২৫ বছর দিল্লিতে সাংবাদিকতা করেন তিনি। সাংবাদিকতায় থাকার সুবাদে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন সেই সময়কার রাজনৈতিক মহল এবং একই সঙ্গে গ্ল্যামারের দুনিয়াকে। সেই অভিজ্ঞতা ছায়া ফেলে তার গল্পে-উপন্যাসে।
নিমাই ভট্টাচার্যের প্রথম গ্রন্থ ‘রাজধানীর নেপথ্যে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। পরে লেখালেখিকেই পুরো সময়ের পেশা হিসেবে নেন। একটা দীর্ঘ পর্বে বাঙালির পড়ার খিদেকে মিটিয়েছে নিমাই ভট্টাচার্যের রচনা। ১৯৬৮ সালে প্রকাশ পায় ‘মেমসাহেব’ উপন্যাস।১৯৭২ সালে তার উপন্যাস থেকেই নির্মিত হয় পিনাকী মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘মেমসাহেব’। তাতে কেন্দ্রীয় বাচ্চু চরিত্রে অভিনয় করেন উত্তম কুমার। এছাড়া অভিনয় করেছিলেন মেমসাহেব হিসেবে অপর্ণা সেন। সেই ছবি আজও বাংলা সিনেমার রোম্যান্টিক পর্বের মাইলফলক। এরপর তার অনেক উপন্যাসের চিত্রায়ণ হয়েছে।
উপন্যাস, ছোট গল্পের বাইরে তিনি লিখেছেন ‘বিপ্লবী বিবেকানন্দ’র মতো বইও। বাংলায় জনপ্রিয় লেখক বলতে যা বোঝায়, নিমাই ভট্টাচার্য ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই তাই। তার লেখা উপন্যাসের সংখ্যা ১৫০টিরও বেশি। ‘এডিসি’, ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’, ‘গোধূলিয়া’— একের পর এক উপন্যাস এক সময়ে বাঙালির অন্দরমহলকে মাতিয়ে রেখেছিল। তিনি আরো লিখেছেন ‘রিপোর্টার’, ‘পার্লামেন্ট স্ট্রিট’, ‘ডিপ্লোম্যাট’, ‘মিনিবাস’, ‘মাতাল’, ‘ইনকিলাব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘কেরানি’, ‘ডার্লিং’, ‘নাচনি’, ‘প্রিয়বরেষু’, ‘পিকাডিলী সার্কাস’, ‘কয়েদী’, ‘জংশন’, প্রবেশ নিষেধ, ‘ম্যাডাম’, ‘ককটেল’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ান’ উপন্যাস।
জীবদ্দশায় সাহিত্য কর্মের জন্য অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক।