লন্ডনে রবীন্দ্রনাথ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে লেখা আলমগীর শাহরিয়ারের গ্রন্থালোচনা

বিশেষ প্রতিবেদক
সত্যবাণী

লন্ডন: উনিশ শতকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাঙালির জাগরণ ও প্রগতির দূত। মানবিক গুণাবলীসমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক এক মহান কবি। বাঙালির আলোকবর্তিকা হিসাবে বহুমাত্রিক সৃষ্টি ও কর্মপ্রয়াসে মুখর ছিল তার জীবন।

কবিকণ্ঠআয়োজিত লেখক আলমগীর শাহরিয়ারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে লেখা রবীন্দ্রনাথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতাগ্রন্থ নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সুধীজন এসব মন্তব্য করেন।

গত বুধবার ৩১ মে বিকেলে লন্ডনের জুবিলি স্ট্রিটে কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব হাবিব রহমানের সভাপতিত্বে ও কবি হামিদ মোহাম্মদের সঞ্চালনায় সাপ্তাহিক পত্রিকা অফিসে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সাহিত্য আড্ডা। এতে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের প্রথিতযশা কবি, লেখক এবং কমিউনিটির গুণীজন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লেখক আলমগীর শাহরিয়ারের লিখিত পরিচিতি পাঠ করে শোনান সংস্কৃতিকর্মী নেওয়াজ।

রবীন্দ্রনাথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতাগ্রন্থ নিয়ে লিখিত পাঠ-পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন কবি ও সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ। নিবন্ধের বিশদ আলোচনায় উঠে আসে কবি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য। যারা বইটি পাঠ করেননি, তাদের জন্য ছিল এ নিবন্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।

হামিদ মোহাম্মদের নিবন্ধ পাঠের পর লেখক আলমগীর শাহরিয়ার গ্রন্থটি লেখার পটভূমি, প্রয়োজনীয়তা ও তার গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য রাখেন।

আলোচনায় অংশ নেন বিবিসির প্রথিতযশা সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে প্রশ্ন রাখেন, আলমগীর শাহরিয়ার কেন মনে করলেন এমন একটি গ্রন্থ লেখা জরুরি? তিনি প্রশ্নোত্তর পর্বে বইটি লেখার পটভূমি জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন প্রতিষ্ঠিত অনেক সত্যকেও আমরা আজকাল প্রশ্নবিদ্ধ করছি। রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু সবাই তার শিকার। রবীন্দ্রনাথকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে খণ্ডিত করার জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মিস ইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন চলছে। তার জবাব দিতে গুরুত্বপূর্ণ ও চমৎকার একটি কাজ করেছেন আলমগীর শাহরিয়ার। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।

কমিউনিটি একটিভিস্ট আইয়ূব করম আলী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি এটা সত্য, কিন্তু আমাদের জানা মতে যারা বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই কবির ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তাদের নিবৃত করতে কবির ভূমিকা কী ছিল?

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ এনামুল ইসলাম তার আলোচনায় বলেন, আমি বইটি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে পড়েছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি, এ বিষয়ে আমার পরিষ্কার ধারণা রয়েছে, তিনি যে একজন অসাম্প্রদায়িক মহান কবি এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমাদের সমাজে যারা সাধারণ মানুষ তারা অনেক সময় অপপ্রচারকে বিশ্বাস করেন। এবং ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে পড়েন। তাদের জন্য এই গ্রন্থটি পাঠ খুবই জরুরি।

তিনি বলেন, আমার ভালো লেগেছে যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ১৬ বছর পর আলমগীর শাহরিয়ারের জন্ম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে তরুণ প্রজন্মের একজন লেখক এভাবে হৃদয়ে ধারণ করেন ভেবে আমি আনন্দিত। লেখকের পরিপক্বতা, তার মনন ও চিন্তারক্ষেত্র বিস্তৃত। বয়সে তরুণ হলেও তার ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু মন চমৎকার ও গভীর। গবেষণা-প্রবন্ধ হলেও বইয়ের ভাষা হৃদয়গ্রাহী।

সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন বলেন, রবীন্দ্রনাথকে যারা খণ্ডিত করতে নিরন্তর কাজ করছেন, তাদের আমরা চিনি। রবীন্দ্রনাথকে কখনো কোনো অপপ্রচার করে মুছে ফেলা যাবে না।

গবেষক ফারুক আহমদ তার আলোচনায় আলোকপাত করে বলেন, যে যা মনে করুক, রবীন্দ্রনাথ হিন্দুধর্মীয় পরিচয় বহন না-করলেও তিনি যে শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করতেন, তাকেই মানুষ নির্বোধের মত সাম্প্রদায়িক লেভেল দিতে চেষ্টা করেছে।

কবি আসমা মতিন বলেন, একজন কবির অনুভূতিপ্রবণ হৃদয় কখনো সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতায় পূর্ণ হতে পারে না। একজন কবি হিসেবে ইতিহাসের গভীর পাঠ না করেও রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারটি আমি আমি বিশ্বাস করি না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ মুহম্মদ আবদুর রাকীব, সংগীতশিল্পী রীপা রাকীব, মানবাধিকার নেতা ও সাংবাদিক আনসার আহমদ উল্লাহ, সত্যব্রত দাশ স্বপন, কবি ময়নূর রহমান বাবুল, দর্পণ সম্পাদক রহমত আলী, কবি আবদুল কাইউম ও কবি ফয়জুর রহমান ফয়েজ।

উপস্থিত ছিলেন কবি এ কে এম আবদুল্লাহ, কবি মো. মোশাইদ খান, তরুণ সংগঠক এরশাদ আহমদ, সুশান্ত দাস প্রশান্ত, এম এস নেওয়াজ, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

You might also like