স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে লন্ডনে চড়ুইভাতি
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী
লন্ডন: আয়োজনে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিলোনা, ছিলোনা কোন বক্তৃতাবাজী। প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, এমন আনুষ্ঠানিকতার কোন প্রয়োজনই মনে করেননি উদ্যাক্তারা। শুধুই আড্ডা আর স্মৃতিচারণের মাধ্যমে কয়েকঘন্টার জন্য হলেও নিজেদের শৈশবে ফিরে যাওয়া, এবং বিলেতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিজ সন্তানদের গৌরবের ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করানো এমন চেষ্টাই ছিলো অনুষ্ঠানের অংশগ্রহনকারীদের।
শিকড়ভূমি বাংলাদেশের ৫০তম বর্ষপূর্তীতে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ফিরে দেখা শৈশব: বন বাদাড়ে চড়ুইভাতি’ শীর্ষক এমন একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্টান লন্ডনে হয়ে গেলো রবিবার ২৯শে আগষ্ট। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ‘সত্যবাণী’র সহযোগীতায় ও এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা এবং তাঁর স্ত্রী সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা কলির উদ্যোগে লন্ডনের রেডব্রিজের একটি সব্জি বাগানে ছায়াঘেরা সবুজ প্রকৃতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের গ্রামীন জনপদের ঐতিহ্য এই চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান। দুপুর ১টা থেকে অর্ধদিনব্যাপি অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে জড়ো হয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক শিকড়প্রেমী মানুষ। সাথে ছিলেন ব্রিটেনে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানরা। বাগান থেকে টাটকা সব্জি তুলে মাটির চুলায় আগুন ধরিয়ে ধোয়া আক্রান্ত ছলছল চোখে শাড়ী পড়ে আসা মহিলারা পুরো সময়ব্যাপিই ব্যস্থ ছিলেন রান্না বান্নায়। বাংলাদেশের গ্রামীন খাবারের কি নেই তাদের মেন্যুতে। সুটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, রুই মাছের মাথা দিয়ে লাউ, কেচকি মাছের চর্চরি, মোরগ ও খাসির মাংস ভূনা-তরকারীর এমন আইটেমগুলোর পাশাপাশি ছিলো গুড়ের সন্দেশ, সদ্য তৈরী টাটকা রশমালাই, সেমাইসহ চমচম ও অন্যান্য মিষ্টি সামগ্রী। শাপলা পুকুরের পাড়ে পতপত করে উড়তে থাকা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নিচে সুতি শাড়ী পরিহিত মহিলারা যখন রান্নাবান্না করছিলেন, তখন লাকড়ী দিয়ে জ্বালানো আগুনের ধোয়ায় অনেকেরই চোখ করছিলো ছলছল। মহিলাদের মধ্যে কেউ ছিলেন চুলায় আগুন ধরাতে ব্যস্থ, কেউ ছিলেন দা দিয়ে মাছ কোটায়, আবার কেউ ছিলেন শীল-পাটায় মরিচ পিশায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীন সাংবাদিক আবু মুসা হাসান। বললেন, অসাধারণ ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন বহির্বিশ্বে আর হয়েছে কি না আমার জানা নেই। পত পত করে উড়া বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার পাশেই ছোট্ট পুকুরে জাতীয় শাপলা হাসছে, আর এই পুকুরের পাড়েই হচ্ছে চড়ুইভাতির রান্না- কল্পনায়ও আসেনা বাংলাদেশেও এমন দৃশ্য এখন আছে। অনুষ্ঠানে এসে স্মৃতিকাতর হয়ে গেলাম, কিছুক্ষনের জন্য হলেও ফিরে গিয়েছিলাম আমার শৈশবে।
উদ্যোক্তা সত্যবাণীর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা বলেন, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের বয়স যেমন বাড়ছে, আমাদেরও বাড়ছে ঠিক তেমনি। ৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের পর সদ্য স্বাধীন দেশে কেটেছে আমাদের ছোটবেলা। আজ পৌঢ়ত্বে এসে সেই সময়টাকেই আবার দেখতে চেয়েছিলাম। সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের এই শৈশবে ফিরে যাওয়া। তিনি বলেন, আমাদের শৈশবটি কেমন ছিলো? ব্রিটেনে জন্ম নেয়া আমাদের সন্তানদের এটি দেখালাম, আমাদের গৌরবের ঐতিহ্যের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলাম।
অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, টিভি উপস্থাপিকা উর্মী মাজহার, সত্যবাণীর বার্তা সম্পাদক নিলুফা হাসান, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ট্রেজারার আ স ম মাসুম, অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ফেরদৌসি পাশা কলি, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট জান্নাতুল ফেরদৌস, হোসনা বখত, সৈয়দা বিলকিস মনসুর, হালিমা ইয়াসমিন রহমান, নাসিহা হক, তারা খানম, সামিনা বেগম ও ব্রিটেনে জন্ম নেয়া প্রজন্মের প্রতিনিধি আইটিভি জার্নালিষ্ট মাহাথির পাশা, সাম্প্রতিক সময়ের তারুণ্যের হার্টথ্রব সংগীত শিল্পী নিশ ও ব্যাংকার নাফিস হক প্রমূখ।