১৫ আগস্ট:বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়
ডক্টর আনিছুর রহমান আনিছ
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস।বাঙালি জাতির শোকের দিন। ইতিহাসের কলঙ্কিত কালো দিন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল এ কলঙ্কিত অধ্যায়।আজ থেকে ৪৬ বছর আগে এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল।বাঙালির মুক্তির মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা থেকে দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তখনই ঘটানো হয় ইতিহাসের নির্মম এ ঘটনা। সেই নির্মম ঘটনার বর্ণনায় অনেক কবি, সাহিত্যিক তাঁদের লিখনিতে, কবিতায় সেদিনের করুণ দৃশ্য বর্ণনা করেছেন নানা ভাবে যা হৃদয়ে ক্ষত ধরায়।সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি,তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল,শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল,পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।পৃথিবীর এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের,ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
ঘাতকদের বুলেটের মুখেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অকুতোভয়। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে? কিন্তু ১৫ আগস্ট ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হায়েনারা নিভিয়ে দেয় তার জীবন প্রদীপ। তবে তারা যে অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তা সফল হয়নি। আজও বাঙালির মননে দীপ্ত শিখা হয়ে জ্বলছেন হাজার বছরের স্রেস্ট বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এখন শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস, একটি দেশ।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও বাঙালির হৃদয় থেকে সরাতে পারেনি। তাই তো আজও আগস্ট এলেই বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তার পিতাকে। প্রতি বছর এই দিনটি বাঙালির হৃদয়ে শোক আর কষ্টের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাজির হয়। কালো ব্যাজ আর ফুলে ফুলে শহীদ মিনার ছেয়ে যায় বেদনায় আর অশ্রুজলে।পুরো জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করে।
প্রতি বছর এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিস্থলে বিশেষ দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়। সারা দেশের মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে থাকে। এছাড়া জাতীয় দৈনিক ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/গ্রোথ সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জাতীয় শোক দিবসের পোস্টার স্থাপন ও এলইডি বোর্ডের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় সরকারী এবং বেসরকারিভাবে। এছাড়া জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সব মোবাইল গ্রাহককে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও সংস্থা জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে থাকে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
স্বাধিন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নেতা। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ৬ দফার প্রণেতা ছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন। পাকিস্তানের সামরিকজান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি এ স্বাধীন বাংলাদেশ।বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণা। পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হতে থাকে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা পাঁয়তারা করে। শাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও যেন নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়েছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেয়া হয়েছিল, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি সেই কলঙ্ক থেকে জাতির মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকায় আরও কয়েকজন খুনির সাজা এখনও কার্যকর করা যায়নি।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। ছাত্র অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। সংগ্রামের মধ্যেই তিনি বড় হয়েছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ করে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা।নিজের স্বাধীন করা দেশে কোনো বাঙালিই তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়-এমন দৃঢ়বিশ্বাস ছিল বঙ্গবন্ধুর। সেজন্যই সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে তিনি থাকতেন নিজের বাসভবনেই। বাঙালির স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। বাড়িটি অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। এখান থেকেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু জঘন্য ঘাতকের দল তাকে সেই কাজ শেষ করে যেতে দেয়নি।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০০ বছর আগে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
গোপালগঞ্জের গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৪২ সালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪৪ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। স্কুলজীবন থেকেই জাতির পিতার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল।১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একজন ঘনিষ্ঠ অনুসারী।১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনে প্রধান সংগঠকদের একজন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।১৯৪৯ সালে তিনি জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে তার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তারুণ্যের স্বপ্ন ও প্রত্যাশাকে তিনি নিজের চিন্তায় ধারণ করতেন।
তরুণ রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার তার যে ক্ষমতা ছিল, তা তিনি ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ওই পদে বহাল থাকেন।এই আওয়ামী মুসলিম লীগই পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নামে রূপান্তরিত হয়।১৯৬৬ সালেই তিনি দলের সভাপতি হন।১৯৫৮ সালে যখন পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয় এবং বাঙালিদের ওপর দমনপীড়ন শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু তখন এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তরুণদের সংগঠিত করেন।পাকিস্তানি দুঃশাসন ও বৈষম্যমূলক নীতির শিকার সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ে বাঙালিদের প্রতি যে অমানবিক শাসন-শোষণের প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তা থেকে জাতিকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছিল ঐতিহাসিক ৬ দফা।পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে, ৬ দফাই ছিল পূর্ববাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান সোপান। ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে আন্দোলনের জোয়ারে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের ফলাফল গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী স্বভাবতই ’৭০-এর নির্বাচনে হার মেনে নিতে পারেনি।
পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে প্রতিদিন হরতাল চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। তিনি বহু দলে বিভক্ত বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণে। তার উদাত্ত আহবান জাদুকরী প্রভাব ফেলেছিল এ দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা সবার হৃদয়ে।এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সাহস, দক্ষতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেই আমাদের কাছে রক্ষিত আছে এবং থাকবে।সবাই জানেন, ১৫ আগস্ট ছিল বাংলার জনমানুষের অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস।
বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে বাঙ্গালীর জননন্দিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নাম। তার আপসহীন সংগ্রাম, নিরলস সাধনা, অসীম সাহস ও উদ্দীপনা, দেশমাতার জন্য অফুরন্ত ত্যাগ ও ভালোবাসা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাই বাঙালির আত্মপরিচয়ের আরেক নাম শেখ মুজিবুর রহমান।স্বাধিকার চেতনা থেকে স্বাধীনতায় উত্তরণ, সর্বোপরি একটি দেশের জন্মের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর অম্লান স্মৃতি। ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের পর থেকে ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তানের তেইশ বছরের ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস।দীর্ঘ এ সংগ্রাম শেষে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শুরু করেন আরেকটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধ সমৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি ও উন্নতির। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থা থেকে দেশকে গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ সম্পাদন করে বঙ্গবন্ধু সূচনা করেছিলেন তার ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’ অর্জনের সংগ্রাম।
যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে অনেক বরেণ্য নেতা জন্ম নিয়েছেন। তারা সবাই নেতৃত্বের নানা গুণে গুণান্বিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয়বান ও মানবিক নেতৃত্ব খুবই বিরল। তিনি মানুষের প্রতি ভালোবাসাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন, আর তার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল দেশ ও মানবপ্রেম। মানবকল্যাণে উৎসর্গকৃত বঙ্গবন্ধু চিরদিন মানুষের হৃদয়েই চিরজীবী হয়ে থাকবেন।বঙ্গবন্ধু শুধু তার জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্যই সংগ্রাম করেননি- তিনি জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। সেই মুক্তি অর্জনের সংগ্রাম এক অবিরাম প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার সুযোগ্য কন্যা বিশ্ববরেণ্যনেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।১৫ই আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, সকল অপশক্তির অশুভ আস্ফালন ছিন্ন করে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।জাতীয় শোক দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক,আইন গবেষক সদস্যঃলন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব বিশেষ প্রতিনিধিঃসাপ্তাহিক বাংলা সংলাপ,লন্ডন সাবেক লেকচারারঃ সিলেট মেট্রোপলিটন ল কলেজ ও Swarthmore College London.