দেওয়ান গৌস সুলতানের লেখা ‘বিশ শতকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন’গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
বিশাল এই গ্রন্থখানা তথ্যের একটি ‘জাদুঘর’
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন, ২৪ মে: দেওয়ান গৌস সুলতানের লেখা ‘বিশ শতকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ৭০৪ পৃষ্ঠার বিশাল এই গ্রন্থখানা ‘তথ্যের একটি জাদুঘর’। এছাড়া একশ বছরের বঙ্গদেশের নির্বাচন গুলোর তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থখানা পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও অতি প্রয়োজনীয় সম্পদ। জ্ঞানলাভে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য প্রত্যেকের বইখানা পড়া উচিত।
২৪ মে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে যান বিপুল সংখ্যক শ্রোতা। সাবেক হাইকমিশনার গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন কৃতী উপস্থাপক বুলবুল হাসান। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেখক দেওয়ান গৌস সুলতান। মূখ্য আলোচক প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান আলোচনায় ভারতীয় উপমহাদেশের নির্বাচনের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন, জাতি গঠনে নির্বাচন একটি পন্থা। যখনই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসক নির্বাচনের পথে হেঁটেছে, তখনই মানুষর অধিকার প্রতিষ্ঠার সুত্রপাত হয়েছে। সেই পথ ধরেই পাকিস্তান লাভ এবং ১৯৭০ সালের নিবার্চনের রায়ই বাংলাদেশকে সৃষ্টি করতে সহায়ক হয়েছে।
প্রধান অতিথি লন্ডনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বিশেষ কারণে বাংলাদেশে চলে যাওয়ায়, তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করেন ডেপুটি হাই কমিশনার হজরত আলী খান।প্রথিতযশা বিতার্কিক হজরত আলী খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাই গণরায় প্রতিষ্ঠার একমাত্র মাধ্যম। একে বর্জন করে কখনো কোনো দল বা রাজনীতি সফল হয়নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনই একাত্তর সৃষ্টি করেছে। এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। যখনই যে দেশে নির্বাচন বর্জন করা হয়েছে, তখনই সে জাতি বা রাষ্ট্র পিছিয়ে গেছে। বিশেষ অতিথি বর্ষিয়ান নেতা বিলাতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ আলোচনায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশ না নিতেন, তাহলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ আমরা পেতাম না। আলোচনা পর্বের সূচনায় আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনীতিক মো. হরমুজ আলী। তিনি বলেন, গ্রন্থখানা দেখেই মনে হয়েছে, এই গ্রন্থখানা আমাদের সকলের পাঠ জরুরী। বইটির প্রচারের জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে উদ্যোগী হই। আপনারা যারা কষ্ট করে আমাদের এ আয়োজনে শরিক হয়েছেন, সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
নির্ধারিত আলোচক কবি হামিদ মোহাম্মদ ও গবেষক ফারুক আহমেদ গ্রন্থ নিয়ে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। হামিদ মোহাম্মদ বলেন, গ্রন্থখানা তথ্যের একটি ‘জাদুঘর’। তবে ৭০৪ পৃষ্ঠা ও বৃহত কলেবরের একটি খন্ড না করে দুটি খনিজে মুদ্রিত হলে পাঠকদের জন্য ভালো হতো। ফারুক আহমেদ বলেন, গ্রন্থের বিশালতা আমাকে নাড়া দিয়েছে। ভাষাগত ও তথ্যগত সামান্য ভুলত্রুটি থাকলেও পরবর্তী সংস্করণে তা সারানো সম্ভব হবে। ফারুক আহমেদ বলেন, আমি মনে করি, এমন গবেষণাগ্রন্থ লেখক হিসাবে আমার জন্য অশেষ উপকারি। যারা দেশ এবং রাজনীতি নিয়ে ভাবেন, চিন্তা করেন, তাদের সকলের জন্য গ্রন্থখানা অবশ্যই প্রয়োজনীয়।
এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগ দেন মানবাধিকার নেতা আবদুল আহাদ চৌধুরী, শাহ ফারুক আহমেদ, সংস্কৃতিকর্মী মঞ্জেরীন রশিদ, টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলার সাবেক স্পীকার আহবাব হোসেন, সাবেক কাউন্সিার শেরওয়ান চৌধুরী ও কমিউনিটি নেতা আহবাব মিয়াসহ বেশ কয়েকজন। এরপর গৌস সুলতান প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানে গুণীজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেস মিনস্টার, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীন সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, নারী নেত্রী হোসনে আরা মতিন, প্রেস মিনস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী, আঞ্জুমানারা বেগম, মারুফ চৌধুরী, আবদুর রাকিব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন।
আলোচনা পর্ব শুরুর আগে গ্রন্থখানার মোড়ক উন্মেচনে অংশ নেন সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, প্রধান অতিথি ডেপুটি হাইকমিশনার হজরত আলী খান, সুলতান মাহমুদ শরীফ, সৈয়দ বদরুল আহাসান ও বুলবুল হাসান।
আলোচনা পর্বের পরে অনুষ্ঠিত হয় কবি নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন টিভি উপস্থাপক সেলিনা শেলী। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী রীপা রাকিব, শ্যামল কান্তি চৌধুরী, জয়িতা গুপ্ত ও আলাউর রহমান। গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন মনিদীপা শীল। কবি নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ ও ‘শিশুর স্বপ্ন’আবৃত্তি করেন সনামধন্য আবৃত্তিশিল্পী মুনিরা পারভীন। তাঁর আবৃত্তি উপস্থিত শ্রোতৃমন্ডলীকে মুগ্ধ করে। সাংস্কৃতিক পর্বটি প্রযোজনা করেন মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। শহীদ সোলেমান স্মৃতি সংসদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেনের পরিচালিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও মিডিয়া পার্টনার হিসাবে ছিলেন এ আর টিভি নেট ওয়ার্কের কর্ণধার সংস্কৃতি কর্মী জয়দীপ রায়।
উল্লেখ্য, ‘বিশ শতকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন’ গ্রন্থখানা অনুষ্ঠানস্থলে পাঠকদের লাইন ধরে ক্রয় করার দৃশ্য ছিল অভুতপূর্ব। সাধারণত এরকম বই বিক্রির দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়েনা।
‘বিশ শতকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন’ গ্রন্থখানা প্রকাশ করেছেন স্বনামধন্য উৎস প্রকাশন, ঢাকা। প্রকাশকাল ২০২৩ একুশে বইমেলা।