নারদ স্টিং অপারেশন সম্বন্ধে কয়েকটি প্রশ্ন
দিলীপ মজুমদার
পশ্চিমবঙ্গে নারদকাণ্ডে সিবিআিই কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করে জেল হেফাজতে আবদ্ধ করেছেন।নারদকাণ্ডের হোতা হলেন ম্যাথু স্যামুয়েল।একজন সাংবাদিক।তাহেলকা’ পত্রিকার সম্পাদক । পত্রিকাটিকে জনপ্রিয় করার জন্য ইনি পরিকল্পনা করেন স্টিং অপারেশনের । পশ্চিমবঙ্গে যখন সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের নাম জড়িয়ে যায়, তখন ম্যাথুর মনে হয়, এখানে আরও দুর্নীতি আছে । তিনি এখানে স্টিং অপারেশনের পরিকল্পনা করেন। তার জন্য তাঁকে ভেক বদল করতে হয় । তিনি সন্তোষ শঙ্করণ ছদ্মনাম গ্রহণ করেন । চেন্নাইভিত্তিক এক ভুয়া প্রতিষ্ঠান ইমপ্লেক্স কনসালটেন্সি সলিউশনসের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের পরিচিতি দেন । সেই মর্মে নতুন আধার কার্ডও তৈরি হয়।কলকাতায় এসে তিনি ইসলাম নামে এক ট্যাক্সি ড্যাইভারের মাধ্যমে পরিচিত হন টাইগার মির্জার সঙ্গে।এরপরে টাইগারের মাধ্যমে পরিচিত হন মেয়র ইকবাল মির্জা ও এস এম এইচ মির্জার সঙ্গে ।আবার এাঁদের মাধ্যমে পরিচিত হন সুলতান আহমেদ,সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হালিম,অপরূপা পোদ্দার, মদন মিত্র, মুকুল রায়ের সঙ্গে।নিজের কোম্পানিকে সুযোগ-সুবিধা দানের জন্য তিনি এইসব নেতাদের ঘুষ দেন।নেতারা হাত পেতে ঘুষ নেন।ম্যাথুর স্পাই ক্যামেরায় ধরা থাকে সে ছবি । ২০১৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনের ঠিক আগে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ পায় ম্যাথুর স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো । তারই ভিত্তিতে আদালত সিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন।
এই স্টিং অপারেশন সম্বন্ধে এখানকার সাংবাদিকরা কিছু প্রশ্ন উথ্থাপন করেছেন । প্রথম প্রশ্ন স্টিং অপারেশনের বাজেট সম্পর্কে।ম্যাথু বলেছেন প্রথমে বাজেট ছিল ২৫ লক্ষ টাকা, পরে সেটা বেড়ে হয় ৮০ লক্ষ টাকা।ম্যাথু প্রথমে বলেছিলেন যে প্রবাসী ভারতীয়রা তাঁকে এই টাকা দিয়েছিলেন।পরে তিনি বলেন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক কে ডি সিং তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন।কে ডি সিং কিন্তু ম্যাথুর বক্তব্য অস্বীকার করেছেন । তিনি বলেছেন যে তিনি তাহেলকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ম্যাথু সে সংস্থা ছেড়ে চলে যান, সুতরাং টাকা দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।তাছাড়া,এখানে আরও একটা প্রশ্ন ওঠে । এই স্টিং অপারেশনের সময় কে ডি তৃণমূল দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । দলের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের কোন প্রমাণ নেই, তাহলে দলকে তিনি খামোকা বিপদে ফেলবেন কেন ? ম্যাথু দাবি করেছেন কে ডি সিং এর সল্টলেক অফিসের সেক্রেটারি মোনিকা ও রাগার হাত দিয়ে টাকা লেনদেন হয়েছে । মোনিকা ও রাগার স্বীকারোক্তি কী পাওয়া গেছে ?দ্বিতীয়ত ,ম্যাথু যে ভিডিয়ো ক্লিপ জমা দিয়েছেন,তা সম্পাদিত,র বা আসল ফুটেজ তিনি মুছে দিয়েছেন।আসল ফুটেজ কী পাওয়া গেছে ?তৃতীয়ত ,ম্যাথুর আই ফোনেই কী গোটা স্টিং অপারেশন হয়েছিল ?চতুর্থত, ২০১৪ সালে স্টিং অপারেশন করলেও ম্যাথু তা প্রকাশ করেন ২০১৬ সালে।লক্ষণীয় যে এই সালের মার্চ মাসে ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন।তৃণমূল দলটিকে বেকায়দায় ফেলার এই সিদ্ধান্ত কী ম্যাথুর ব্যক্তিগত,না এর পেছনে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের ইন্ধন আছে ?
লেখক: কলামিষ্ট, ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।