কারি লাইফ এওয়ার্ড: ব্রিটিশ কারি শিল্পে বাংলাদেশের জয়গান
বিজনেস ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন: লন্ডনে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যুক্তরাজ্যের রেস্তোরাঁ শিল্পের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠান ‘কারি লাইফ অ্যাওয়ার্ড অ্যান্ড গালা ডিনার ২০২৫’। এতে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বিলেতে ইন্ডিয়ান রেস্তোরা ব্যবসার অন্যতম আইকন আমিন আলী।
কারি লাইফ ম্যাগাজিনের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজনীতিক, সংসদ সদস্য, লর্ড সভার সদস্য, ব্যবসায়ী ও রেস্তোরাঁ উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিতে উদযাপিত হয় যুক্তরাজ্যের রেস্তোরাঁ খাতে বাংলাদেশিদের সাফল্য।
রোববার ওয়েস্টমিন্সটারের লন্ডন ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৩৯টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়।
তবে পুরো আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন ব্রিটিশ কারি শিল্পের উদ্যোক্তা আমিন আলী, তাকে দেওয়া হয় ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’।
আমিন আলী ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং ১৯৮৩ সালে লন্ডনের সোহো এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘রেড ফোর্ট রেস্টুরেন্ট’। দ্রুতই এটি হয়ে ওঠে ব্রিটিশ রাজনীতিক ও তারকাদের সমাবেশস্থল। টনি ব্লেয়ার, গর্ডন ব্রাউন ও থেরেসা মে-সহ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা রেড ফোর্টে নিয়মিত যেতেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার তার মেয়ের জন্মদিনও উদযাপন করেছিলেন এই রেস্তোরাঁয়। অতিথি হয়েছেন স্টিভ জবস, টিনা টার্নার, ব্রুস উইলিস, ব্যান্ড বোন জোভি ও লিঙ্কিন পার্কের সদস্যরাও।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে কারি লাইফ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, “রেস্তোরাঁ শিল্প নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এগিয়ে চলছে। এই শিল্পের সাফল্য তুলে ধরতে কারি লাইফ অ্যাওয়ার্ড গত ১৬ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
সম্পাদক সৈয়দ বেলাল আহমেদ বলেন, “আমিন আলী প্রমাণ করেছেন, রেস্তোরাঁ কেবল ব্যবসা নয়, এটি প্রভাব ও পরিচয়ের এক ক্ষেত্র। তার সাফল্যের গল্প ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ সংস্কৃতি বিষয়ক উপমন্ত্রী ও সাংসদ স্টেফানি পিকক। অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন লর্ড করন বিলিমোরিয়া, সাংসদ রুশনারা আলী, ওয়েন্ডি মোর্টন, মাইক উড ও বেন ওবিস জেকটি।
লর্ড বিলিমোরিয়া বলেন, “কারি শিল্প এখন ব্রিটিশ অর্থনীতির একটি শক্তিশালী স্তম্ভ। এই শিল্প শুধু অর্থনীতিতে অবদান রাখছে না, অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করছে।”
এ বছর ‘বেস্ট রেস্টুরেন্ট অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পায় ২০টি রেস্তোরাঁ, যার মধ্যে রয়েছে ‘ব্রাইটনের জুমুন’, ‘অরপিংটনের দ্য বোম্বে’, ‘বার্মিংহামের সাফ্রন লাউঞ্জ’, ‘ডরসেটের দ্য সুন্দরবন’ এবং স্কটল্যান্ডের ‘দ্য রাঁধুনি’।
‘বেস্ট শেফ অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেয়েছেন লন্ডনের ‘টেস্ট অব নওয়াব’-এর আব্দুল রহমানসহ নয়জন শেফ। আর ‘বেস্ট টেকঅ্যাওয়ে অব দ্য ইয়ার’ বিভাগে জয়ী হয়েছে নিউপোর্টের ‘দ্য হাংরি এলিফ্যান্ট’ এবং স্ট্রোক-অন-ট্রেন্টের আলিস স্পাইস। এছাড়া ‘বেস্ট নিউকামার অব দ্য ইয়ার’ বিভাগে পুরস্কার জেতে কেন্টের সোয়ানলি এলাকার ‘দ্য বোম্বে’।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘কারি লাইফ ম্যাগাজিন’ ২০০৯ সাল থেকে ‘কারি লাইফ অ্যাওয়ার্ডস’ আয়োজন করে যাচ্ছে। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ও গ্রাহকদের ভোটে নির্ধারিত এই পুরস্কার রেস্তোরাঁ শিল্পে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সাফল্য তুলে ধরছে যুক্তরাজ্যের মূলধারায়।