পারুলের একার লড়াই এবং আমাদের দায়মুক্তি

 সিরাজুল আবেদ

আজ পারুল রাস্তায় নেমেছিল। আমাদের সাতভাই চম্পার একবোন পারুল- সাজিদা ইসলাম পারুল। না, রূপকথার গল্পের মতো তার ভাইদের খুঁজতে নয়। সেসব ঘুমপাড়ানিয়া গল্প তার জীবন থেকে অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। পারুল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সামনে আজ দাঁড়িয়েছিল যৌতুকের জন্য তার উপর নির্যাতন এবং তার ভ্রুণ হত্যাকারী যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার প্রতারক রেজাউল করিম প্লাবণের গ্রেফতারের দাবি নিয়ে। এবং একা।
না, কাউকে ডেকে বিব্রত করেননি। বিগত দেড়মাস অনেক বড়ভাই, সংস্থা, থানা-পুলিশের দ্বারে-দ্বারে ঘুরেছেন। অনেককে হয়তো বিব্রতও করেছেন, কিন্তু কেউই সহায় হননি। অপরাধী প্লাবণ সবার মাঝে থেকেও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ তাকে খুঁজেও পায়নি। তাই বুঝি এবার কাউকে সঙ্গে নেওয়ার কথা ভাবেননি পারুল। একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে একা দাঁড়িয়েছেন রাজপথে। কারো কাছে কোনো অনুরোধ নয়, অভিযোগ নয়। প্রশ্ন রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, ‘আমি কি বিচার পাবো না?’
নিজে সাংবাদিক হিসেবে যে প্রশ্নগুলো এতোদিন ভুক্তভোগীদের করতেন, সেই প্রশ্নগুলো ছুটে আসছিল পারুলের নিজের দিকে। উত্তর দিতে যেয়ে পারুলের দু’চোখ বারবর ভিজে আসছিল। কিন্তু কি অসীম শক্তি, কি অসাধারণ ঋজুতা নিয়ে পারুল সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। নিজের কাছেই ঘোর লাগে, সদা হাসিখুশি, সহজসরল মেয়েটি কি করে পারছে এমন?
এই সমাজ, এই রাষ্ট্রযন্ত্রই বিগত দেড়মাসে তাকে ঋজু হতে শিখিয়েছে। তাই তো আজ সে নিঃসংকোচে বলে ওঠে, কোনো আপস নয়, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তার প্রতিবাদ চলবে। এতে যদি মৃত্যুও হয় হবে।
পারুলের এই একার লড়াইয়ের আওয়াজ কি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে? জানিনা। কিন্তু, পৌঁছাটা জরুরি। পারুল আর সবাইকে দায়মুক্ত করে আবেদনটা যে প্রধানমন্ত্রীর কাছেই রেখেছেন। পারুলের একক আওয়াজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে, প্লাবণ গ্রেফতার হয়ে বিচারে উপযুক্ত শাস্তি পাবে এই আশাটুকু কি আমরা করতে পারি না?

সিরাজুল আবেদ: সাংবাদিক, সাজিদা ইসলাম পারুলের সহকর্মী।

(ফেইসবুক থেকে নেয়া)

You might also like