বাংলাদেশ চলতি বছরের মধ্যেই হংকং কনভেনশন অনুমোদন করবে : শিল্পমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ বাংলাদেশ ২০২৩ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা (আইএমও) প্রবর্তিত দি হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি সেফ এন্ড এনভায়রনমেন্টালি সাউন্ড রিসাইক্লিং অব শিপস, ২০০৯ (দি হংকং কনভেনশন) অনুমোদন করবে।শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আজ বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের (শিল্প ভবন) সম্মেলন কক্ষে নরওয়ের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে এক দ্বি-পাক্ষিক সভায় একথা জানান। নরওয়ের জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক উপমন্ত্রী রাগনহিল্ড সজোনার সিরস্টাড এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বাংলাদেশ পরিবেশ ও পেশাগত সুরক্ষার পাশপাশি স্বাস্থ্য বিষয়ে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে না পারা, বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা এবং দেশে-বিদেশে নানা নেতিবাচক প্রচারের কারণে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প-খাত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প’র আরো অগ্রগতি হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ২০১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত কার্যক্রমকে ‘শিল্প’ হিসেবে ঘোষণা করেন।মন্ত্রী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় জাহাজ পুনঃপ্রক্রয়াজাতকরণ শিল্পের পরিচালনা, উন্নয়ন ও বিকাশের অংশ হিসেবে ২০১১ সালে ‘শীপ ব্রেকিং এন্ড শীপ রিসাইক্লিং রুলস্’ জারি এবং ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন’ প্রণয়ন করে।নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি নরওয়ের সহযোগিতা কামনা করেন।নরওেয়র প্রতিনিধিদলে ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন ইকটার-সেভেনডসেন, নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং নরওয়ের জাহাজ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

এছাড়াও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, অতিরিক্তি সচিব মো: জাফর উল্লাহ ও শেখ ফয়েজুল আমীন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।নরওয়ের উপমন্ত্রী ‘হংকং কনভেনশন’ অনুমোদনে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ কনভেনশন অনুমোদনের ফলে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাবে।নরওয়েকে জাহাজ নির্মাণকারী জাতি হিসেবে অভিহিত করে রাগনহিল্ড বলেন, মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাওয়ায় নরওয়েতে প্রচুর জাহাজ রিসাইক্লিংয়ের অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশী ইয়ার্ডগুলি এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারে। এজন্য পরিবেশগত ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।তিনি বলেন, ‘দি হংকং কনভেনশন’ ২০২৩ সালের মধ্যে অনুমোদন করা হলে বাংলাদেশ এ সংক্রান্ত শর্তগুলি প্রতিপালন করার জন্য আরও দুই বছর সময় পাবে ।নরওয়ের উপমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের উন্নয়নে নরওয়ে বিগত এক দশক ধরে সহযোগিতা করে আসছে। ফলে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এ শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। এ শিল্পের আধুনিকায়ন এবং সমুদ্র ও শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নরওয়ের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান। রাগনহিল্ড সজোনার জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কাজে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের উন্নয়নে নরওয়ের সাথে দীর্ঘদিনের কারিগরি সহযোগিতার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ক্রমেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করছে। ‘আমরা গত ৮ মে এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি’।জাকিয়া সুলতানা জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প-খাতে শ্রমিক ও জনবলের দক্ষতা বাড়াতে নরওয়ে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ও কারিগরি সহায়তা বাড়ানোর জন্য নরওয়ের উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উল্লেখ্য,জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ। বাংলাদেশে ১৬৭টি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ইয়ার্ড রয়েছে। এসব ইয়ার্ড বন্দরনগরী চট্রগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলাতে অবস্থিত। তবে, কার্যকর ইয়ার্ড হচ্ছে ৫০টি। বাংলাদেশের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা বছরে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও অধিক। বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলি পৃথিবীর ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করে থাকে।

You might also like