বিজয় দিবসের প্রত্যাশা: গণতন্ত্র চর্চা ও দেশপ্রেম
ম আমিনুল হক চুন্নু
প্রতিটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে থাকে অনেক আত্মত্যাগের ইতিহাস। স্বাধীনতার জন্য রক্ত, জীবন, সম্ভ্রম দিতে হয়। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়। এখন যারা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক তারা বিশেষভাবে জানে, স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে কী বিপুল বিসর্জন। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে স্বাধীনতার মাত্র ৯ মাসের প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে। ২ লক্ষাধিক মা-বোন সম্ভ্রম খুইয়েছে বর্বর বাহিনীর হাতে। এছাড়া ২৪ বছর ধরে স্বাধীনতার আকাঙ্খার আন্দোলন সংগ্রামে কত মানুষ জীবন দিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।
বাঙালী জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্খা অনেক পুরোনো। তেভাগা, নানকার, ফকির সন্নাসী বিদ্রোহ কোন বিদ্রোহই স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকে আলাদা ছিল না। সংগ্রামের এই ধারাবাহিকতায় ৪৭, ৪৮, ৫২, ৬২, ৬৯ ও ৭০ এর পথ অতিক্রম করে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ মহান মুক্তিযুদ্ধ।
বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকাশধারার সঙ্গে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকদের পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রণীত আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক নীতির দ্বন্দ্ব-সংঘাত-অভিঘাতের প্রক্রিয়ায় বাঙালীদের মনে যে নতুন জাতীয় চেতনার সৃষ্টি হয়, তারই ফলে গড়ে উঠে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক স্বাধিকার ও স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ এই এক যুগ ধরে বাঙালী জাতির আপোসহীন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৬০-৬১ সাল থেকেই প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যেসব পদ্ধতি-পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনকে তুঙ্গে নিয়ে এসেছেন তার সফল পরিসমাপ্তির রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশলের এক চমৎকার রূপরেখা তাঁর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। মাত্র ১৯ মিনিটের এই ভাষণে তিনি এত কথা অমন অমোঘ তীক্ষèতা, সাবলীল ভঙ্গি, বাহুল্যবর্জিত কিন্তু গভীরভাবে অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া ভাষায় কেমন করে বলতে পারলেন সে এক বিস্ময় বটে! ভাষণের মূল কথা যদি খুঁজি তাহলে দেখা যায়, পূর্ব বাংলার মানুষের বঞ্চনার ইতিহাস ও অধিকারহীনতার বিষয় এতে দীপ্ত হয়ে উঠেছে; এবং পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমেই এ অবস্থা থেকে বাঙালির সার্বিক মুক্তি সম্ভব,-এই ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামকে মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত করার কৌশল এবং তাতে সাফল্য লাভের দিক নির্দেশনা কিংবা বিশেষ স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে সংগত কারণেই কৌশলময় ভাষা বা ইঙ্গিতে শ্রোতাদের মনে গেঁথে দিয়েছেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল বিজয় অর্জন করার পর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও পশ্চিম পাকিস্তানি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো নানা কূটকৌশল, শঠতা ও স্বেচ্ছাচারী পন্থায় সংখ্যাগুরু বাঙালির এই নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের অধিকারকে বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপÍ হয়; এবং এই গণতান্ত্রিক ও ঘৃন্য কাজের জন্য তারা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বাঙালিকে চিরতরে দাবিয়ে দেবার পাঁয়তারা শুরু করে। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতির অবিসাংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং গোটা বাংলাদেশের মানুষ বিপুলভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্দেশমালা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিল, এর মাধ্যমে সরকারি প্রশাসন চলছিল এবং বাংলার জনগণ অঙ্গীকারদীপ্ত প্রত্যয়ে এর জন্য জান বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
১৯৪৭-এ বৃটিশের শৃঙ্খল ভেঙ্গে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে তারা কখনো পাকিস্তানের অংশ বলে গ্রহণ করতে পারলো না, বাঙালীকেও পাকিস্তানী বলে স্বীকৃতি দিল না। বাঙালীদের জন্য শুধু ঘৃনা, শোষণ এবং বঞ্চনা-বৈষম্য। আওয়াজ উঠতে শুরু হয়ে গেলো মানি না, মানব না। বাঙালী বীরের জাতি। লড়াই করে বাঁচে। ভাষার জন্য লড়াই, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই, স্বায়ত্বশাসনের জন্য লড়াই, সর্বশেষ স্বাধীনতার জন্য লড়াই, প্রস্তুতি, রক্ত, জীবন উৎসর্গ, জেল জুলুম। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১। ২৪টি বছর জুড়েই শোষণ-বঞ্চনা আর জেল-জুলুমের কালি দিয়ে লেখা এক কালো ইতিহাস। তাছাড়া বৃটিশের অধীনে ২০০ বছরের দাসত্বের শোধ পাকিস্তানিরা যেন তুলে নিতে চায় বাঙগালিদের ওপর দিয়ে।
সেই ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার লড়াই। এ পর্বের মূল লড়াই শুরু হয় প্রকৃত অর্থে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করলে। প্রকৃত অর্থে ছয় দফার সার্থকতাই ছিল বাঙালির স্বাধীনতা, সেটা বুঝতে পেরেই পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধুকে ১ নম্বর আসামি করে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের করে “রাষ্ট বনাম মুজিব অ্যান্ড গং” নামে। পাকিস্তানিদের নিপীড়ন-নির্যাতন, দমন-পীড়ন, কূট-কৌশল কোনো কিছুই আর বাঙালিদের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ের পথে পা বাড়ানোর কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। এরপর ‘৬৯-এর গণ-অভ্যূত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক নীতি ধর্ম নিরপেক্ষতাকে যুক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ইশতেহার মানুষ গ্রহণ করেছিল এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্ব মুক্তিযুদ্ধ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে পাকিস্তানি হায়েনারা রাতের অন্ধকারে নিরীহ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। তাঁর নির্দেশ ছিল-‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’। বাঙালি জেগে ওঠে। গড়ে ওঠে সারাদেশে প্রতিরোধ। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় বাঙালির প্রতিরোধ আন্দোলন নির্মমভাবে দমন করা হয়। কিন্তু মফস্বলে এই কাজটি তত সহজ ছিল না। ঢাকার হত্যাযজ্ঞ সারাদেশে প্রচার লাভ করলো। তখন দেশের সর্বত্র পাকিস্তান প্রতিরোধ আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় ১লা এপ্রিল। অন্যান্য জেলাতেও একইভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ২৬শে মার্চের পরে । প্রায় ২ মাসের মধ্যেই মুক্তিবাহিনী সংগঠিত হয় এবং দেশের সর্বত্র নানাভাবে তারা পাকিস্তানি দখলদারদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত পরিণতি বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস সবারই জানা।
বাংলাদেশের ৫১তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীনতার স্থপতি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর আতাউল গনি ওসমানী (এম,এ,জি ওসমানী), সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম), জাতীয় চার নেতা যথাক্রমে-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের, যাদের জন্য আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
মুজিব নগর সরকারের অধীনে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বাধীনতাই হচ্ছে একটি জাতির সবচেয়ে বড় পুরস্কার। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্টায় মুজিব নগর সরকারের ভূমিকা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
বিশ্বের, বিশেষ করে ভারতের জনগণের কাছে ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সরকার তার নিজস্ব পতাকা ব্যবহার করতো। সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণেরা, সাংস্কৃতিক গোষ্টী, বঙ্গবন্ধু শিল্পিগোষ্টী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ইত্যাদি প্রতিষ্টা করে এবং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনসমর্থন সৃষ্টি করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা বাংলাদেশী অভিবাসী ছিলেন তারা মুজিব নগর সরকারের নেতৃত্বেই সংগঠিত হন এবং বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। তাছাড়া নভেম্বর, ১৯৭১ থেকে ভারতীয় বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক সহায়তা অনেক বাড়িয়ে দেয় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের সহায়তায় ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে কয়েকটি সেনা ছাউনির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। এই অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের তদানিন্তন গভর্ণর আব্দুল মোতালেব মালিক ইস্তফা দেন। তখন জেনারেল নিয়াজি ও রাও ফরমান আলী আত্মসমর্পন করে বাংলাদেশে যুদ্ধরত পাকিস্তানি সৈনিকদের বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেন। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল নিয়াজি ভারতের পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পন করেন। এই আত্মসমর্পন অনুষ্টানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। এরপর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।
স্বাধীনতা অর্জনের ৫১ বছর পরও এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত-একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন, মানুষের সেই আশা আজও পূর্ণ হতে পারল না। এজন্য রাজনীতির ময়দানে যারা খেলছেন তাদের কোনো একটি পক্ষকে দোষ দিয়ে গণতন্ত্র তথা বাংলাদেশের সংকট থেকে বের হয়ে আসা যাবে না। এমনকি পাকিস্তান আমলেও বাঙালিদের কাছে যে নির্বাচন ছিল উৎসব, সেই নির্বাচন এখন যেমন অনিশ্চিত তেমনি আতংকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আমলাতন্ত্র এই রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সহায়তা করেছে। কিন্তু আমলাতন্ত্রের কোনো নিজস্ব অস্তিত্ব ছিল না। এর ফলে পাকিস্তান কিংবা ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বলতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের প্রশাসনে প্রতিফলিত হয়।
তবে এমনটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল? বাংলাদেশ স্বাধীন হলো সব ধর্ম, সম্প্রদায়, সব গোষ্টীর মিলিত লড়াই, সংগ্রাম যুদ্ধে। সব ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের এক রঙের লাল রক্ত মিলেমিশে গিয়েছিল। হানাদার বাহিনীর বন্দুকের গুলি একইভাবে সব ধর্মের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোর কর্মীর বুক ঝাঁঝরা করেছিল। হিন্দুর ঘর, মুসলমানদের বাড়ি একই সঙ্গে জ্বলল। একই সঙ্গে প্রাণের ভয়ে দেশত্যাগ করে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান।
তারপর সব এলোমেলো , বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল কোন ভূতের আছড়ে! কোথায় গেল সেই ঐক্য, সেই সমঝোতা? আমরা তো বিশ্বাস করেছিলাম, এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র যা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান আকাংঙ্খা ছিল বাঙালিদের, তা সবার মিলিত গণতান্ত্রিক প্রয়াসেই বাস্তবে রূপ নেবে। স্বাধীন বাংলাদেশে যারা বা যে দলই রাজনীতি করুক, তাদের পা বাঁধা থাকবে মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের চেতনা ও আদর্শের কাছে। অবাধ স্বাধীনতা তো যা খুশি তা করার স্বাধীনতা দেয় না। স্বাধীনতা ভোগের সঙ্গে দায়িত্ব ও কর্তব্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাধীন দেশে একজন নাগরিকের স্বাধীনতা ভোগের অর্থ হচ্ছে অন্য কারো স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করে স্বাধীনতা ভোগ করা নয়।
এই আদর্শবাদ বাংলাদেশে কোনো দল, কোনো গোষ্টী, এমনকি কোন ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ই মানতে চায় না। সবাই মনে করে “আমার স্বাধীনতাই স্বাধীনতা। আমার গণতন্ত্রই একমাত্র গণতন্ত্র”। বাংলাদেশে নির্বাচন এলে এসব কথার সত্যতা মেলে। আমার বিজয় নিশ্চিত হওয়াটাই প্রকৃত গণতন্ত্র। আমার হার মানেই স্বাধীনতা নেই; গণতন্ত্র নেই। আবার দলের দাবী আদায়ে রাজনৈতিক কর্মসূচী আদায়ের পথে জ্বালাও-পোড়াও, সম্পদ ধ্বংস, মানুষ হত্যা তাদের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার। নির্বাচনে নিজ দলের বিজয় নিশ্চিত করতে যত রকম অপচেষ্টা আর অপকৌশলকে গণতন্ত্র বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা দেখা যায়। দেখা যায় নির্বাচন কমিশনকে হাতে রাখার অপকৌশল। ক্ষমতায় যারা থাকে , ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তাদের আদালতকে পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেখা যায়।
নির্বাচনের আগেই নির্বাচনে জিতে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে রাখতে চায়। আসন ভাগাভাগি, দল ভাগাভাগিতে অবৈধ পন্থায় অর্থ ভাগাভাগির কথাও শোনা যায়। নির্বাচনে জিততে আন্দোলনের নামেও দেখা যায় নৈরাজ্য।
এসব নিয়ে সাধারণ নাগরিকের প্রতিক্রিয়ার দিকে কেউ তাকায় না। সে কারণেই নির্বাচন এলেই সাধারণ নাগরিকদের মনে দেখা দেয় ভয়, আতংক। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে , এমনটা মনে হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই বড় ঝড়ের আভাস। জনগণের প্রার্থনায় মন দেওয়ার সময় নেই নির্বাচনের স্টেকহোল্ডারদের । ওদের স্বাধীনতাই স্বাধীনতা। আর সবাই ওদের স্বাধীনতার অধীন। এই ডামাডোলে বাংলার পশ্চিমাকাশে কখন জমে ওঠে কালবৈশাখী ঝড়ের বারতা নিয়ে সিঁদুর মেঘ, সেই আশংকা। বাংলাদেশের মানুষ ঘরপোড়া গরু, তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। কবে যে সব মেঘ কেটে গিয়ে ঝকঝকে রোদ দেখতে পাবে মানুষ! তাই এবারের বিজয় দিবসের প্রত্যাশা সুষ্টু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, গণতন্ত্র চর্চা ও দেশপ্রেম।
(লেখক: গবেষক, প্রাবন্ধিক। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রী কলেজ, সিলেট। পিএইচ ডি ফেলো, নিউইয়র্ক)