মায়াপুর, নবদ্বীপ থেকে ফুলিয়া, কৃষ্ণনগর
দিলীপ মজুমদার
সর্ষে আছে আমাদের নবকুমার আর তার বউ রানুর পায়ে। যখন তখন বেরিয়ে পড়া তাদের স্বভাব। যখন চাকরি করত নবকুমার, তখন গরমের ছুটি, পুজোর ছুটি আর বড়দিনের ছুটিতে লম্বা সফর করত। অবসর নেবার পরে সপ্তাহখানেক ঘরে থাকার পরে ছটফট করতে থাকে। আমাকে আর আরতিকেও তাতিয়ে তোলে। আরতির কথা আলাদা, আমি কিন্তু ঘরকুনো মানুষ। যাতায়াতের ধকল সইতে পারি না। সব পরিবেশে মানিয়েও নিতে পারি না। তবু নবকুমার আর রানুর ইচ্ছাশক্তি আমাকে হারিয়ে দেয়। নবকুমার বলে, ‘দাদা, কল্পনায় দেশভ্রমণ করা তো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো, নিজের চোখে না দেখলে কি ভ্রমণ সার্থক হয়? ’ভ্রমণের সঙ্গী হিসেবে ওদের দুজনের তুলনা হয় না। অন্য কেউ হলে এড়িয়ে যেতাম। অজুহাতের তো অভাব নেই। কিন্তু এদের বেলায় আমার নিজের সায় থেকে যায়।
কিছুদিন ধরে মায়াপুরে যাবার কথা বলছিল তারা। মায়াপুর ইসকনের ঘাটি। হেড অফিস। নবকুমাররা আবার ইসকনের লাইফ মেম্বার। বছর কুড়ি আগে পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে মেম্বারশিপ নিয়েছিল তারা। কৃষ্ণ বা ইসকন ভক্ত না হয়েও কেন সদস্য হয়েছিল নবকুমার? অঙ্কের টিচার সে। তার হিসেবও অঙ্কের। মেম্বাররা বছরে একবার সপরিবারে বিনামূল্যে তিন দিন থাকতে পারবে ইসকনের কোন ভবনে। থাকা ও খাওয়ার জন্য কোন মূল্য দিতে হবে না। সেই হিসেবে কুড়ি বছরেই টাকা উসুল। নবকুমারের ছেলে মায়াপুরে এসে বিরক্ত হয়েছিল, বিরক্ত হয়েছিল আজীবন সদস্য পদ গ্রহণে। কিন্তু অংকের হিসেবটা শুনে আর কিছু বলে নি।
কলকাতা থেকে দুদিক দিয়ে আসা যায় মায়াপুর। কৃষ্ণনগর থেকে টোটোয় স্বরূপগঞ্জ ঘাট, নৌকোয় মায়াপুর। অন্যদিকে নবদ্বীপ বা বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট থেকে টোটোয় হুলোরঘাটে নেমে লঞ্চ বা নৌকোয় মায়াপুর। আমি নবদ্বীপে থাকার কথা বলেছিলাম। রাজি হয় নি নবকুমার। সকাল সাতটা পাঁচের কাটোয়া লোকালে উঠলাম আমরা। আমাদের পাড়ার এক ব্যবসায়ীর শ্বশুরবাড়ি নবদ্বীপে। তিনি বলেছিলেন ছ’টার লোকাল ধরতে, ওটা না কি আটটার মধ্যে পৌঁছে যায়। আমরা যাচ্ছি বেড়াতে। এত হাকপাক করার দরকার নেই। টোটোয় নবদ্বীপের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম উত্তর কলকাতার মতো সরু সরু গলি। ঘিঞ্জি। হুলোর ঘাটে লঞ্চে উঠলাম। ভাড়া দশ টাকা। নৌকোর ভাড়া অবশ্য কম। পাঁচ টাকা। ভাগীরথী পেরিয়ে জলঙ্গী নদী। নদী সঙ্গমের কাছে দুই ধারা জলের দুই রঙ। ইলাহবাদের গঙ্গা যমুনার মতো। ঘাটে নেমে আবার টোটো। এখানে দেখি টোটোর রাজত্ব , অটো নেই । মিনিট পনেরোর মধ্যে ইসকনের চার নম্বর গেটের সামনে হাজির আমরা। চার নম্বর গেট থেকে গীতা ভবনে যাবার সুবিধে। নবকুমার এই গীতা ভবনের ৯০৬ আর ৯০৭ নম্বর ঘর বুকিং করে রেখেছে। প্রতিদিন ভাড়া আটশো টাকা। এরচেয়ে কম টাকায়ও অবশ্য থাকার ব্যবস্থা আছে। থাকার জন্য কত যে ভবন আছে এখানে! গদা ভবন, গীতা ভবন, বংশী ভবন, কঞ্চ ভবন, শ্রুতি ভবন, শঙ্খ ভবন, নিত্যানন্দ কুটির।
ঘরে ঢুকে স্নানটান সেরে ষাট টাকার টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে পড়লাম লাইনে। বিশাল এক ঘরে বিশাল পংক্তিভোজন। আমিষ নয় নিরামিষ। এখানে সব ভবনে শোভা পায় এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের ( ১৮৯৬-১৯৭৭) ছবি। ইসকনের (International society for Krishna Consciousness) প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রভুপাদ। যাঁর আসল নাম অভয়চরণ দে। এক সুবর্ণ বণিক পরিবারের সন্তান। স্কটিশচার্চ কলেজের ছাত্র। বিয়ে করেছিলেন। আছে সন্তানও। সব ছেড়ে-ছুড়ে সন্ন্যাস নিলেন ১৯৪৯ সালে। বৈষ্ণবশাস্ত্রের ভাষ্য রচনা করবেন, এই তাঁর ইচ্ছে। এলেম ছিল মানুষটির। সাংগঠনিক প্রতিভা ছিল। হয়তো ব্যবসাবুদ্ধিও ছিল প্রখর।
মাত্র চল্লিশ টাকা আর কয়েকখানা বৈষ্ণবশাস্ত্র নিয়ে ১৯৬৫ সালে তিনি চেপে বসলেন বস্টনগামী এক মালবাহী জাহাজে। তখন তাঁর বয়েস ঊনসত্তর। বস্টনের পার্কে, রাস্তায় নামগান করতে লাগলেন। কোথাও বা ব্যাখ্যা, বক্তৃতা। কিন্তু একা, একদম একা। প্রথম প্রথম শ্রোতাও জুটত না বেশি। পরের বছর চলে এলেন নিউইয়র্ক। চলতে লাগল ভগবদগীতা বিষয়ে বক্তৃতা, নামগান, কীর্তন। শ্রোতা জুটতে লাগল। শ্রোতারা ভক্ত হতে লাগলেন ধীরে ধীরে। চলার গতিও বাড়ল প্রভুপাদের। সানফ্রান্সিককো, সিয়াটেল, মন্ট্রিল, নিউ মেক্সিকো….। নামগান করতে করতে নিজেই আমেরিকায় একটা নাম হয়ে উঠলেন। নিউইয়র্ক শহরে প্রতিষ্ঠিত হল ইসকন। ১৯৬৬ সালে। পরের বছর সানফ্রান্সিকোতে প্রথম রথযাত্রা। ইসকনের মন্দির তৈরি হল নিউ মেক্সিকো, কানাডা, আফ্রিকা, ইউরোপ, ভারতে। মাত্র সাত/ আট বছরে গড়ে উঠল বিশাল সাম্রাজ্য। গড়ে উঠল পরিচালন সমিতি। ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট থেকে প্রকাশিত হতে লাগল একের পর এক বই। নানা ভাষায়। প্রভুপাদ তো নিজেই সংস্কৃত থেকে ইংরেজিতে চল্লিশটি ভক্তিশাস্ত্র অনুবাদ করেছিলেন। মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা ছিল তাঁর।
খাওয়া শেষ করে প্রভুপাদের কথা ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে একটু বিশ্রাম নিলাম। অভয়চরণবাবু , থুড়ি, স্বামী প্রভুপাদ আপনাকে শত সহস্র কুর্নিশ। কি বিশাল মায়ার ফাঁদ পেতেছেন আপনি। কি বিশাল কর্মযজ্ঞ। গেট দিয়ে গাড়ি ঢুকছে আর বেরোচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ আসছে আর যাচ্ছে, নানা কাজে লেগে আছে সহস্র কর্মচারী, বেকারিতে কাঠের আগুন জ্বলছে তো জ্বলছেই, বিশাল রান্নাঘরে ক্রমাগত রান্না হচ্ছে, বিরাট খাবার লাইন থেকে অজস্র নর-নারী টিকেট হাতে খাবার ঘরে ঢুকছে তো ঢুকছেই, খড়ের ছাউনির আদি মন্দিরে অষ্টপ্রহর নাম সংকীর্তন চলছে, মাথা মুড়িয়ে সাহেব-মেমরা মালা জপে চলেছে, রাস্তায় আলপনা আঁকছে কোন ভক্ত, সকাল সন্ধ্যায় আরতি হচ্ছে মন্দিরে, চন্দ্রোদয় মন্দিরের মাথার উপরে সূর্যালোকে ঝকমক করছে সোনার পাত, গাছে গাছে ফুল ফুটে আছে কিন্তু ‘কৃষ্ণের ফুল তুলিবেন না’ প্ল্যাকার্ড সাঁটা, ভেতরের টোটোয় চেপে লোকে দেখতে যাচ্ছে গোশালা আর ফিরছে গোরুর গাড়িতে চেপে। অবাক বিস্ময়ে আমি দেখছি তিলককাটা ভক্তদের। কেন জানি না, মনের মধ্যে গুনগুন করছে গানের কলি: ‘মন না রাঙায়ে বসন রাঙায়ে কি ভুল করিলে যোগী’। তবু বলতে হবে শ্রীকৃষ্ণকে, শ্রীচৈতন্যকে নিদারুণ পাবলিসিটি দিয়ে গেছেন স্বামী প্রভুপাদ। রামজন্মভূমি আন্দোলনের মতো কৃষ্ণজন্মভূমি আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছে ইসকন। মনোজ বসু লিখেছিলেন ‘মানুষ গড়ার কারিগর’। আর এখানকার এঁরা হলেন ‘মানুষ ধরার কারিগর’। নবকুমার বলল, চারদিকে এরা এজেন্ট ছেড়ে দিয়েছে, তারাই টেনে আনছে মানুষকে। রানু বলল, ‘আমাদের গ্রামেও এ রকম এজেন্টদের দেখেছি।’
এজেন্টে আমার আপত্তি নেই, কৃষ্ণভক্তির ভড়ংয়েও আপত্তি নেই, তবে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের টিকি রাখতে আর মালা জপতে বাধ্য করায় আপত্তি আছে। এ ভাবে শৈশবকে হত্যা করার কোন মানে হয়? এ কথা ভাবার পরে মনে হল শৈশবকে হত্যা করার ব্যাপারে শুধু ধর্মসম্প্রদায়কে দোষ দিয়ে লাভ নেই, দেশের প্রশাসক আর রাজনৈতিক নেতারাও তো দায়ী। এই দেখুন, ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে বসেছি। সূর্যদেব একটু পশ্চিমে ঢলতেই তাড়া দিল নবকুমার। আজ মায়াপুরটা ঘুরিয়ে দেখাবে সে। তাই চেপে বসতে হল টোটোয়। গা-হাতে খুব ব্যথা। জ্বর ভাব। কিন্তু নবকুমার সে সব গ্রাহ্য করল না।
দেখা হল শ্রীচৈতন্য মঠ। ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী সন্ন্যাস গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠা করেন এই মঠ। উদ্দেশ্য গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ও চৈতন্যদেবের বাণী মানুষের মধ্যে প্রচার করা। অদ্বৈত ভবন ও ২৯ চূড়ার চৈতন্যমঠ দেখে আমরা এলাম শ্রীবাস অঙ্গনে। একে বলে খোল ভাঙার ডাঙা। কেন বলে? চৈতন্যদেব তাঁর পার্ষদদের নিয়ে নাম সংকীর্তনে মেতে উঠেছিলেন। কীর্তন নিষিদ্ধ করেন সেখানকার শাসক চাঁদ কাজি। কিন্তু বিদ্রোহী চৈতন্য সে নিষেধকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে চলেন তাঁর কীর্তনের দল নিয়ে। চাঁদ কাজির নির্দেশে এই জায়গায় চৈতন্যদেবের খোল ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু ইতিহাসের গল্প শেষ হয় নি এখানে। চৈতন্যদেবের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ হল চাঁদ কাজির। পরাজিত হয়ে চাঁদ হয়ে যান চৈতন্যভক্ত।
সেই চাঁদ কাজির সমাধি আছে মায়াপুর থেকে মাইল তিনেক দূরে বামনপুকুরে। বিরাট একটা গোলকচাঁপা গাছের তলায় সেই সমাধি বৈষ্ণবদেরও পবিত্রস্থান। জনশ্রুতি এই গাছের বয়স ৫০০ বছর। মোমবাতি আর ধূপ জ্বালাতে হবে। তারজন্য দিতে হবে ১০টাকা। গাছের তলায় বসে একজন বৃদ্ধ কথক বলে যাচ্ছেন চাঁদ কাজি আর চৈতন্যদেবের কথা। সে কথায় ইতিহাস আর কল্পনা মিলে মিশে একাকার।
এর কিছুটা দূরে আছে বল্লালদিঘি গ্রাম। সেখানে আছে বল্লালঢিবি। মধ্যযুগের ইতিহাসের এক রহস্য লুকিয়ে আছে তার মধ্যে। কেউ বলেন রাজা বল্লাল সেনের প্রাসাদ ছিল এখানে। কিন্তু সুধীরঞ্জন দাসের মতে এটা ছিল এক বৌদ্ধবিহার। বিক্রমশীলা বিহারের সঙ্গে এর সাদৃশ্য ছিল। ১৯৮২ সালে এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়। আশ্চর্যের কথা, মায়াপুরের কর্তাদের মুখে আমরা বল্লালঢিবির নাম শুনিনি। টোটোর চালকরাও মায়াপুর ঘুরিয়ে আনার সময় বল্লালঢিবির নাম করেন না। ভক্তি এভাবে ইতিহাসের টুঁটি চেপে ধরে।
শীত না থাকুক, কিন্তু শীতের সন্ধ্যা। অন্ধকার নেমে এল তাড়াতাড়ি। আমরা ফিরে এলাম ইসকনের ভেতরে। মন্দিরের ভেতরে শুরু হয়েছে আরতি। বাইরে বসেও তা দেখা যাচ্ছে মন্দিরের গায়ে লাগানো বিশাল স্ক্রিনে। গাছের তলার বেদিতে আমরা বসলাম। নিশ্চয়ই কৃষ্ণের গাছ। পাশেই শালপাতার ঠোঙায় বিনামূল্যে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে জুতো খুলে, মোবাইল ও ব্যাগ রেখে আরতি আর রানু গেল মন্দিরের ভেতরে। মন্দিরের ভেতরে বাইরে সিসি টিভি। নিয়মের ব্যতিক্রম দেখলে ক্যাঁক করে ধরছে সিকিউরিটির লোকেরা। ভগবানও কলিযুগের সিকিউরিটির কাছে কাবু হয়ে থাকেন।
পরের দিন আমরা গঙ্গা পেরিয়ে চলে গেলাম নবদ্বীপ। প্রাচীন শহর। এখানে মিলিছে শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব সংস্কৃতি। এখানে বৌদ্ধরাও ছিলেন। তার প্রমাণ পশ্চিমে পারডাঙ্গার উঁচু ঢিবি, যা আসলে একটা বৌদ্ধ স্তূপ। সংস্কৃত ও ন্যায় চর্চার কেন্দ্র নবদ্বীপ। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন এই শহরকে হেরিটেজ শহর হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রাচীনত্বের সব নিদর্শন ধরে রাখতে পারে নি নবদ্বীপ। তার কারণ গঙ্গার ভাঙন। নবদ্বীপে মন্দির আছে ৩৪ টি, জন্মভিটে আছে ২ টি, স্মৃতিসৌধ আছে ৪ টি, রাজবাড়ি আছে ১ টি, ঘাট আছে ১০ টি। একবেলায় এত সব দেখা সম্ভব নয়। তাই আমাদের দ্রষ্টব্য নির্বাচন করে নিতে হবে।
চৈতন্যদেবকে ‘মহাপ্রভু’ বলে ডাকেন ভক্তরা। আমরা সেই মহাপ্রভুপাড়া দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম। এখানে আছে ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দির। চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণের পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া ডেকে পাঠালেন এক নবীন ভাস্করকে। তাঁর নাম বংশীদাস। বললেন, চৈতন্যদেবের বাড়িতে যে নিম গাছ আছে, তার ডাল কেটে তৈরি করতে হবে মহাপ্রভুর কাঠের মূর্তি। কথামতো বংশীদাস মূর্তি তৈরি করলেন, তলায় লিখে দিলেন ‘বংশীর প্রাণধন গৌরাঙ্গ সুন্দর’। পোড়ামাতলায় আছে মা ভবতারিণীর মন্দির। ইতিহাস বলে নদিয়ার রাজা রাঘব গঙ্গার ধারে এক বিশাল মন্দির তৈরি করে তার মধ্যে স্থাপন করেন গণেশের মূর্তি। গঙ্গার ভাঙনের ভয়ে সে মূর্তি সরিয়ে নিয়ে মাটির তলায় রাখা হয়। সেই গণেশমূর্তি থেকে পরবর্তী রাজা গিরিশচন্দ্র তৈরি করেন ভবতারিণী মূর্তি।
প্রাচীন মায়াপুর, যার পূর্ব নাম ছিল রামচন্দ্রপুর, সেখানেই চৈতন্যের জন্মস্থান। তবে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ব্রজমোহন দাস রামচন্দ্রপুরে কূপখনন করতে গিয়ে চৈতন্যের জন্মস্থান নির্ণয় করেন। সেখানে ১৯৬১ সালে ৩০ ফুট উচ্চ নবরত্ন মন্দির তৈরি হয়। এটি গৌড়ীয় মন্দিরশৈলির নিদর্শন। মন্দিরের ভেতর চৈতন্যজননীর মূর্তি। আমাদের টোটোচালক শচীমাতার বাড়িটিকে চৈতন্যের জন্মস্থান বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন। রানুর প্রতিবাদে তাঁকে পরাস্ত হতে হয়। টোটো ঘুরিয়ে আনতে হয় রামচন্দ্রপুরে। মালঞ্চপাড়ায় দেখলাম চৈতন্যপত্নী বিষ্ণুপ্রিয়ার জন্মস্থান। এখানে চৈতন্য ও মহাপ্রভুর দারুমূর্তি আছে। রাস ও দোলের সময় মানুষের সমাগম ঘটে। বড়ালঘাটের দ্বাদশ শিব মন্দির আর বুড়োশিবতলা ঘুরে আমরা এলাম গানতলা রোডে। এখানে আছে বড় আখড়া। এটি নবদ্বীপের প্রথম বৈষ্ণব আখড়া। তাই এর ঐতিহাসিক মূল্য আছে। মন্দির চত্বরে গৌর-নিতাই ও রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ ছাড়াও আছে চরণদাস বাবাজির সমাধি মন্দির।
পরের গন্তব্য শ্রীবাস অঙ্গন। উনিশ শতকে নির্মিত হলেও পরে গঙ্গাগর্ভে নিমজ্জিত হয়। পরে গুরুদাস দাস নতুন করে নির্মাণ করেন। এখানে মাতা বসুধা, মাতা জাহ্ণবীসহ নিত্যানন্দ প্রভু, পঞ্চতত্ত্ব ছাড়া ৩৭ জন চৈতন্য পরিকরের চমৎকার দারু বিগ্রহ আছে। শ্রীবাস অঙ্গন রোডে আছে সোনার গৌরাঙ্গ মন্দির। হরিসভাপাড়ায় আছে হরিসভা মন্দির। হরিভক্তি প্রদায়িনী সভাই হরিসভা মন্দিরে রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে আছে মাটির তৈরি চৈতন্যদেবের মূর্তি। ঐতিহাসিকদের মতে এটি মহাপ্রভুর তৃতীয় প্রাচীন বিগ্রহ। মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন বিহারী পাল। এ মূর্তির বৈশিষ্ট্য আছে, এবং এই গৌর হলেন নাটুয়া গৌর। আগমেশ্বরী মন্দির, কানাই-বলাই মন্দির, মহানির্বাণ মঠ দেখে আমরা এলাম ব্রজানন্দ গোস্বামী রোডে রাধা মদনমোহন জিউর মন্দিরে। কবি নজরুল ইসলামের জীবনী পড়তে গিয়ে এ মন্দিরের উল্লেখ দেখতে পাই। ১৯৩৭-৩৮ সালে এখানে এসেছিলেন নজরুল। মন্দিরে বসত গানের আসর। সেই গানের আসরে নজরুল তাঁর একটি বিখ্যাত গানের সুর তুলেছিলেন: ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার’। যে মেহগনিকাঠের চেয়ারে বসেছিলেন নজরুল, তা দেখে রোমাঞ্চ হল। ঠিক একই রকম রোমাঞ্চ হল মালঞ্চপাড়ায় বুনো রামনাথের ভিটে দেখে। চতুষ্পাঠী স্থাপন করে তিনি এখানে শিক্ষাদান করতেন। গোকুলানন্দ ঘাটের কাছে রানি রাসমণির কাছারিবাড়ি দেখে ফিরতে হল আমাদের। হুলোর ঘাটের কাছে এসে নবকুমার বলল, ‘নবদ্বীপের বিখ্যাত দই না খেয়ে তো লঞ্চে ওঠা যাবে না।’
ইসকন মন্দিরে ফিরে এসে রাতের খাওয়ার টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়াতে হল। এখানে রাতের খাবার শুরু হয়ে যায় আটটায়। হাসপাতালের মতো। খাওয়ার পরে বিশ্রাম নেবার উপায় নেই। নবকুমারের নির্দেশে হাঁটতে হবে। গীতা ভবন থেকে বেরিয়ে গোশালার দিকে হাঁটতে হাঁটতে দেখি এক জায়গায় গীতা জয়ন্তীর সমারোহ। রক্ষণশীল প্রাচীন মানুষেরা যেমন মনে করেন, বেদে সব আছে (বৈজ্ঞানিক মেঘনাদ সাহার বিখ্যাত পরিহাস রসিকতা ‘ব্যাদে সব আসে’ ) তেমনি ইসকন ভক্তরা মনে করেন গীতায় সব আছে। এঁরা আবার রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দকে মানেন না। একজন বক্তার মুখে শুনলাম বিবেকানন্দ না কি আমাদের সনাতন ধর্মকে নষ্ট করেছেন গীতা না পড়ে ফুটবল খেলায় মন দিতে বলে। তাহলে ধর্মের মধ্যেও ‘হেজিমনি’ ব্যাপারটা বেশ ভালো রকমে আছে।
কালকে আমরা যাব ফুলিয়া, শান্তিপুর আর কৃষ্ণনগরে। ইসকন থেকে কোন টুরিস্ট বাস যায় কি না খোঁজ করে গেলাম ক্যামপাসের ভেতরএদের এক ট্রাভেল এজেন্সিতে। ফুলিয়ায় কোথায় যাব জানতে চাইতে কবি কৃত্তিবাসর জন্মস্থান বলায় তাঁরা হাঁ করে রইলেন। কে কৃত্তিবাস? নাম তো শোনেন নি কৃত্তিবাসের। খুব রাগ হয়ে গেল আমার। বুঝলাম, ইসকন তেমন জায়গা নয় ‘জ্ঞান যেথা মুক্ত’। মনে হল চৈতন্যদেবকেও এঁরা ভালো করে চেনেন না। আচারের মরুবালিরাশির মধ্যে আটকে আছেন এঁরা। বাইরে বেরিয়ে আমরা পেয়ে গেলাম এক যুবককে। নাম তার শ্যামল মণ্ডল। নতুন চারচাকার গাড়ি আছে তাঁর। যে সব জায়গার কথা বললাম সেসব ঘুরিয়ে আনবেন, ১৮০০ টাকা নেবেন। তবে শ্যামল ফুলিয়াকে চিনলেও কৃত্তিবাসের নাম শোনেন নি। মনে হল, মধুসূদন দত্ত এক মহামূর্খ, তিনি কৃত্তিবাসকে ‘এ বঙ্গের অলঙ্কার’ বলেছিলেন।
বড় রাস্তা থেকে আমরা ফুলিয়ায় ঢুকলাম। কৃত্তিবাস বলেছিলেন, ‘গ্রামরত্ন ফুলিয়া জগতে বাখানি / দক্ষিণে পশ্চিমে বহে গঙ্গা তরঙ্গিণী।’ আমার ধারনা ছিল ফুলিয়ার কাছে-পিঠে গঙ্গা। কিন্তু নদী যে আপনবেগে পাগলপারা। গঙ্গা ফুলিয়া থেকে সরে গেছে অনেকখানি। একে-তাকে জিজ্ঞেস করে শ্যামল আমাদের নিয়ে এল সঠিক জায়গায়। একটা অনুজ্জ্বল তোরণের ভেতর দিয়ে আমরা চলে এলাম যে বাড়িতে সেটা হরিদাসের ভজনপীঠ। চৈতন্যভক্ত হরিদাস ঠাকুর। জাতিতে হারিদাস কিন্তু মুসলমান। তবু তাঁকে টেনেছিলেন চৈতন্য। তুচ্ছ জাতিভেদকে বুড়ো আঙুল দেখানো সেকালের পটভূমিতে কম বৈপ্লবিক কাজ নয়। মুসলমান হয়ে বৈষ্ণবদের সঙ্গে মেশামেশি! সেখানকার মুসলমান শাসনকর্তার সহ্য হল না। হরিদাসকে বেত্রাঘাত (‘বাইশ বাজারে’ ) করার আদেশ দেওয়া হল। বেত চলছে, রক্তাক্ত হচ্ছে শরীর, তবু রা নেই হরিদাসের মুখে। মনে মনে তিনি অপরাধীদের ক্ষমা করতে বলছেন তাঁর ঈশ্বরকে, ‘এ সব জীবেরে প্র্রভু করহ প্রসাদ’। হরিদাসের সাধনপীঠের পরিবেশ মনোরম। আম, বেল, নিম, অশ্বথ্থ গাছে ভরা। আটটি তুলসীমঞ্চ। যেন কৃষ্ণের আট সখী। তারপরে দালান। এখানে কৃষ্ণ-রাধা এবং বলরাম-রেবতীর মূর্তি। কৃষ্ণের জীবনকথায় রেবতী যেন ‘কাব্যে উপেক্ষিতা’ এক নারী। গাছের তলায় হরিদাসের নামজপের স্থান। একটু দূরে আছে কবি কৃত্তিবাসের অস্থিসমাধি। এখান থেকে আমরা এলাম কৃত্তিবাসের স্মৃতিস্তম্ভের কাছে। শ্বেত পাথরের স্মৃতিস্তম্ভ। প্রায় একশো বছর আগে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই স্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এখানে। তার পাশে এক বিরাট বটগাছ। যার তলায় বসে কবি না কি রচনা করেছিলেন রামায়ণ। স্মৃতিস্তম্ভের উত্তরে খেলার মাঠ ও বিদ্যালয়। পাকা মঞ্চও আছে একটি। সেখানে কৃত্তিবাসকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠান হয়। কৃত্তিবাসের স্মৃতিভবন আর সংগ্রহশালাও আছে। শুনেছি সেখানে কৃত্তিবাসের পুঁথি আছে মাইক্রোফিল্মে, আছে নানা ভাষার রামায়ণ। সেই যে ঐতিহাসিক রামানুজম বলেছিলেন, ‘যত রাম তত রামায়ণ’। কিন্তু সংগ্রহশালাটি বন্ধ, দেখা হল না আমাদের। তবে রামায়ণের হনুমানকে দেখলাম। যে বটগাছের তলায় বসে কৃত্তিবাস রামায়ণ লিখেছিলেন, সেখানে বাস করে প্রচুর হনুমান। রানুর ব্যাগে খাবারের গন্ধ পেয়ে তারা নেমে এল নিচে। সেখানে আলাপ হল একটি কুড়ি/একুশ বছরের ছেলের সঙ্গে। শুভঙ্কর রাজবংশী। তাঁতিদের কাজকর্ম দেখার কথা বলায় সে নিয়ে গেল তার বাড়িতে। স্মৃতিস্তম্ভের উল্টোদিকে তার বাড়ি। তার কাকিমা বন্দনা তখন মগ্ন ছিলেন কাপড় বোনায়। চমৎকার টাঙ্গাইল শাড়ি। দাম কত? ১৮০০ টাকা। খুব পছন্দ রানুর। কিন্তু বন্দনা জানিয়ে দিলেন বিক্রি করা যাবে না। এ কাপড় নিয়ে যাবেন মহাজন। দাদন আছে না! আলাপ হল শুভঙ্করের বাবা জয়দেববাবুর সঙ্গে। তাঁর মুখে শুনলাম ফুলিয়া শান্তিপুরের তাঁতশিল্পীদের দুর্দশার কথা।
চলো শান্তিপুর। সেই শান্তিপুর যেখানে সন্ন্যাস নেবার পর প্রথম এসেছিলেন চৈতন্যদেব। আমি যেন মানসচক্ষে দেখছি সেই ছবি। নৌকো থেকে নেমে তীরে উঠছেন মুণ্ডিতমস্তক, দীর্ঘদেহী, গৌরবর্ণ, অনিন্দ্যসুন্দর এক মানুষ। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছেন অসংখ্য মানুষ। দুহাত তুলে নাচতে নাচতে এগিয়ে আসছেন গৌরাঙ্গ। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। ইসকনের মানুষরা যেভাবে নাম জপ করেন, সেটা যান্ত্রিক। কিন্তু চৈতন্যের নামজপ স্বতঃস্ফূর্ত। উঠে আসছে ভেতর থেকে। শ্যামনামে অবশ তাঁর শরীর। ‘কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো আকুল করিল মোর প্রাণ’।
শান্তিপুরে আছে অদ্বৈত আচার্যের সাধনপীঠ, আছে বড় গোস্বামীসহ ২৪টি বিগ্রহবাড়ি, আছে আগমেশ্বরী মন্দির – সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি – গোকুলচাঁদ মন্দির—বংশীধারী শিবমন্দির – শ্যামচাঁদ মন্দির। কিন্তু শুধু মন্দির নয়, এখানে আছে ২৬টি মসজিদ (তোপখানার মসজিদ, মরহুম শরিবতের মসজিদ, গাজি ইয়ার মহম্মদের তৈরি মসজিদ ), আছে একটি বৌদ্ধস্তূপ। ছিল এক রেশম কুঠির। সেই কুঠির হাতিশালার দেওয়াল আজ ভগ্নস্তূপে পরিণত। বাংলার সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসের এত উপাদান থাকা সত্ত্বেও শান্তিপুর, ফুলিয়া কিন্তু পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারল না। অতীত সংরক্ষণে এখনও আমাদের অনীহা ও অন্যমনস্কতা। শ্যামল গাড়ি ঘুরিয়ে আবার বড় রাস্তায় নিয়ে যাবার সময় আমার মনে পড়ল ১৯৬৬ সালের খাদ্য আন্দোলনের সময়কার কথা। নদিয়া শান্তিপুরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল আন্দোলন। তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। তিনি একটু পরিহাস করে বলেছিলেন, ‘শান্তিপুর ডুবু ডুবু / নদে ভেসে যায় রে’। সেই পরিহাস আন্দোলনে প্রবল ইন্ধন সঞ্চার করেছিল।
কৃষ্ণনগরের দিকে যেতে যেতে নবকুমার বলল, ‘দাদা, শুনেছি কৃষ্ণনগরে অনেক বড় বড় মানুষের জন্ম। ঠিক কথা বলেছে সে। ভারতচন্দ্র রায়, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, হেমচন্দ্র বাগচি, মনমোহন ঘোষ, বিজ্য়লাল চট্টোপাধ্যায়, দামোদর মুখোপাধ্যায়, রামতনু লাহিড়ি, বাঘা যতীন, সুধীর চক্রবর্তী, নারায়ণ সান্যাল, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, লালমোহন ঘোষ, চঞ্চলকুমার মজুমদার, প্রমোদরঞ্জন সেনগুপ্তের জন্মস্থান কৃষ্ণনগর। নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগর। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের নামানুসারে এই শহরের নাম। কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদার। আমারও পদবী মজুমদার, তাই একটু শ্লাঘা বোধ করি। ভবানন্দের উল্লেখ আছে ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গলে’।
শ্যামল মণ্ডল খুব চেনে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ি। অনেক টুরিস্ট নিয়ে এসেছে। আমাদেরও নিয়ে এল। কিন্তু রাজবাড়ির গেট বন্ধ। রাজবাড়ির সামনে একটা বিরাট বকুলগাছ। সেই গাছের তলায় বিরাট এক ফোকর। তার ভেতর বসে রান্নাবাটি খেলছে বাচ্চা একটি মেয়ে। আরতিকে দেখে সে বলল, ‘গাড়ি থেকে নামলে কেন? এখন তো রাজবাড়ি বন্ধ গো। সেই পুজোর সময় খুলবে।’ রাজবাড়ি থেকে তোরণের মধ্যে বিরাট ফাঁকা মাঠ। এখানেই কি রাজদরবার ছিল? কোথায় বসতেন সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুরাগী রাজা কৃষ্ণচন্দ্র? ভারতচন্দ্র কি ভাবে পড়তেন তাঁর কাব্য? বিদূষক গোপাল ভাঁড়ই বা বসতেন কোথায়? এই বিশাল মাঠে কি বারদোলের মেলা বসে ? রাজবাড়ির বাম দিকে দুর্গাবাড়ি। সেটাও না কি দেখার মতো। তার গেটটা খোলা দেখে আমরা ঢুকে পড়লাম। কিন্তু বাঁদিকের নার্সারির মালিক নিষেধ করলেন এগুতে। চারদিকে সিসি টিভি। এগোলেই ছুটে আসবে নিরাপত্তারক্ষীরা, বাধা দেবে। নার্সারির মালিকের নাম শক্তি চক্রবর্তী। তিনি বললেন, সরকার রাজবাড়ি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল, কিন্তু রাজার বংশধরেরা রাজি হন নি এ প্রস্তাবে। তাঁরা কলকাতায় থাকেন। মাঝে মাঝে এসে দেখভাল করেন। আরতি আর রানু নার্সারি থেকে কয়েকটা গাছ কিনল।
এবার শ্যামল আমাদের নিয়ে চলল ঘূর্ণিতে। মাটির পুতুলের জন্য বিখ্যাত যে জায়গা। সেই যে গান আছে, ‘কৃষ্ণনগর থেকে আমি মাটির পুতুল এনেছি’। একে পুতুলপাড়া বলা ভালো। এখানকার পুতুল দেশ –বিদেশে যায়। শ্যামল তার এক চেনা দোকানে নিয়ে গেল। কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত মিষ্টি সরপুরিয়া আর সরভাজা খাওয়াতে। রাস্তাটার নাম কি? অনন্তহরি রোড। আরে এখানেই তো অধরচন্দ্র দাস প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর মিষ্টির দোকান, যে দোকানে থাকত তাঁর আবিষ্কৃত মিষ্টি সরপুরিয়া আর সরভাজা।
বেলা অনেক হল। এবার ফেরার পালা। কাল ভোরে নদী পেরিয়ে আমরা ট্রেনে উঠব। মনে আফসোস। কলকাতার এত কাছে এমন সব গুপ্তধন ছড়িয়ে আছে। হিল্লি-দিল্লি না ঘুরে এ সব এতদিন দেখিনি কেন?
লেখক: কলামিষ্ট, ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।