যৌন নিপীড়নের দায়ে লন্ডনে বাঙালি যুবকের ১৬ বছর জেল

বার এবং নাইটক্লাব ফেরত নারীদের যৌন নিপীড়নের দায়ে লন্ডনের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন দুই ভাই, যাদের একজনকে ১৬ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ক্যামডেনের ক্রোমার স্ট্রিটের বাসিন্দা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত দুই ভাই নাজমুল আহমেদ (২৬) এবং সেলিম আহমেদকে এ বছরের শুরুর দিকে আলাদা আদেশে দোষি সাব্যস্ত করে উড গ্রিন ক্রাউন কোর্ট।শুক্রবার নাজমুলের দণ্ড ঘোষণা করে আদালত। তাকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার নাম আজীবন যৌন অপরাধীর তালিকায় নিবন্ধিত থাকবে। রায়ে নাজমুলকে নারী ‘শিকারী’ এবং ‘নিষ্ঠুর ও নির্বিকার’ মানসিকতার ‘সিরিয়াল যৌন অপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করেন বিচারক।

নাজমুলের ভাই সেলিমের দণ্ড ঘোষণা করা হবে আগামী ২২ মে। নাজমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বার এবং নাইট ক্লাব ফেরত নারীদের ‘টার্গেট’ করতেন এবং গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করতেন। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের পর ওইসব নারীদের ক্রেডিট কার্ড, অর্থও হাতিয়ে নিতেন।তিনজন নারীর কাছ থেকে একই ধরনের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। অভিযোগকারী তিন নারীরই বয়স ২০ এর কোঠায়। তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যে নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন নাজমুল তাকে তার গাড়িতে তুলেছিলেন রাসেল স্কয়ার থেকে।

ওই নারীর অভিযোগ, গাড়িতে উঠেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। জেগে ওঠার পর বুঝতে পারেন তিনি যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এরপরই তিনি ঘটনা পুলিশকে জানান। নির্যাতিত আরেক তরুণীর অভিযোগ, ২০১৯ সালের ২ মার্চ রাতে টটেনহাম কোর্ট রোড থেকে বেরিয়ে তিনি পরদিন ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একা বেডফোর্ড প্লেসের একটি হোটেলের কক্ষে আবিষ্কার করেন। তিনি আগের রাতের কোনোকিছু মনে করতে পারছিলেন না, নিজের ক্রেডিট কার্ড, ফোনও খুঁজে পাননি। পরে তিনি বুঝতে পারেন ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে তার ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ নাজমুলকে ধর্ষণকারী হিসেবে শনাক্ত করে। এছাড়া নাজমুল তার পার্টনার ডোরা ভাভরোভার সহযোগিতায় ৩ হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও প্রমাণ পায় পুলিশ। এক মাস না গড়াতেই আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটান নাজমুল। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ একই বয়সের আরেক তরুণী সোরডিচের একটি বার থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে নাজমুলের গাড়িতে লিফট নেন।ওই তরুণী গাড়ির সামনে আসনে বসার কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পড়েন এবং জেগে উঠে বুঝতে পারেন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তিনি। নাজমুল তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পর তিনি টের পান তার ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার পরদিনই সিসি টিভির ফুটেজ, ব্যাংকে অনুসন্ধানের তথ্য-প্রমাণ এবং ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে পুলিশ নাজমুলকে গ্রেপ্তার করে। আগের দুইটি ঘটনায়ও তার সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে।পুলিশের তদন্তে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি একই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায় নাজমুলের ভাই সেলিমের বিরুদ্ধে। ওইদিন ২০ বছর বয়সী এক তরুণীকে সেলিম বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে যখন গাড়িতে তোলেন, তখন তার সাথে লেভি ক্রল নামের একজনও ছিলেন।

পরে সেলিম ওই নারীকে যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি তার ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেন। ২০১৯ সালের ১৯ জুন সেলিমকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি উড গ্রিন ক্রাউন কোর্ট ধর্ষণের একটি, নির্যাতনের দুইটি, চুরির একটি, প্রতারণার একটি এবং মুদ্রা পাচারের একটি ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে।একই আদালত জালিয়াতির অভিযোগে নাজমুলের সহযোগী ডোরা ভাভরোভাকে ১৪০ ঘণ্টা সমাজসেবামূলক কাজ করার আদেশ দিয়েছে। আর গত ১২ মার্চ একই আদালত অপহরণ ও যৌন নিপীড়নের দায়ে সেলিমকে দোষী সাব্যস্ত করে। তার সহযোগী লেভ ক্রলকেও অপহরণের দায়ে দোষী ঘোষণা করে আদালত।

দুইজনেরই দণ্ড ঘোষণা হবে আগামী ২২ মে। সূত্র: বিডিনিউজ২৪

You might also like