স্বাধীনতা ঘোষণা করার তুমি কে?


স্বাধীনতা ঘোষণা করার তুমি কে?

লুৎফর রহমান রিটন

তুমি তো চাওনি মুক্ত-স্বাধীন ভূমিকে।
তার স্বাধীনতা ঘোষণা করার তুমি কে??

কে দিলো তোমায় ঘোষণার এই ক্ষমতা?
ছিলো কি তোমার বাংলার প্রতি মমতা?
জাতি জানতো না তোমার নামটা অতীতে
তোমাকে পায়নি দুর্যোগ-দুর্গতিতে।
বরং তোমাকে দেখেছে প্রথম সোয়াতে
পাকিশাসকের নির্দেশে মাথা নোয়াতে।
ইয়াহিয়াদের পক্ষে শক্তি তালাশে
এসেছিলে তুমি অস্ত্রশস্ত্র খালাসে।

কালুরঘাটের বিপ্লবী সেই বেতারে
যা যা ঘটেছিলো মুছে দিতে পারে কে তারে?
তখন মুজিবই নেতা ছিলো একমাত্র
তাঁরই ইশারায় নির্দেশে দিবারাত্র–
বাংলা-বাঙালি ওঠে-বসে, পড়ে ঝাঁপিয়ে
গুলির সামনে শ্লোগানে ভুবন কাঁপিয়ে…

মার্চের সেই সন্ধ্যা, তারিখ সাতাশে–
তোমার কণ্ঠ প্রথম ইথারে-বাতাসে,
ঘোষণাটা তুমি পাঠ করেছিলে–পাঠই তো?
(পুরো বাংলাই ছিলো মুজিবের ঘাঁটি তো!)

ঘোষকে-পাঠকে বিশাল তফাৎ, অর্থে
পাঠক মানছি, ঘোষকের পরিবর্তে।
তুমি মার্চের ‘ছাব্বিশে’ পাঠ করোনি
‘সাতাশে’ করেছো। সাক্ষী আকাশ-ধরনী।

তাই স্বাধীনতা দিবস হয়নি ‘সাতাশে’
‘ছাব্বিশ’ সেটা। ইতিহাসের এক পাতা সে।

‘সাতাশ’ পায়নি ইতিহাসে ঠাঁই। পাবে না।
ইতিহাস নিজে কোনো দল নিয়ে ভাবে না।
ইতিহাস কভু ধারণ করে না মিথ্যে
ইতিহাসে জেনো মিথ্যে পারে না জিত তে।

ইতিহাসে জয় সত্যেরই হয় বুঝলে?
ইতিহাসে তার নজির পাবে গো খুঁজলে।

পঁচিশে মার্চে রাত বারোটার শেষটায়
ছাব্বিশই শুরু হয়েছিলো এই দেশটায়…

পঁচিশে মার্চে পেরিয়ে মধ্য রাত্রি
বাঙালি তখন নতুন দিনের যাত্রী–
নতুন একটা দিনের সূচনা ঘটেছে
টেলিগ্রামে এক নতুন বারতা রটেছে–
‘স্বাধীনতা’ আজ ঘোষণা করেছে মুজিবে
লেখাপড়া করে শিক্ষিত হলে বুঝিবে।

তাই স্বাধীনতা দিবস হয়নি ‘সাতাশে’
ছাব্বিশে মার্চ ধ্বনিত আকাশে বাতাসে…

ইতিহাস, যাকে মুছে ফেলা কভু যায় না
ইতিহাস হলো অবিনাশী এক আয়না।
তেইশ বছরের ইতিহাসে তুমি ছিলে না
কোনো ফুটনোটে, কোথাও তোমাকে মিলে না!

তোমার যেটুকু প্রাপ্য তুমি তা পাইবে
ইতিহাস জেনো সত্যেরই গান গাইবে।

অটোয়া ০৭ মার্চ ২০২১

(লেখক: দুই বাংলার কিংবদন্তী ছড়াকার)

You might also like