প্রবাসী প্রবৃদ্ধি অর্জনে এবছরই বাংলাদেশ হবে বিশ্বসেরা : রাষ্ট্রদূত সারওয়ার মাহমুদ

কবির আল মাহমুদ
সত্যবাণী

মাদ্রিদ,স্পেন থেকেঃ প্রায় ৬০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের খ্যাত কথায় আছে ‘ফিয়েস্তা ও সিয়েস্তার দেশ’ (আনন্দ -উৎসবের দেশ স্পেন)।আনন্দ – উৎসব স্প্যানিশদের চলমান জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। প্রাচীন সভ্যতার চিত্রকর্ম ও সাহিত্য,রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু, সমুদ্রসৈকত এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলোর জন্য পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষ এই দেশে প্রবাসীরা ও বেশ রয়েছেন ভালো অবস্থানে। ইউরোপে বাংলাদেশিদের বসবাসের দিক থেকে স্পেনের অবস্থান দ্বিতীয়। তাই বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার অংশীদার স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে যাওয়ার ফলে স্পেনসহ পুরো ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হয়ে যায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বেঁধে নিয়মের কারণে। প্রায় পুরো ইউরোপে রেমিট্যান্স ব্যবসাটিই হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশিদের। বন্দ হয়ে যায় অনেক বাংলাদেশি রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মূলতঃ রেমিট্যান্স ব্যবসাটি চলে যায় ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম, স্মল ওয়ার্ল্ড ও রিয়ার মত বিশ্বের শীর্ষ ও রাঘব বোয়াল মানি ট্রান্সফার এজেন্সিগুলোর কব্জায়। ফলে কম খরচে দেশে অর্থ প্রেরণের সুযোগ থেকে একদিকে যেমন বঞ্চিত হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা, ঠিক তেমনি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তির পরিমাণও হ্রাস প্রায়। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে প্রবাসীদের কাছে গিয়ে নানা উপায়ে উদ্বুদ্ধ করে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু সংখ্যক হুন্ডি কারবারিরা।আর এ জন্য গত বছর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে টাকা পাঠাতে মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বিভিন্ন সচেতনতামূলক সভা সেমিনার কর্মসূচি পালন করেছে যাচ্ছে। দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহ ও প্রণোদনার উৎসাহ দিতে দিতে চলতি বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে ওয়েজ আর্নারস’ কল্যাণ এর মাধ্যমে সরকারিভাবে প্রবাসীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি স্পেন দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কা ও পদক চালু করা হয়। তার পর পূর্বের ন্যায় রেমিটেন্স প্রেরণের পরিমাণ প্রত্যাশিত অনুপাতে হয়নি।

সম্প্রতি গত রবিবার (১২মার্চ) স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে একটি রেস্তোরাঁর হলরুমে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় এনআরবি ব্যাংক ও বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশীদের ধারা পরিচালিত আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নেক মানি ট্রান্সফার লিমিটেড এর যৌথ উদ্দ্যোগে ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রোনের সুবিধা’ শীর্ষক প্রবাসী ব্যাবসায়ী ও গ্রাহকদের নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ এনডিসি।
রাষ্ট্রদূত সারওয়ার মাহমুদ তার বক্তব্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে প্রবাসীদের অবদান প্রশংসনীয় বলেও মন্তব্য করেন।নেক (এনইসি) মানি ট্রান্সফার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিইও ইকরাম ফরাজী (সিআইপি)র সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মোঃ আবুল বাশার, বক্তব্য দেন এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড এর ডিরেক্টর এস এম আবু মহসিন, মোঃ মইনুদ্দীন, ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ মামদুদুর রশিদ, ইভিপি এন্ড হেড অফ রেমিট্যান্স এনআরবি ডিভিশন মোঃ মাহফুজুর রহমান,বাংলাদেশ দূতাবাস স্পেনের কাউন্সিলর (লেবার উইং) মোহতাসিমুল ইসলাম, বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদার,বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি আল মামুন।

অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে মানি ট্রান্সফার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিইও ইকরাম ফরাজী সিআইপি নিজে একজন প্রবাসী উল্লেখ করে বলেন, প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না সব কিছু আমার জানা। এ জন্য আমাদের সবার নিরলস চেষ্টা,পরিশ্রম, সততা আর ভিন্নধর্মী চিন্তাধারাকে কাজে লাগিয়ে নেক মনি ট্র্যান্সফার স্মার্ট ব্যাংকিং এবং আরো উন্নত সুবিধা নিয়ে ইউরোপে আমাদের নতুন এই যাত্রা হচ্ছে । আমার বিশ্বাস, ইউরোপ জুড়ে রেমিট্যান্স খাতে যে বিপর্যয় তৈরী হয়েছে সেটা কাটিয়ে উঠতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে আপনারা সবাই হবেন আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক প্রতিষ্ঠিত হব।নেক মানি ট্রান্সফার লিমিটেড স্পেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর রবিন মাহমুদ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশ আরো বক্তব্য দেন এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল আমিন মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, এসোসিয়েসন ভালিয়ান্তে বাংলার সভাপতি মোঃ ফজলে এলাহি, সাধারন সম্পাদক রমিজ উদ্দিন,ব্যাবসায়ী মিল্টন ভূইয়া কচি, আব্দুল কাইয়ূম মাসুক, ব্যাবসায়ী একরামুজ্জামান কিরন,কাদের ঢালী, রাসেল দেওয়ান, বদরুল কামালী প্রমুখ। সেমিনারে বাংলাদেশ ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ (নেক)কোম্পানির এজেন্সিবৃন্দ, কমিউনিটির রাজনৈতিক,সামাজিক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের দ্রুত এবং বিস্বস্থ মাধ্যম নেক মনি ট্রান্সফার তাদের কার্যক্রম চমৎকার ভাবে ফিরে আসাকে দেশ এবং প্রবাসীদের জন্য ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, গত সাত-আট বছরে থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রবাসী আয় প্রবৃদ্ধির দিকে যদি তাকাই, সে ক্ষেত্রে কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে। এটা আমাদের বড় একটি শক্তির জায়গা। এ ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কিন্তু পিছিয়ে নেই। তবে আমাদের যা দরকার, সে তুলনায় আমরা এখনো কম পাচ্ছি। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বছরই বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বসেরা হওয়া সম্ভব।র্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় রেমিট্যান্সের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। প্রতিনিয়ত সেবার মান মূল্যায়ন করছি এবং প্রবাসী কল্যাণে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রবাসীর সঙ্গে দূতাবাসের সহজ যোগাযোগ ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট দূতাবাস বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি এসব বাস্তবায়নে প্রবাসীদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি আশাবাদী যে প্রবাসীদের সহযোগিতায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে নেক মনি ট্রান্সফারের স্মার্ট পদক্ষেপ সুফল দেবে।এনসিসি ব্যাংক এর চেয়ারম্যান মোঃ আবুল বাশার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব, প্রবাসীদের অর্থের সঠিক ও নিরাপদ বিনিয়োগ এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ, তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রবাসীদের এনআইডি ব্যাতিত শুধু পাসপোর্ট দিয়ে একাউন্ট ওপেনসহ বেশ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ছাড়াও বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আদান-প্রদান উৎসাহিত করতে নেক মনি ট্র্যান্সফার ও এনসিসি ব্যাংক তাদের রেমিট্যান্স সেবা গ্রহণকারী সব গ্রাহককদের জন্য বিমান টিকেটসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার দেন।

সেমিনারে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সুপারিশ তুলে ধরেন বক্তারা। রাষ্ট্রদূত ও নেক মনি ট্র্যান্সফার এর সাথে সংশ্লিষ্টরা তাদের সমস্যা ও প্রস্তাবসমূহ মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং এ ব্যাপারে দূতাবাস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান। এছাড়া স্পেনে বসবাসরত ৭শ’ প্রবাসীর ই-পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়ার ফলে তাদের বৈধতা অনিশ্চিত পড়েছে উল্লেখ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেন বক্তারা।স্মার্ট ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল পথে প্রবাসীদের আরো উন্নত গ্রাহকসেবা দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে ইউরপে সেবা চালু করতে যাচ্ছে বহিঃবিশ্বে আর্থিক সেবাদানকারী বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান নেক মানি ট্রান্সফার লিমিটেড। বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিস্বস্থ এ মাধ্যমটি ফিরে আসায় আশার আলো দেখছেন প্রবাসীসহ এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য: নেক মানি ট্রান্সফার লিমিটেড বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে প্রবাসীদের অর্থ বৈধভাবে প্রেরণ করে ২০২০ পর্যন্ত টানা সপ্তম সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।

You might also like