কমরেড শ্রীকান্ত দাশের প্রয়াণ দিবসে লন্ডনে স্মরণসভা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন: শ্রীকান্ত দাশ এর ১৪তম প্রয়াণ দিবসে শ্রীকান্ত সংহতি পরিষদ যুক্তরাজ্যের আয়োজনে গত ১৯ নভেম্বর, রবিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক স্মরণ সভা। স্মরণসভায় শ্রীকান্ত দাসের কর্ম ও জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তাঁর সতীর্থরা।
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ‘শ্রীকান্ত সংহতি পরিষদ, যুক্তরাজ্যের অন্যতম উদ্যোক্তা, কমিউনিস্ট পার্টির যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবেদ আলী আবিদ। উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নানা শ্রেণী পেশায় জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।
স্মরণসভার শুরুতে সূচনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রীকান্ত সংহতি পরিষদের অন্যতম সংগঠক সাংবাদিক ও লেখক জুয়েল রাজ।
আলোচনায় অংশ নেন লেবার পার্টি নিউহাম কাউন্সিলের ওয়ালএন্ড ওয়ার্ডের সাবেক চেয়ারপার্সন স্বরূপ শ্যাম চৌধুরী শিবু, যুক্তরাজ্য ফ্রেন্ডস অব ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আ,ক,ম চুন্নু, বাংলাদেশি ওয়াকার্স কাউন্সিল যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি শাহরিয়ার বিন আলী, সাংস্কৃতিক কর্মী ফেরদৌসি লিপি, সাংবাদিক সালেহ আহমদ, সাংবাদিক ও লেখক জুয়েল রাজ, অভিষেক দাশ জিকু ও কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র পুত্র সুশান্ত দাস প্রশান্ত প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট আবেদ আলী বলেন, কমরেড শ্রীকান্ত দাশ শৈশবে নেতাজী সুভাষ বসুর বক্তব্যে উদ্ভুদ্ধ হয়ে সাম্য ও সমাজ ব্যবস্থার সমাজতন্ত্রের রাজনীতিতে আজীবন শিল্পী সংগ্রামী ছিলেন। তিনি গণ মানুষের ভাষা বোঝতেন। গণমানুষের জন্য গণসংগীত গাইতেন, গণসংগীত রচনা করতেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গান ‘কাউয়ায় ধান খাইলো রে খেদানোর মানুষ নাই, খাইবার বেলা আছে মানুষ, কামের বেলা নাই’। তিনি আরও বলেন, কমরেড শ্রীকান্ত দাশ শাল্লা উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা হলেও বিশ্বেজুড়ে নানা শাখার ন্যায় উনার একটা ব্যক্তিগত উদীচীর শাখা ছিল। বিষয়টি এরকম, তাঁর কাঁধে ঝোলানে ব্যাগে উদীচীর ছোট একটি সাইনবোর্ড ও উদীচীর ব্যানার রেখে সময় ও সুযোগ মতো ব্যবহার করে চলন্ত উদীচী বা মোবাইল উদীচীর মতো গণমানুষের চেতনাকে শানিত করতেন তিনি। কমরেড আবেদ আলী আরো বলেন, কমরেড শ্রীকান্ত দাশ একটি আদর্শের প্রতীক। আমরা তাঁর আদর্শকে লালন করে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত যেন বিলিয়ে দিতে পারি, এই উদ্দেশ্যেই শ্রীকান্ত সংহতি পরিষদ এ আয়োজন করে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ হতে নিয়মিত-অনিয়মিত ভাবে শ্রীকান্ত সংহতি পরিষদ যুক্তরাজ্য ‘কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’ স্মরণসভা করে আসছে। কমরেড শ্রীকান্ত দাশ ১৯২৪ সালের ৫জুলাই সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার আঙ্গারুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা যোগেন্দ্র কুমার দাশ ও মাতা জ্ঞানদায়িনী দাশ। ৮ দিন বয়সে শ্রীকান্ত দাস তাঁর মাকে হারান। বাবার কাছ থেকেই মূলত সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে উঠেন। সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন আজীবন সংগ্রামী। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী, অনেক কালজয়ী গানের রচয়িতা ছিলেন তিনি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ- তিন আমলেই শ্রীকান্ত দাশের আঙ্গারুয়ার বাড়িটি ছিল রাজনীতিবিদ, কর্মী ও সংগঠকদের জেল-জুলুম-হুলিয়া থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে যাওয়ার নিরাপদ ভূমি। একটি প্রত্যন্ত ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় জন্ম নিয়ে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে সাম্যবাদী ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে ছিলেন আমৃত্যু। তিনি আজীবন বিপ্লবী হয়ে জীবনের জয়গান গেয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর মৃত্যু হলে তাঁর বলে যাওয়া ইচ্ছে অনুসারে মরদেহ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য দান করা হয়। তিনি হলেন, সিলেটের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত সিলেটের কোনো মেডিকেলে একমাত্র মরণোত্তর দেহদানকারী ব্যক্তি।