লন্ডনে ‘মুক্তি ও স্বাধীনতা নাট্য উৎসব’ শুরু
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ বিজয়ীরা ইতিহাস লেখেন, কিন্তু চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণের সময় কি হয়েছে? ইতিহাসজুড়েই তো বিজয়ীদের পালাবদল।সাধারণ মানুষের অধিকার হরণকারী কর্তৃত্ববাদী, পুঁজিপতি ও ক্ষমতাসীনদের এমন আপ্তবাক্য স্মরণ করিয়ে দেয়ার বার্তা ছড়িয়ে লন্ডনে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বাংলা নাট্য উৎসব ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’। পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আয়োজনে প্রতি বছর নভেম্বর মাসজুড়ে চলে এই উৎসব। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এবারের আয়োজনের নামকরণ করা হয়েছে ‘ফ্রিডম অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট থিয়েটার ফ্যাস্টিভাল’ (মুক্তি ও স্বাধীনতা নাট্য উৎসব)। উৎসবের প্রতিটি আয়োজন সাজানো হয়েছে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সাধারণ মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়।
৫ নভেম্বর শুক্রবার স্থানীয় ব্রাডি আর্ট সেন্টারে উদ্বোধনী পরিবেশনায় যুক্তরাজ্যে সাধারণ মানুষ ও অভিবাসীদের অধিকার আদায়ের নানা সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণনা করে গীতিনাট্যের দল ‘ডেডালাস থিয়েটার কোম্পানি’। ব্রিটিশ রাজা-রাণীর ইতিহাসের বিপরীতে যুক্তরাজ্যে সাধারণ মানুষের সংগ্রামের গল্প তুলে ধরাই এই দলটির কাজ। বাদ্যযন্ত্রের সুরের তালে থেমে থেমে গান আর গল্পে ইতিহাস বর্ণনার এ পরিবেশনা ছিলো অসাধারণ। বিলেতে বাঙালিদের সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির কথাও উঠে এসেছে তাদের কণ্ঠে। এ পরিবেশনার সব কথার মুল কথা- ‘অধিকারের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, বিজয় আসবেই’। উদ্বোধনী এ আয়োজনে বাংলা গান পরিবেশন করেন সাইদা তানি।
বিলেতে বাংলাদেশিদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার বৃহত্তম আয়োজন ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’। প্রতি বছর নভেম্বর মাসজুড়ে চলে এই উৎসব। এবার ৫ নভেম্বর শুরু হওয়া উৎসবে থাকছে মোট ২৪টি পরিবেশনা। চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি গান, গল্প, কবিতা ও আলোচনায় তুলে ধরা হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি নারী ও শরণার্থী মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত উদযাপনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়েছে।করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে সিজন অব বাংলা ড্রামা আয়োজনে ছেদ পড়ে। সে কারণেও এবারের উৎসব ঘিরে আলাদা আগ্রহ সংস্কৃতিপ্রেমীদের।
৭ নভেম্বর ব্রাডি আর্ট সেন্টারে রেস্টলেস বিং মঞ্চায়ন করবে দ্য ফ্রিডম অ্যান্থোলোজিস, ১১ নভেম্বর ব্রিটিশ বাংলাদেশি পয়েট্রি কালেকটিভ পরিবেশন করবে ফ্রিডম অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট: পিপল স্পিক। আয়োজনটি কুইনমেরি ইউনিভার্সিটির আর্টসওয়ান, পিন্টার স্টিুডিও তে অনুষ্ঠিত হবে। ১২ ও ১৩ নভেম্বর একই ভেন্যুতে থাকবে মুকুল অ্যান্ড গেটু টাইগারের পরিবেশনা ‘টু ফাদার এ ন্যাশন’। ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে ব্রাডি আর্ট সেন্টারে মঞ্চ মাতাবে আয়না আর্টসের পরিবেশনা ‘ওরনা’। একই ভেন্যুতে ১৪ নভেম্বর পরিবেশিত হবে পূর্বনাট সিআইসি’র মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘সেক্টর ১২’।
ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেয়া শরণার্থীদের সংগঠন ডাবল বেল কমিউনিটি অব রিফিউজিস ফ্রম ভিয়েতনাম পরিবেশন করবে ‘আওয়ার জার্নি ফ্রম ভিয়েতনাম টু টাওয়ার হ্যামলেটস’। এটি ২০ নভেম্বর ব্রাডি আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। এদিন একই ভেন্যুতে থাকবে আরও একটি পরিবেশনা- রোকেয়া প্রজেক্টের ‘মুক্তি’। একই ভেন্যুতে ২১ নভেম্বর রোববার আর্টস উইথআউট বর্ডার পরিবেশন করেবে ‘আমসিয়া’। ২৬ নভেম্বর শুক্রবার সোমালি কমিউনিটির সংগঠন ‘নামবি আর্টস’ পরিবেশন করবে ‘ফিউচার ০০১ জুরিও’। ২৭ নভেম্বর শনিবার ব্রাডি আর্ট সেন্টারে ‘ম্যাসেজ কালচারাল ফ্রিডম’র পরিবেশনা- ‘সিইজ দ্য ফ্রিডম’। এবারের মৌসুমের সমাপনী আয়োজন হিসেবে থাকবে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ইউকে’র পরিবেশনা ‘হোয়েন ম্যাডোনা ওয়াজ ডায়িং’। এসব মঞ্চ আয়োজনগুলো শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট থেকে। ডোর অপেন সন্ধ্যা ৭টায়।
এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস ও বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরে অনুষ্ঠিত হবে আরও বেশ কয়েকটি আয়োজন। যার মধ্যে আছে- ছান্দসিকের পরিবেশনা ‘জাগরণের পঙ্কক্তিমালা: দ্য স্টোরি অব দ্য লিবারেশন ওয়ার। অনুষ্ঠিত হবে ৬ নভেম্বর শনিবার, কবি নজরুল সেন্টারে। ৭ নভেম্বর রোববার মহিলা অঙ্গণ পরিবেশন করবে ‘সানডে ইজ দ্য শাড়ী ডে’। অনুষ্ঠিত হবে দুপুর ১২টায় ব্রাডি আর্ট সেন্টারে। ৯ নভেম্বর মঙ্গলবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রযোজনায় অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ ওয়ার অব ইন্ডিপেনডেন্স: রোল অব মিডিয়া ইন দ্য ইউকে + প্রেস ফ্রিডম ইন বাংলাদেশ’। এই আলোচনা অনুষ্ঠানটি হবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে কুইনমেরি ইউনিভার্সিটির আর্টসন, পিন্টার স্টুডিওতে। ১৪ নভেম্বর সৌধ সোসাইটি অব পয়েট্রি অ্যান্ড ইন্ডিয়ান মিউজিক পরিবেশন করবে ‘দ্য রেভেল অ্যান্ড দি ওয়েইস্ট ল্যান্ড’। অনুষ্ঠিত হবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রিচ মিক্স সেন্টারে।
স্বাধীনতা ট্রাস্টের উদ্যোগে বেঙ্গলি হিস্টোরি ওয়াক অনুষ্ঠিত হবে ১৭ নভেম্বর বুধবার, দুপুর ২টায় আলতাব আলী পার্ক থেকে। ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ব্রাডি আর্ট সেন্টারে আর্টস উইথআউট বর্ডার পরিবেশন করবে ‘ফ্রম ক্যাবল স্ট্রীট টু ব্রিক লেইন’। একই সংগঠনের প্রযোজনায় ১৯ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পরিবেশিত হবে ‘অ্যা ভেরি ব্রিটিশ হিস্টোরি: ব্রিটিশ-বাংলাদেশি’। বাংলাদেশ উদীসী শিল্প গোষ্ঠী ইউকে সংসদের পরিবেশনা ‘স্টোরি অব ইন্ডিপেনডেন্স’ থাকবে ১৯ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায়। স্থান- অক্সফোর্ড হাউজ।
এছাড়া ২০ নভেম্বর শনিবার কবি নজরুল সেন্টারে থাকবে ‘মিসট্রোস অব বেঙ্গল অ্যান্ড দি সংস অব ফ্রিডম’। সুরবন্ধনের এ আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে সন্ধ্যা ৭টায় কবি নজরুল সেন্টারে। আর্টস উইথআউট বর্ডারের আরেকটি পরিবেশনা থাকবে ২১ নভেম্বর, রোববার। ‘ইউজ ইউর ব্রেইন’ শীর্ষক এই পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে দুপুর ২টায় জুম লিঙ্কে অনলাইনে। ২৪ নভেম্বর জেনেসিস সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে ‘দ্য উইন্ডস দ্যাট শেইক্স দ্য বার্লি’। চলবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা ৩০ পর্যন্ত।
মঞ্চ মাতানো এসব আয়োজনের পাশাপাশি ব্রাডি আর্ট সেন্টারে চলছে মাসব্যাপী চিত্র প্রদর্শণী। এতে স্থান পেয়েছে আহমেদ চৌধুরীর ‘বিজয় ৭১’ এবং সুদ্বীপ চক্রবর্তী ও শামীম হোসাইনের ‘কালার্স অব বেঙ্গল’,শীর্ষক চিত্রকর্ম।