স্মরণ: পীর হবিবুর রহমান,আমি যার রাজনীতির প্রোডাক্ট
সৈয়দ আনাস পাশা
উপমহাদেশের ত্রি-কালদর্শী রাজনীতিক ও প্রগতিশীল রাজনীতির পুরোধা জননেতা পীর হবিবুর রহমানের চতুর্দশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৬ই ফেব্রুয়ারী)।২০০৪ সালের এই দিনে ভাষার মাসে ভাষা সৈনিক এই মজলুম জননেতা এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। শোষিত মানুষের বটবৃক্ষসম আশ্রয়স্থল প্রয়াত এই নেতার রাজনীতির সাথে বর্তমান প্রজন্ম কতটুকু পরিচিত এমন প্রশ্নের অবকাশ থাকলেও,স্বপ্নবাজ এই রাজনীতিকের দেশপ্রেম, সততা ও শোষিত মানুষের স্বার্থের পক্ষে তাঁর আপোষহীন ভূমিকা নিয়ে দলমত নির্বিশেষে কোনকালেই কারো কোন প্রশ্ন বা সন্দেহ ছিলোনা, এখনও নেই। আর তাইতো সাম্প্রতিক সময়ে প্রয়াত এই নেতার এক সময়ের অনুসারী কেউ কেউ ক্ষমতা সীমানায় থাকতে বা ঢুকতে নিজেদের অতীত রাজনৈতিক পরিচয় যখন আড়ালে রাখতে চান, তখনও আমার মত অনেক ক্ষুদ্র কর্মী বুক ফুলিয়ে গর্বের সাথে বলতে পারি ‘আমি পীর হবিবুর রহমানের রাজনীতির প্রোডাক্ট’।তাঁর রাজনীতির স্বার্থকতা এখানেই। প্রয়াত এই নেতার স্নেহস্পর্শ আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের অর্জনগুলোর অন্যতম বড় একটি অর্জন বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমার ধারণা রাজনীতির ভেতরে ও বাইরে এখনও আমার মত এমন আরও অনেকেই আছেন যারা নিজেদের জীবন খাতার কোন না কোন অংশ ঠিক এমনিভাবেই পীর হবিবুর রহমানের নামে চিহ্নিত করে রেখেছেন।যে সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখাতেন প্রয়াত এই নেতা, সেই সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তারুণ্যের পুরো সময়টিই রাজপথে ছিলাম। এসময় পেয়েছি তাঁর সান্নিধ্য, যা আমার মত একজন মানুষের চরম পাওয়া। বারবার স্বপ্নভঙ্গ হলেও একটি সুখী, সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক শোষনহীন সমাজের স্বপ্ন আজীবন দেখে গেছেন স্বপ্নবাজ এই রাজনীতিক।তাঁর এই স্বপ্ন দেখায় সহযাত্রী ছিলাম আমরাও।
রাজনীতির দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ক্ষমতার স্বাদ না পেলেও শোষিত মেহনতি মানুষের হৃদয়ের মনিকোটায় পীর হবিবুর রহমানের অবস্থান সব সময়। মজলুম এই জননেতার সংস্পর্শের স্মৃতি রুমন্থন করে তাঁর এলাকার প্রবীনরা এখনও আপ্লুত হন। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে প্রয়াত এই জননেতার এক প্রবীন অনুসারী জনৈক এক জনপ্রতিনিধির কাছে পীর হবিবুর রহমানের নামে কোন একটি স্থাপনার নামকরনের অনুরোধ জানালে, ঐ প্রতিনিধি ‘কোন পীর হবিবুর রহমান’ বলে পাল্টা প্রশ্ন করায় প্রকাশ্য জনসমাবেশে ঐ প্রবীন ব্যক্তি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। বলেছিলেন, ‘পীর হবিবুর রহমানকে চিনোনা আর রাজনীতি করতে এসেছো তাঁর এলাকায়?’। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে এই হলো প্রয়াত পীর সাহেবের অবস্থান।পাকিস্তানী শাসনামল ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।২০১৬ সালে তাঁর জীবন ও কর্মের উপর একটি প্রামান্য চিত্র তৈরী করেছিলাম আমরা। প্রামান্য চিত্রটির স্ক্রীপ্ট ও নামকরনের দায়িত্ব ছিলো আমার উপর। অনেক ভেবে চিন্তে প্রামান্য চিত্রটির নাম দিয়েছিলাম ‘রাজনীতির শুদ্ধ পুরুষ’।
১৯৮৬ সালে ঢাকার রমনাগ্রীণে দুই ন্যাপ ও একতা পার্টির ঐক্য সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পীর হবিবুর রহমান।
আসলেই পীর হবিবুর রহমান ছিলেন রাজনীতির এক আপাদমস্তক শুদ্ধ পুরুষ।পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে পূর্ববঙ্গে এবং বাংলাদেশ আমলে যত গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে সবগুলোর সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন সংগঠক হিসেবে, ছিলেন নেতৃত্বের ভূমিকায়। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি পীর হবিবের।পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শরিক অনেক যুবকের মতো তার মতাদর্শেও ঘটে পরিবর্তন।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ বলয় থেকে বেড়িয়ে এসে আত্মগোপনকারী কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের সান্নিধ্যে সমাজতন্ত্রের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হন তিনি। ৪৮ সালেই যোগ দেন কমিউনিষ্ট প্রভাবিত ইয়ুথ লীগে।১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন পীর হবিবুর রহমান। সিলেটে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। ১৯৫৬ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ‘সিলেটের গান্ধী’ খ্যাত এই নেতা।৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বামপন্থি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করলে পীর হবিব এই সংগঠনের প্রথম সারির নেতা নির্বাচিত হন।৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ত্রি-কালদর্শী এই রাজনীতিক ছিলেন অন্যতম শীর্ষ সংগঠকের ভূমিকায়।পাকিস্তান সৃষ্টির পরের বছর ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার বিরোদ্ধে চক্রান্ত শুরু হলে প্রান্তিক জেলা সিলেটে পীর হবিবুর রহমানই প্রথম বাংলা ভাষার পক্ষে কর্মসূচী নিয়ে জন সমক্ষে হাজির হন।
১৯৬২ সালে পার্টি কর্মী ও আত্মীয় বশির আহমেদের কাছে লেখা ঢাকা জেলে বন্দী পীর হবিবুর রহমানের চিঠি
পাকিস্তানের প্রথম অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন পীর হবিবুর রহমান। ১৯৫২ সালে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পূর্বে ৫১ সালের ১৬ নভেম্বর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে মোনাজাতের মাধ্যমে এই সংগঠনের জন্ম দেয়া হয়।মাওলানা ভাসানী, কমরেড মনিসিংহ ও অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদসহ উপমহাদেশের কিংবদন্তী বাম রাজনীতিকদের সহযোদ্ধা পীর হবিবুর রহমান ঘনিষ্ট ছিলেন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথেও। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর পরিচয় সেই ৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালিন সময় থেকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করতে তিনি বারবার ছুটে গিয়েছেন ৩২ নাম্বারে। দেশের ভবিষ্যত প্রশ্নে শলাপরামর্শে একান্তে অনেক সময় কেটেছে ভিন্ন দলের কর্ণধার এই দুই নেতার। ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন শুভাকাঙ্কি হিসেবে তাঁর নিরাপত্বা নিয়ে সদা উদ্বিগ্ন থাকতেন প্রয়াত এই নেতা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে প্রায়ই তিনি চিঠি লিখতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। মানুষের ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি নিজের নিরাপত্বা নিয়েও সচেতন থাকার পরামর্শ দিতেন তিনি তাঁর ‘ভাতিজি’ শেখ হাসিনাকে।বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে শেখ হাসিনাকে ‘ভাতিজি’ হিসেবেই সম্বোধন করতেন জাতীর জনকের সাথে ঘনিষ্ট প্রবীন এই নেতা।১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী মোর্চা ডেমোক্রেটিক একশন গ্রুপ(ডাক) গঠনে পীর হবিবুর রহমানের ছিলো অগ্রণী ভূমিকা।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগঠনে জননেতা পীর হবিবুর রহমান ছিলেন অন্যতম শীর্ষ সংগঠক। শোষণ, বঞ্চনা, ধর্মের নামে ভন্ডামী ও সাম্প্রদায়িকতাকে মনে প্রাণে ঘৃনা করতেন তিনি।মাতৃভূমি ও দেশের মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনাই ছিলো তাঁর জীবনের ব্রত। পাকিস্তানী অন্ধকার যুগে প্রগতিশীল রাজনীতির ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তী পুরুষ।পাকিস্তান পরবর্তী সময়ে এতদঞ্চলে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতির গোড়াপত্তনে এবং মুসলিম লীগ শাসক গোষ্ঠির ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপরীতে হাতেগোনা যেকজন যুবক অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঝান্ডা উর্ধ্বে তুলে ধরেন পীর হবিবুর রহমান ছিলেন তাদের অন্যতম। একারনে জীবনের একটি বড় সময় তাঁকে কাটাতে হয়েছে কারাগারে। ১৯৫০ সালে কলকাতা, বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা শেষে সিলেটেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধার উপক্রম হলে দাঙ্গা প্রতিরোধে পীর হবিবুর রহমান যে উদ্যোগ নেন ভারত-পাকিস্তান দুদেশের রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায়ে তা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। দুই দেশের সংখ্যালঘু মন্ত্রী সি সি বিশ্বাস ও ডা: মালিক যৌথভাবে সিলেট সফর করে মন্তব্য করেন, ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে সিলেট ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে’।ধর্মীয় পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র হয়েও পীর হবিব ছিলেন ধর্মীয় গোড়ামীর উর্ধ্বে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিশুদ্ধ এই জননেতা সততা, নৈতিকতা, তীব্র পরিমিতিজ্ঞান এবং রুচি ও শালীনতা চর্চার দিক থেকে ছিলেন একজন আপাদমস্তক শুদ্ধ রাজনীতিবিদ।অহংবোধ, আত্মপ্রচার, লোভ ও স্বার্থসিদ্ধি, সাধারণ মানুষের প্রতি মমতাহীনতা-এসব থেকে মুক্ত থাকার সাধণা আমৃত্যু করে গেছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই জননেতা। তাঁর সততা, যাপিত জীবন, ঋজু ব্যক্তিত্ব, সংখ্যাগরিষ্ট অবহেলিত গরিব জনগোষ্ঠির প্রতি মমত্ববোধ আমাদের রাজনীতিতে তাঁকে এক ‘অপাপবিদ্ধ’ ক্ষনজন্মা পুরুষ হিসেবেই পরিচিতি এনে দেয়।
১৯৮৮ সালে সিলেটে পার্টির যুব সংগঠনের সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। মঞ্চে পীর হবিবুর রহমান, ড. সেলিম জাহাঙ্গীর, সুবল চন্দ্র পাল, রুহুল কুদ্দুস বাবুল ও মজনুর রহমান।
নিজেকে সাধারণ মানুষের একজন হিসেবেই বিবেচনা করতেন এই কিংবদন্তী রাজনীতিক। দেশের সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্টির পোষাক লুঙ্গি পড়েই তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ১৯৪৬ সালে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর লুঙ্গি পড়ে ক্লাস করতে গেলে প্রিন্সিপাল কর্তৃক তিরস্কৃত হন তরুণ এই রাজনৈতিক কর্মী। লুঙ্গি পরিধানে কলেজ কর্তৃপক্ষের এই আপত্তি দেশের সংখ্যাগরিষ্ট গরীব জনগোষ্ঠির প্রতি অপমান হিসেবেই ধরে নেন তিনি। লুঙ্গি পড়েই ক্লাস করবেন শেষ পর্যন্ত তার এই জেদই জয়ী হয়। রাজনীতিতে নেতা নয়, কর্মী থাকতেই পছন্দ করতেন পীর হবিবুর রহমান। সভা সমাবেশে তাঁকে সভাপতি মনোনীত করলেও আসন গ্রহন না করে সাধারণ কর্মীদের সারিতে বসতে পছন্দ করতেন তিনি। সৎ রাজনীতিকদের ক্ষমতারোহন চাইলেও নিজে থাকতে চাইতেন এর নাগালের বাইরে। ৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সিলেটের একটি আসনের উপনির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থি হিসেবে মনোনীত করলে নির্বাচন করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। পার্টি তার আপত্তি না শোনায় নমিনেশন পেপারে স্বাক্ষর না করেই আত্মগোপনে চলে যান ক্ষমতার প্রতি নিরাসক্ত পীর হবিবুর রহমান। পরে স্বাক্ষর নকল করে পার্টি সহকর্মী কমরেড আসদ্দর আলী ঐ নির্বাচনে তার নমিনেশন দাখিল করলে বিপুল ভোটে পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এমপি হিসেবে লুঙ্গি পড়ে ঐসময় পার্লামেন্টে ঢুকতে গেলে রীতি নেই বলে তাঁকে নিষেধ করা হলে ক্ষুব্ধ পীর হবিবুর রহমান সাফ জানিয়ে দেন লুঙ্গি পড়ে ঢুকতে না দিলে শপথ নেবেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত লুঙ্গি পড়েই ঢুকার অনুমতি দিলে তখনকার সংবাদ পত্রের শিরোনাম হয় ‘লুঙ্গি পরিহিত এমপি’র শপথ গ্রহন’।৭৬ বছর বয়সে ২০০৪ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী ভাষার মাসে জীবনাবসান ঘটে ভাষা সৈনিক এই কিংবদন্তী রাজনীতিকের। সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তির চরম আস্ফালন, রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অবস্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তির চরম বিভক্তিতে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে জীবনের শেষ কয়েক বছর নিজের গ্রামের বাড়ীতেই নিরবে নিভৃতে সময় কাটাচ্ছিলেন রাজধানীতে ঘরবাড়ীহীন অভিমানী এই জাতীয় নেতা। গণতন্ত্রী পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণাও দেন ঐসময় তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শোকের ছায়া নেমেছিলো, সেই শোক একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাতীয় নেতা হিসেবে আবারও দেশে-বিদেশে তুলে ধরে তাঁর ইতিবাচক ভাবমূর্তি। ঐসময় লন্ডনে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপিরাও সমবেত হন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।প্রয়াত পীর হবিবুর রহমানের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বিগত যুগের এই রাজনৈতিক আলেখ্য শিক্ষনীয় ও প্রেরণার উৎস হলে জাতী হিসেবে আমরা লাভবান হবো, সার্থক হবে পীর হবিবের আজীবনের শ্রম সাধণাও।বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর মত রাজনীতিক যত বেশি তৈরী হবে, রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনও হবে তত দ্রুত।এমনটি হলে ‘পীর’ বংশে জন্ম নিয়েও ধর্মান্ধতা ও কুপমন্ডুকতা বিরোধী সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠা এই নেতা হয়তো-বা অলক্ষ্যে থেকেই তখন আনন্দিত হবেন, হবেন উদ্দীপ্ত।
লেখক: পীর হবিবুর রহমানের স্নেহধন্য, সত্যবাণী’র প্রধান সম্পাদক)
ভিডিও: ১৯৯৫ সালে লেখকের প্রথম ব্রিটেন আগমনের প্রাক্ষালে তাঁর সুহৃদ-সুজনদের উদ্যোগে সিলেটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন পীর হবিবুর রহমান)