‘আমার ব্র্যাক-জীবন’ গ্রন্থ পাঠ: একটি তীর্যক অনুসন্ধান

 হামিদ মোহাম্মদ 

বিশ্বনন্দিত মানবোন্নয়নে নিরন্তর গবেষণা কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত ব্যক্তিত্বদের সাথে কাজকরা,জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় বিশিষ্টজনের সাথে ভাববিনিময়ে যুক্ত ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী একজন উজ্জ্বল বাঙালি। তাঁর লেখা ‘আমার ব্রাক-জীবন’ গ্রন্থখানা অপার বিস্ময়ে পড়লাম। আমাকে প্রায় দুমাস আগে বইটি হাতে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কৃতীমান ব্যক্তিত্ব বর্তমানে লন্ডনে প্রবাসী মুহম্মদ আবদুর রাকীব। যিনি ১৯৬৭ সালে ৮০১ নম্বার পেয়ে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে এসএসসি পরীক্ষায় রেকর্ড সৃষ্টি করে সেরা ছাত্রের সম্মান অর্জন ও স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে অসংখ্য গল্প অনেকটা মিথ হয়ে পরবর্তী সময়ে আমাদের মত কিশোর বয়েসী শিক্ষার্থীর কাছে ছিল স্বপ্নরঞ্জিত মুর্তিমান এক প্রতীক। তিনি বইটি হাতে দিয়ে পড়ে মতামত দিতে অনুপ্রাণিত করে বলেছিলেন–বইটি সম্পর্কে আমার কৌতুহল রয়েছে।

এতো বড় মাপের মানুষের লেখা বই নিয়ে আমার কোন মতামত দেয়া দৃষ্টতাই বলতে হয়। বিশেষত আমি এরকম কোন ব্যক্তিত্বের জ্ঞানসমৃদ্ধ বিরল সৃষ্টি নিয়ে লেখার যোগ্যতাই রাখি না। বইটি বাসায় এনে সেলফে ফেলে রেখে দিয়েছিলাম, উচ্চচিন্তাসমৃদ্ধ এ রকম বিরল গ্রন্থ পড়ার অনেকটা সাহস করতে না-পারার মানসিকতা থেকে। কিন্তু রাকীব ভাই নির্ভয় দিয়ে একটি স্বপ্ন ছড়িয়ে দিলেন আমার থমকে থাকা মনে। বললাম, আসলেই কোন শক্তি পাচ্ছিনা–কী করে লিখি, কি লিখি। বললেন, ‘আপনার উপলদ্ধিটা লিখেন, খোলামনে আপনার ভিন্নমত থাকলেও লিখবেন দ্বিধাহীনভাবে, আপত্তি নেই।

মাঝে কিছুটা কৌতুহল বশত কয়েক পৃষ্ঠা পড়া হয়েছে। এমন ঘোরধরা তাত্তি¡ক বিশ্লেষণ আমাকে বিস্ময়ে ঘর্মাক্ত,আনন্দে আপ্লুত করে নড়তে দেয়নি। তবে এ সপ্তাহে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে বইটি এক নি:শ্বাসে পড়ে নিলাম। আসলে কোন ভাল বই পড়ার জন্যও অফুরন্ত মানসিক শক্তি দরকার। পড়ার পর কত প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে, এসব শতসহস্র প্রশ্ন ঝড়ের বেগে  কোন এক জ্ঞান-দানব  যেন আমাকে লÐভÐ করে দিয়ে গেল।

আমরা বিশ্বে মানব বিবর্তনের নানা ক্রান্তিকাল পেরিয়ে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে আছি রহস্যময় প্রান্তরে। দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বসভ্যতাকে চুরমার, ধ্বংসলীলায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর অন্য এক প্রজাতিতে রূপান্তরিত করে আজকের বাস্তবতায় উত্তর খুঁজে নিতে শিক্ষা দিয়েছে। মানব সভ্যতা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে খুঁজে পেয়েছে বাঁচার বিকল্প নেই। তাই, বাঁচতে হলে যুদ্ধ অপরিহার্য নয়, বন্ধুত্বই প্রধান চালিকাশক্তি, মানবতাই একমাত্র ধ্যান। সে জন্য মানবপ্রেমে দীক্ষিত হওয়ার বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে মানুষে মানুষে। ‘মানবকল্যাণ’ই হয়ে উঠলো বারুদের লেলিহান, যুদ্ধের বিপরীতে অন্যতম ভালোবাসার হাতিয়ার।

একদিকে, সমাজতন্ত্র, অন্যদিকে পুঁজিবাদ। এ যেন পরিবর্তনের হাওয়ায় এক মতবাদ রুখতে এলো আরেক মতবাদ। শোষণমুক্তির লড়াই বিশ্বকে বদলে দিল। সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ হয়ে উঠলো মুক্তির জয়তিলক। মানবকল্যাণের প্রতিযোগিতার আদল একেক মতবাদের একেক ধরণ বা রূপ নিয়ে মানুষের মুক্তি লড়াইয়ে যুক্ত হয়।

আমরা দেখলাম, গত শতকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত অসংখ্য জ্ঞান বিজ্ঞানের উত্থান, বাঁচার লড়াইয়ের লড়াই। পুঁজিবাদী বিশ্বে জন্ম নিলো বিভিন্ন কল্যাণমুখী ফাউন্ডেশন, ট্রাস্ট। উদ্ধৃত সম্পদ নিপীড়িত ভাগ্যাহত মানুষকে বিলিয়ে দেয়ার আকাক্সক্ষার বিকাশ, প্রতিফলন। এমনি একটি সংগঠন বা সংস্থা ‘ব্র্যাক-বাংলাদেশ’। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধোবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তোলার একটি স্বপনযাত্রা। কাণ্ডারি ফজলে হাসান আবেদ, বিলাতে অধ্যয়ন সমাপ্ত-করা এক স্বপ্নবান যুবক। দারিদ্রপীড়িত প্রত্যন্ত অঞ্চল, হাওরবেষ্ঠিত শাল্লার বন্যা আর জীবনবাজিরাখা হাবুডুবু খাওয়া মানুষজনের পাশে দাঁড়ানোর সাহস নিয়ে এলেন তিনি। মানব কল্যাণের যুদ্ধ যে গোলাবারুদের যুদ্ধের চেয়ে কঠিন, সে বিষয়টি এই যুবকের এতদিনে জানা ছিল না। এই না-জানা যুদ্ধে শক্তি যুগিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয়ফ্রণ্টখ্যাত বিলাতের কাজ। তথা, আর্ন্তজাতিক জনমত আদায়ের লড়াইয়ের শক্তি, প্রণোদিত করেছিল  সেই তেজ, উদ্দীপনা এবং স্বাধীনতার সাধ। দেশগড়ার নতুন যুদ্ধে অনভিজ্ঞ এক যুবকের জেদ চাপলো– ‘যেসব মানুষ যুদ্ধে মরেনি, সেসব মানুষ মরবে কেন?’–সামান্য খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান আর বস্ত্রের অভাবে। এটা তো তার মৌলিক অধিকার। একমাত্র ঐক্য ও শিক্ষাই দিতে পারে এর নিশ্চয়তা। এটা আর এমন কি?

আমরা জানি, বাংলাদেশে তথা ব্রিটিশ উপনিবেশকালের ছিয়াত্তর ও  ছেচল্লিশের দুর্ভিক্ষÑমানুষ খাদ্যের অভাবে মরা। দেখেছি একাত্তরের পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে চুয়াত্তরে খাদ্যের অভাবে মানুষ কী ভয়ানকভাবে জীবনযুদ্ধে হেরে গিয়ে ধুকে ধুকে মরতে থাকে। নোবেলজয়ী অর্মত্য সেনের হৃদয় কেঁদে উঠলো এসব মানুষের হেরে যাওয়া দেখে। তত্ত¡-উপাত্ত খুঁজে খুঁজে প্রমাণ করলেন, প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক সরকার যদি কোন দেশে বিদ্যমান থাকে এবং বৈশ্বয়িক সহযোগিতা যদি সঠিকভাবে ক্রিয়াশীল হয়, তবে সেখানে দুর্ভিক্ষ হতে পারে না।অর্থাৎ কল্যাণমূলক সরকারব্যবস্থা ও সম্পদের সঠিক বন্টন থাকলে দুর্ভিক্ষ হওয়ার কোন কারণ নেই। মানুষ দারিদ্রতা থেকে নিজেকে টেনে তুলবেই নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে, ক্ষমতায়ন দিয়ে। শুধু সচেতন করে দিতে হবে তার অধিকার সম্পর্কে।

ফজলে  হাসান আবেদ মানুষের এই অধিকার  ও তার দুর্বলতার দিকটি চিহ্নিত করেই নামলেন কাজে। ব্র্যাক গঠন করলেন। এই ব্র্যাকের উন্নয়নকর্মী হিসাবে ১৯৭৭ সালে যোগদান করেন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। প্রথমেই ছুটে যেতে হয় সুনামগঞ্জের দূর্গম এলাকার শাল্লার একটি গ্রামে। সেখানেই সংস্থার প্রথম প্রজেক্ট, সেটিতে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বা হাওরাঞ্চলের গ্রাম সম্পর্কে ধারণা ও অভিজ্ঞতাহীন মোশতাক রাজা চৌধুরী। সেখানে গিয়ে হতাশ হলেন না, কিন্তু অবাক হলেন বৈকি। এক্কেবারেই কোন কিছু জানাশোনা নেই। পরিচিত হওয়ার মত মানুষই নেই। শুধু কতকগুলো হত দরিদ্র পরিবার, যাদের নিয়ে কাজ। এখানে আসার আগে ছিল নতুন কিছু করার একটি প্রবল উত্তজনা, নতুন  চাকরির উন্মাদনাও। দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে মনোবল যা থাকে অবশিষ্ট,তা-ই এখন শক্তি। ক্লান্তিতে নতুন কিছু করার আগের উত্তেজনা না থাকলেও ইচ্ছাটা মরেনি।

এই না-মরা ইচ্ছা নিয়ে ব্র্যাক জীবন শুরু মোশতাক রাজার। ‘আমার ব্র্যাক জীবন’ গ্রন্থে সে ইচ্ছার প্রতিফলন এবং দীর্ঘদিন ব্র্যাক নামক প্রতিষ্ঠানে একাগ্রভাবে কাজ করা ও তার গবেষণা নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বর্ণনায়  তত্ত্বউপাত্ত সম্পর্কে বিস্তারিত  লিখেছেন  লেখক। কৌতুহল উদ্দীপক নানা বিষয় ও চার দশকের ব্র্যাকের উত্থান উঠে এসেছে গ্রন্থে। ব্র্যাক মানবোন্নয়নে কাজ করলেও এর অন্তরালে ছিল ঋণ সহায়তার নামে সুদের ব্যবসা। সব কিছু ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যবসাই যে মূল কর্মযজ্ঞ সেটি বলেননি লেখক। পুরো বই পড়ে পাঠক পরিচিত হবেন মানবসম্পদ নিয়ে কথাবার্তার সাথে।

বই পড়ে দেখা গেছে, শাল্লা, মার্কুলি,কুমিল্লা ও মানিকগঞ্জে যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে সংস্থাটি,সবটিই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ,স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, যা সৃজনশীল সমাজ তৈরীর নানা কর্মকাণ্ড

এক সময় তথা সত্তরের দশকে ছিল জনসংখ্যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা। এতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা বা রাখাই ছিল স্থানীয় পর্যায় থেকে বৈশ্বয়িক পর্যায় পর্যন্ত এক যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে জনসংখ্যার ভারে বিশ্বের কোন কোন অঞ্চল ছিল অসহায়। আবার কোন কোন অঞ্চল ছিল শ্রমসংকটে কাতর। যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউরোপে জনসংখ্যার ঘাটতি যেখানে সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মুখে পড়ে ছিল, সেখানে এশিয়া জনসংখ্যার ভারে দরিদ্রতায় পিষ্ঠ হচ্ছিল। এজন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার তাগিদ ছিল এশিয়ার দেশগুলোতে। এই কর্মযজ্ঞে ব্র্যাক বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব হ্রাস করার কর্মসূচীর সহযোগী হয়ে কাজ ও গবেষণায় উদ্যোগী হয়। আহমদ মোশতাক রাজা জনসংখ্যার এ সূচক নিয়ে গবেষণা করতে সুদূর বিলাতের স্কুল অব ইকনমিকসে উচ্চাশিক্ষা নেন। কিন্ত বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় জনসংখ্যা আর বোঝা নয়, সম্পদ। দেখা গেছে, সত্তরের দশকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে জাপান ও কোরিয়ার মত দেশ নতুন এক বিপন্নতার মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের ফলে জাপানে বয়স্ক জনসম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৬০%। এর বিপরীতে য্বু সম্পদায় দাঁড়িয়েছে ৪০%ভাগে। এতে উৎপাদনশীল জনসম্পদের ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে,বাংলাদেশে বয়স্ক ও যুব সমাজের লোকের অনুপাতে বয়স্ক লোক ৪০% এবং যুব সম্প্রদায় ৬০% ভাগ। এবং স্বাধীনতার পর পর জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল সাড়ে সাত কোটি, কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী চলমান থাকা স্বত্বেও বর্তমানে ২০২৩ সালে এসে মোট জনসংখ্যা সরকারি হিসাবমতে সাড়ে ১৬ কোটি। বেসকারি হিসাবে সাড়ে ১৮ কোটি। জনসংখ্যার এতো বড় আকার দেশ বহন করতে সক্ষম কিভাবে হল? হয়েছে দেশে একমাত্র কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈশ্বয়িক পর্যায়ে শ্রমসম্পদ রফতানিতে  যুক্ত হয়ে পড়ার জন্য। জনসংখ্যা এখন আর বিপদ নয়, সম্পদ। এই জনসম্পদ রফতানি বাংলাদেশকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সোনালি যুগে প্রবেশ করিয়েছে।

সুতরাং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্র্যাক যে গবেষণা ও  গবেষণালদ্ধ জ্ঞান থেকে কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজ করে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা প্রশ্নাতীত নয়।

জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্র্যাকের গবেষণা ‘ওরসেলাইন প্রস্তুত করার তথা ‘ওটেপ’ কর্মসূচী বাস্তবায়ন ছিল যুগান্তকারি চ্যালেঞ্জ। মূলত স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী খাদ্যগ্রহণ এবং এ থেকে ‘কলেরা’ নামক জীবনবিধ্বংসী রোগের প্রার্দুভাবে জনমৃত্যুহার ছিল অস্বভাবিক পর্যায়ে। এই জায়গাটিতে ব্র্যাক ওরসেলাইন কর্মসূচীতে ব্যাপক জনগণকে সম্পৃক্ত করার সাফল্য ছিল কল্পাতীত অর্জন। বর্তমানে মারাত্বক মানবসম্পদ হরণকরা এ সংক্রামক রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা বা নির্মূল করার সাফল্যের পেছনে ব্র্যাকই অন্যতম প্রতিষ্ঠান। সরকারের সহযোগী হয়ে এ কাজটি সম্পন্ন করে বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ‘এক চিমটি লবণ ও এক মুঠো গুড়’ ব্র্যাকের উদ্ভাবিত ওরসেলাইনের এই ফর্মূলা ছিল বিস্ময়কর। একে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ‘গণস্বাস্থ্য’ নামক প্রতিষ্ঠান, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ওরসেলাইন স্বপ্লমূল্যে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে।

এছাড়া কৃষি উৎপাদনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উদ্ধুদ্ধ করা, বীজ বিতরণ ও আর্থিক ঋণ কর্মসূচী ব্র্যাকের একটি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচী।  বাংলাদেশে কৃষিখাতের যে উন্নতি হয়েছে, সেটি ব্র্যাকসহ গ্রামীণ ব্যাংক ও অন্যান্য এনজিওর ভূমিকা ছিল সরকারের নানা উদ্যোগের সাথে সমন্বিত কর্মপ্রয়াস।  বেকার হতদরিদ্র পরিবারের যুব ও নারী সম্প্রদায়কে কুটির শিল্পে যুক্ত করা এবং উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখানোর সুযোগ সৃষ্টিতে ব্র্যাকের অনন্য সাফল্য চোখে পড়ার মত।  ‘আড়ং’ নামক ব্যবসার পেছনের কর্মীরা কিন্তু বসে থাকা বেকার নারী সমাজ। তাদের সুচীকর্ম বাজারজাত করে ‘আড়ং’ বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। প্রক্রিয়াটির উদ্ভাবক শক্তিও ব্র্যাক। এই প্রচেষ্টা জীবনমান উন্নয়নে হতদরিদ্র শ্রেণীকে প্রভাবিত করছে বিস্ময়করভাবে। স্বাবলম্বী হওয়ার মন্ত্র ব্র্যাকই প্রদান করে কর্মহীন নারী সমাজে।

কিন্তু জনসংখ্যা যখন জনসম্পদে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে তখন আর ব্র্যাক বা কোন এনজিও সংগঠনই যে উপযোগী নয়, এটার উদাহরণ দিয়েছেন লেখক। তিনি লিখেছেন, কয়েক বছর আগে এক বিধ্বংসী সুনামিতে আক্রান্ত হয়ে শ্রীলংকা ও থাইল্যাণ্ডের উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডণ্ড হয়ে পড়ে। ব্র্যাক সেখানে আক্রান্ত অঞ্চলে কাজের সিদ্ধান্ত নেয়। লেখকের দ্বিমত স্বত্বেও সংস্থা সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলংকায় কাজ করতে যাবে। সুনামী আক্রান্ত মানবসম্পদকে রক্ষা ও ক্ষতবিক্ষত অঞ্চলটিকে গড়ে তোলার কাজে সহায়তা ঠিকই দেয়া হয় কিন্তু কিছুদিনের মাথায় সেখান থেকে কর্মসূচী গুটিয়ে আসতে হয়। কেননা, শ্রীলংকার উন্নয়নের সুচক ছিল অনেক ভাল। সেখানের মানুষ নিজ উদ্যোগেই তাদের ক্ষত সারিয়ে তুলে। তখন কোন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা গৌণ হয়ে যায়। সুতরাং ব্র্যাক ফিরে আসে তার কর্মসূচী গুটিয়ে।

তাঁতশিল্পীদের মাঝে চশমা বিতরণ কর্মসূচী ছিল একটি ভাল উদ্যোগ। ব্র্যাক এক গবেষণায় আবিষ্কার করে যে, তাঁতকর্মীদের চোখের সমস্যার কারণে তাদের কাজের গতি কমে যায়,এতে উৎপাদন কম হয়। ব্র্যাকের গবেষকরা মত দেন, বিনামূল্যে চোখ পরীক্ষা করে স্বপ্লমূল্যে চশমা বিতরণ করতে পারলে তাঁতীরা আরো বেশি মনোযোগী ও কর্মনিষ্ঠ হবে। এই কর্মসূচীতে দরিদ্র পরিবারের অল্পশিক্ষিত তরুণীদের চোখ পরীক্ষার প্রশিক্ষণদান করে নিয়োজিত করে সংস্থাটি। এতে নরসিংদী ও পার্শ্ববতী অঞ্চলের হাজার হাজার তাঁতীর চোখের চিকিৎসার সুযোগ তৈরী যেমনি হয়, তেমনি তাদের কর্মসংস্থানে যুগান্তকারি পরিবর্তন নিয়ে আসে এ উদ্যোগটি। তাঁত শিল্পীদের মধ্যে চশমা বিতরণ করায় সুচারুরূপে কাজ সম্পন্ন হয়। ফলশ্রæতিতে কর্মসংস্থানও নিশ্চিত হয়। এটি ছিল ব্র্যাকের একটি সফল প্রণোদনা। এই কর্মসূচী শুধু নয়, সবকটি কর্মসূচীতে প্রধানত কিছু গবেষণা কাজে নিয়োজিত পুরুষ কর্মী ছাড়া মাঠ পর্যায়ে বাকী হাজার হাজার কর্মীরা ছিলেন নারী। তাদেরকে মটর বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে,প্রশিক্ষিত করে প্রত্যন্ত দুর্গম গ্রাম অঞ্চলে ছেড়ে দেয়া হতো বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে দিয়ে। কারণ নারীরাই ছিল সংস্থার মূল কেন্দ্রে। তাই নারী কর্মীবাহিনির নিকট নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। এজন্য তরুণীদের প্রাণশক্তি হিসাবেই ভাবা স্বাভাবিক। তাই, নারীদের মটর বাইক চলানোতে অভ্যস্ত করা, সমাজে এটিকে সহনীয়  করে গড়ে তোলা ছিল ব্র্যাকের একটি যুগান্তকারি প্রচেষ্টা। শিক্ষিত এই তরুণীদের বলা হতো তখন ‘ভটভটি আপা’। এর  আগে অকল্পনীয় ছিল মেয়েদের মটর বাইক কেন, সাধারণ সাইকেল চালানোও। প্রবল সৎপ্রচেষ্টাই সে সময়ের নারীর বাইক চালানো এখন বাংলাদেশে স্বাভাবিক বিষয়।

উপরোক্ত কর্ম  উদ্যোগগুলো ছিল ব্র্যাকের সফলতার কয়েকটি মাইলস্টোন। তবে এর পেছনে ঋণ বিতরণের মধ্য দিয়ে সুক্ষভাবে একটি ব্যবসার সুত্রপাত হয়। এই কর্ম সংস্থান সৃষ্টির চিত্রটিও অচিরেই সমাজে আলাদা একটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। ব্র্যাক মূলত জীবনমান উন্নয়নে দরিদ্র পরিবারগুলোকে কর্মক্ষম করে গড়ে  তোলা হলেও  স্বল্পসুদে ঋণপ্রদান থেকে ব্যবসা মূল উদ্দেশ্য ছিল। শাল্লা, মার্কুলি, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ তাদের বিভিন্ন প্রজেক্ট এলাকায় স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ঋণ বিতরণ কর্মসূচী চালু করে। কৃষি তথা সবজি চাষ, হাঁস-মুরগী পালন,গৃহস্থালীর সরঞ্জাম তৈরী করে উপার্জনের পথ রচনা করার কর্মসূচী শুরু করে ব্র্যাক। বেছে নেওয়া হয় দরিদ্র পরিবারের নারীদের। এতে যে নারীরা বসে থাকতেন সারা বছর,তাদের উৎপাদনমুখী হওয়ার প্রেরণা যোগায় উদ্যোগটি। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও সংস্থাটি প্রদান করে। এছাড়া অন-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্র্যাক চালু করেছিল এই হতদরিদ্র পরিবাবেরর সন্তানদের মধ্যে। চালু করেছিল বয়স্ক শিক্ষাও। নারী ও পুরুষরা এতে অক্ষর জ্ঞানলাভ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতে দেশে স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি পায়। অল্পদিনে কর্মক্ষম নারীসমাজ সৃষ্টিতে সমগ্র বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সংস্থাটি। এসব কর্মসূচী গ্রামীণ ব্যাংক, আশাসহ অন্যান্য এনজিও সংস্থাও ছড়িয়ে দেয় দেশব্যাপী। তবে এই কর্মসূচী  দরিদ্র শ্রেণীকে পক্ষান্তরে ঋণের জালে আবদ্ধ করে এক ধরণের বন্দী দশা সৃষ্টি করে।  কোন কিছু বুঝে-উঠা বা টের পাওয়ার আগেই একটি খাঁচার ভেতর পড়ে যায় দরিদ্র পরিবারগুলো। বিভিন্ন পরিবারে ভাঙন ও বিবাদ মাথাচাড়া দিতেও সংবাদ কম শোনা যায়নি।

এক দশকের মাথায় দেশে সরকারি ও বেসরকারি নানা কর্ম উদ্দীপনায় কর্মজীবী এসব নারী ও পরিবারগুলো তথা নিম্নবিত্ত,ভূমিহীন শ্রেণী দারিদ্রের তলানী থেকে উঠে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর আরেকটি কারণ ছিল। সেটি, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ পৌঁছে দেয়ার ফল। সরকার এটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছিল। এনজিওগুলো তখন ভিন্ন পথ খুঁজতে শুরু করে। ক্ষুদ্র ঋণ চালুর পাশাপাশি তারা কর্পোরেট ব্যবসার সন্ধান করতে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ ফোন ও গ্রামীন ব্যাংক ব্যবসাগুলো খাড়া করে। একইভাবে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক ব্যবসা ও ‘আড়ং’ নামের পোশাক ব্যবসার বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠা করে ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়’ শেষ পর্যন্ত ‘বিকাশ’ নামে টাকা লেনদেনের প্রতিষ্ঠান।‘বিকাশ’ একটি যুগান্তকারি উদ্ভাবন। যেখানে গরীব কর্মজীবীরা নগরবাসী হয়ে বিভিন্নভাবে মজুর খেটে যে অর্থ উপার্জন করতো তা পোষ্যদের নিকট প্রেরণ করতে পারতো না। মাস শেষে নগর থেকে দূরে থাকা গ্রামের বাড়িতে নিজে পৌঁছে দিতে হতো। এতে সময়ক্ষেপনের কারণে পরিবারটি অর্থাভাবে মারাত্মক কষ্টের মুখোমুখি হতো। কেউ কেউ ঋণগ্রস্ত হতো, অনেকে আবার না-খেয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে বিপদগ্রস্ত হতো। ‘বিকাশ’ চালু হওয়ার পর পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রাপক টাকা পেয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি, এক অভাবনীয় পথ উন্মুক্ত হয়। এখানে মোবাইল ফোন ব্যবস্থাটিও এমন ধরণের বিপ্লবাত্মক একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই এর লেনদেন সম্পন্ন হয়ে থাকে।

এসব সাফল্যজনক কর্মকাÐ সম্পর্কে লেখক মোশতাক রাজা বিশদ বর্ণনা, নিজ অভিজ্ঞতার কথা বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। তবে ব্র্যাকের এই কর্মযজ্ঞে অর্থের প্রয়োজনটি প্রধান শর্ত এবং অর্থ যোগানের সূত্রগুলো সম্পর্কে তেমন বর্ণনা করেননি। ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার প্রথম উদ্যোগ নেন ফজলে হাসান আবেদ বাহাত্তর সালে,মুক্তিযুদ্ধের পর পরই। পুঁিজ যোগান হয় লন্ডনের নিজের ফ্লাট বিক্রির অল্প পরিমাণ অর্থ। কিন্তু আমার জানামতে ভিন্ন তথ্য রয়েছে। ফ্লাটটি আবেদ সাহেবের ছিল না, ছিল তাঁর গার্লফ্রেণ্ড ‘মারিয়েটা’র। মারিয়েটা আবেদ সাহেবের ভক্ত ও অনুরক্ত ছিল। সে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আর্ন্তজাতিক জনমত গঠনে বিভিন্ন সভা ও মানববন্ধনে ব্যানার-ফেস্টুন নিজের ছোট্ট গাড়িতে করে নিয়ে যেতো এক শহরকে থেকে অন্য শহরে। সেই মারিয়েটা নিজের ফ্লাট বিকি করে ব্র্যাকপ্রতিষ্ঠায় অর্থ সংস্থানযাহোক, এই অর্থ পুঁজি হিসাবে ব্র্যাকে বিনিয়োগের পর আর থেমে যেতে হয়নি। ব্র্যাকের কর্মধারায় আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন অর্থ যোগ দিতে থাকে। কেননা, মানবোন্নয়ন কর্মসূচী আর্ন্তজাতিক মহলে আগ্রহের সৃষ্টি করে। রক ফেলার, ফোর্ড ও গ্যাটস ফাউন্ডেশনসহ মার্কিন ও ব্রিটিশ অনেক প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের পেছনে দাঁড়ায়। গ্রামীণ ব্যাংকও একই সুবিধা পায়। তবে, আমার তেমন অভিজ্ঞতা নেই বা জানা নেই, বিদেশী সংস্থার প্রদত্ত লগ্নিকৃত অর্থ কিভাবে ফেরত দেওয়া হতো, কি পরিমাণ সুদ প্রদান করা হতো, সে বিষয়টি লেখক পরিষ্কার করেননি। প্রচলিত ধারণা বা তথ্য হলো ব্র্যাক বা অন্য এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার প্রদত্ত অর্থ কড়ায়-গণ্ডায় উসুল করে নেয়। আর তাদের প্রদত্ত ঋণ শতভাগ আদায় করা সম্ভব হয় বলেই এনজিও সংগঠনগুলো তথাকথিত বিদেশী সংস্থা বা রাষ্ট্রের সুনজরে রয়েছে। ব্র্যাক এখন বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় উন্নয়নসহযোগী প্রতিষ্ঠান। তার কর্মদ্যোগ ছড়িয়ে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দরিদ্র ও যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলে। সংকটাপন্ন হত-বিহবল মানুষের পাশে ব্র্যাক একটি আশার আলো।

বইয়ের মধ্যে অনেক অজানা তথ্যও রয়েছে,যা সাধারণের জানার বাইরে। অথবা জানা হলেও দীর্ঘদিনে অনেক তথ্য আর উল্লেখই হয় না। ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম সভাপতি ছিলেন বিশিষ্ট নারীনেত্রী কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব মহিয়সী বেগম সুফিয়া কামাল। পরবর্তীতে সংস্থার কোন কার্যক্রমে তাঁর আর কোন তৎপরতা নেই।

সব শেষে, বলতে দ্বিধা নেই আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর নিজ জীবন পুরোপুরি উৎসর্গ করেছেন ব্র্যাকের কাজে। কখনো কর্মী, কখনো গবেষণা কাজে বিভিন্ন উদ্ভাবনীর পেছনে রাতদিন খাটা, পাগলের মত ছুটেছেন মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে স্বপ্ন নিয়ে। নিভৃতচারি জীবনে অভ্যস্ত এই সৃজনশীল মানুষটি আমাদের পাশেই রয়েছেন, অথচ আমরা অনেকেই চিনি না। তাঁর কাছ থেকে, লদ্ধ জ্ঞান থেকে জাতি অনেক কিছু পেতে পারে, আমরা তাঁর খোঁজই রাখছি না। আমার অনুরোধ থাকবে, লেখক মূলত ব্র্যাাকের অন্যতম একজন প্রাণশক্তি। সংস্থার প্রণোদনা ও সরাসরি সহযোগিতায় জনসংখ্যা বিষয়ে গবেষণায় মাস্টার্স  ডিগ্রি, ওরসেলাইন ও মানব উন্নয়নের বিভিন্ন গবেষণা কাজে তিনি  বহু দেশে সেমিনারে,বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত মূল বক্তব্য প্রদান ও বহু গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন। বইয়ের তথ্যানুযায়ী এসব লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আমার অনুরোধ, এসব গবেষণাপত্রগুলো যদি সংরক্ষিত থাকে, তবে বাংলা অনুবাদসহ গ্রন্থভুক্ত এবং দ্বিভাষিক  গ্রন্থ প্রকাশ করলে দেশ এবং জাতি উপকৃত হবে।

গ্রন্থের ভাষা ও পরম্পরা উপস্থাপনার বিষয়ে কয়েকটি কথা  বলে লেখার সমাপ্তি করতে চাই। মোশতাক রাজা চৌধুরী সমগ্র জীবন ইংরেজি ভাষায় বিদেশে গবেষণা কাজে নিয়োজিত থেকেছেন, লেখালেখি করেছেন ইংরেজী ভাষায়। কিন্তু বাংলা ভাষায় লেখা ‘আমার ব্র্যাক-জীবন’ আমার ভাল লেগেছে। তিনি প্রাঞ্জল ভাষায়  লেখার দক্ষ একজন ব্যক্তিত্ব। সচরাচর আমরা দেখেছি, কোন আর্ন্তজাতিক সংস্থায় কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বাংলা ভাষায় খুবই দুর্বল। তিনি এর ব্যতিক্রম। এতেই বুঝা যায় বাংলা ও বাঙালির প্রতি তাঁর ভালোবাসা কত মজবুত,দৃঢ়। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ছাড়া এমন যোগ্যতা ধারণ করা  সহজ নয়।

হামিদ মোহাম্মদ: লেখক, সাংবাদিক

You might also like