আমি কান পেতে রই

 পঙ্কজ ভট্টাচার্য

 

আমি বিরাশি পেরিয়ে তিরাশিতে পা রেখেছি। কেন জানি আট আর তিন সংখ্যার যোগফল এগারোর যৌবন ও কৈশোর ফিরে পেতে আকুল হই। এ যেন আবেগ-আবেশ বিহ্বল করা নেশাতুর দশা।

সে দিন গুলোর দিগন্ত প্রসারী মাঠ, ক্ষেত, খাল- বিল, পাহাড় -টিলা, পুকুর -দীঘি,-জলাশয়, বন- বাদাড়,খড়ের গাদা, গুই সাপ, সজারু, বেজি, কাঠবিড়ালি, চিল, শকুন, চড়ুই, টিয়া, কোকিল, বুলবুলি , মাছরাঙা, গাঙচিল সহ পাখ-পাখালির কিচিরমিচির, বৈচিত্র্য বৈভবে ভরা প্রকৃতি- নিসর্গ বাগ্ময় হয়ে ওঠা ফেলে আসা দিনগুলোর কথা আজও ভেসে ওঠে দুচোখে, মনে আঁকে অমোচনীয় ছবি।

একথা ধ্রুব সত্য যে শিল্প সাহিত্যের জন্মভূমি বাসা বাধে মানুষের মন ও মস্তিষ্কে, জন্ম যন্ত্রনা ও সইতে হয় শিল্প সাহিত্যকে- ইতিহাসের গর্ভ থেকে এরা জন্ম নেন। ইতিহাস রাজপুত্তুর আর রাজকন্যার গল্প গাঁথা নয়, নয় যুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের বিবর্ণ বিবরনী।

ইতিহাস মানব সমাজের কর্ম ও সংগ্রামের কাহিনী। কর্মজীবী নরনারী নিত্যদিন বৈরী প্রকৃতি এবং উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে এবং বিরুদ্ধ পক্ষে মালিক পক্ষের সাথে থাকে বিরোধে লিপ্ত। এক কথায় ইতিহাস হল মানব সংগ্রামেরই ইতিহাস। মার্কস এঙ্গেলস ১৮৪৮সালে প্রকাশিত কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে এই মৌল নিখাদ সত্যটি তুলে ধরেছেন। “আজ পর্যন্ত যত সমাজ দেখা গেছে তাদের সকলের ইতিহাস ই শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস”, -ইতিহাসের সামিয়ানার নীচে যুগে যুগে যাদের বসবাস সেই শিল্পী সাহিত্যিকদের রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক প্রায়ই থাকে অম্লমধুর। একথাটিও সত্য জনপ্রিয় ধারার শিল্প সাহিত্য দেশে সবসময় একাধারে সৃষ্ট ও বিলুপ্ত হতে থাকে। জনতোষ ধারার বাইরে মহৎ শিল্প সাহিত্য নরনারীর জীবন রাষ্ট্র শক্তির বিরূপতা ভোগ করলেও আগামীর পথদ্রষ্টা হয়ে উঠে- এককথায় মহৎ শিল্প আগামীর রচয়িতা। এভাবে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মজীবী নরনারীর জীবনে এনে দেয় স্বপ্ন দেখার সুদিন এবং প্রেরণা ও শক্তি যোগায় পরিবর্তনের। ব্রাজিলের বিখ্যাত নাট্যকার নাট্য রচয়িতা (১৯৩১ থেকে ২০০৯) অত্যাচারিতের নাটক-আন্দোলনের পথদ্রষ্টা অগাস্ত বিয়েলি নাটককে সংজ্ঞায়িত করেছেন “নাটক হচ্ছে বিপ্লবের মহড়া। “একথা শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

এরূপ নাটক গত শতকেও বিশ্বকে মাতিয়েছে। প্রগতির হাত ধরাধরি করে আজ অবধি সংগ্রামী চেতনায় শান দিয়ে আলো ছড়িয়ে চলেছে অবিরাম। বৃটিশ আমলে উপমহাদেশে এই গণনাট্য সংঘ উপনিবেশিক শাসন শোষণ ও শৃঙ্খল ভাঙার গৌরবময় অধ্যায় রচনা করেছে। সেদিনকার নাটক. “ছেঁড়া তার”, ” অঙ্গার”, “লেনিন কোথায়? ” এর প্রাসঙ্গিকতা আজও অম্লান। আর গণ নাট্যের গান অবিভক্ত ভারতের বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম এমনকি মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামেও জনযুদ্ধের হাতিয়ার হয়ে উঠে। অবিভক্ত বাংলার পথনাটক পথ দেখিয়েছে সেই দিনগুলোতে, আজও পথের সন্ধান দেখায়। আর গণ সঙ্গীত আজও সৃষ্টি করে চলেছে গণ চেতনা, গণজাগরণ । এ ধরনের শিল্প সংস্কৃতির চর্চা বিশ্বজনীন গণসংগ্রামের সহোদর হয়ে উঠে। এর সাথে হাত ধরাধরি করে গণমুখী ভূমিকা পালন করে এসেছে কবিতা, গল্প, নাটক, যাত্রা, লোকগান ও চলচ্চিত্র। সমগ্র পাকিস্তানি আমল জুড়ে ভাষা সংস্কৃতি ঐতিহ্য আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার সহ মুক্তিযুদ্ধে এই ধারার শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি পালন করে আন্দোলন -সংগ্রামের প্রধান সম্পূরক ভূমিকা। পাকিস্তানি শাসক চক্রের কোপানল থেকে রবীন্দ্রকাব্য, সঙ্গীত ও নাটক রেহাই পায়নি। সরকারি নিষিদ্ধাদেশ উপেক্ষা করে মহা সমারোহে ১৯৬১ সালে পালিত হয় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান মালা, রবীন্দ্র- সঙ্গীত, গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, ছায়ানৃত্য এবং লোকগান, গণসংগীত হয়ে উঠে সমাজ প্রগতির সংগ্রামের হাতিয়ার।

মনে পড়ে প্রতিবছর পালিত ৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারির রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদ স্মরণে সেই শহীদি গানের কথা-“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” এই গান কিংবা বন্যার্ত ও ঘুর্ণিঝড়ে নিহত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গণসাহায্য সংগ্রহে আমরা মিছিল সহযোগে গাইতাম “ভিক্ষা দাও গো পুরবাসী ” আর রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে পথঘাট জনপদ মাতিয়ে তুলতাম ” কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে ফেল কররে লোপাট”। এ ছাড়া সমগ্র পাকিস্তান আমল জুড়ে মিছিল-শোভাযাত্রা-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে স্লোগানের পাশাপাশি গান হয়ে উঠতো জনজাগানিয়া মন্ত্র।মুক্তিযুদ্ধের রক্ত-অশ্রু-আগুনের দিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাজি রাখা মরণপণ সংগ্রামে মারণাস্ত্রের পাশাপাশি জীবনদায়িনী বাংলার পরিবেশ-নিসর্গ স্মৃতি জড়ানো রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত-জীবনানন্দ -এর কবিতা ও গান ছিলো সম্পূরক শক্তিশেল।

বিগত ২০১৩ সনে রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ চত্বরে ফুঁসে উঠে তারুণ্যের এক বিদ্রোহ, কয়েক মাস ধরে দিবারাত্রি জেগে থাকে অনন্য এক গণজাগরণ মঞ্চ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি দানের দাবীতে অবিরাম আন্দোলনে উত্তাল হয় ঢাকাসহ সারা দেশ। এক্ষেত্রেও রবীন্দ্র নজরুল সুকান্তের কবিতা, গান, জুগিয়েছে অনন্য সাধারণ প্রেরণা।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের মানুষ অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলো এক অভূতপূর্ব কিশোর বিদ্রোহ।২০১৮ সনের ২৯জুলাই সকালে প্রায় অধিকাংশ স্কুলের গেট খুলে হাজার হাজার শিশু কিশোর স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে বইয়ের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে দখল নেয় রাজধানীর রাজপথ -জনপদ। ঐ দিন বাস চাপায় নিহত হয় দুই সহপাঠী মর্মান্তিক ভাবে। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভার নামধারীর হাতে ঘটে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড। ক্ষোভে ফেটে- পড়া সতীর্থ শিশু কিশোররা নিরাপদ সড়কের ঐতিহাসিক আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। রাস্তাঘাট থেকে পুলিশকে বিদায় দেয়। সুশৃঙ্খল ভাবে প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্স, বডি ফিটনেস পরীক্ষা করে। লাইসেন্স ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি সারিবদ্ধ ভাবে আটক রাখে, ছেড়ে দেয় বৈধ গাড়ি। অবৈধ ছাড়পত্র যুক্ত ফিটনেস বিহীন গাড়িতে চলছিলেন জনৈক মন্ত্রী মহোদয়। কিশোর কিশোরীরা মন্ত্রীকে অবৈধ গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে অনুরোধ করে ,মন্ত্রী প্রবর তা মেনে নেন। অপর এক মন্ত্রীর গাড়ি অবৈধ পথে চলাচলের জন্য অনুরূপ ভাবে মন্ত্রীকে হেঁটে যেতে অনুরোধ করা হয়। মন্ত্রীও মেনে নেন দেশ গঠনে নিয়োজিত নব্য তুর্কীদের এই নির্দেশনা।

পথচারী জনগণ আবাল বৃদ্ধ বনিতা এইরূপ কিশোর বিপ্লবের ক্রিয়াকাণ্ড দেখে সপ্রশংস উক্তি করতে থাকে এবং এহেন আজব ঘটনায় দর্শনার্থীদের ভিড় জমে যায়। শুধুমাত্র নিরাপদ সড়কের দাবীতে সীমাবদ্ধ থাকে নি এই আন্দোলন, সমাজ ও রাষ্টযন্ত্রকে দেয় তীব্র ঝাঁকুনি। এই কিশোর বিদ্রোহ অবিষ্কার করে অভিনব স্লোগান – যা কাব্যিক সৌন্দর্য আর সামাজিক গভীরতা- মণ্ডিত। শিশু কিশোর বিদ্রোহের অনুপম এই স্লোগান গুলো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অন্তরে দাগ কেটেছে, সহানুভূতির ঢেউ জেগেছে মহানগরী জুড়ে। অপূর্ব সম্মোহনী শক্তি ছিল এই অনন্য আন্দোলনের।

আসুন এবার কিশোর বিদ্রোহের স্লোগানের তত্ত্ব -তালাশ করি। পোস্টার গুলিতে কচি হাতের লেখা পড়ে পাঠকের জিহ্বা- হতবাক দশা, যেমন -“রাষ্ট্রের মেরামত চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত”, “নয় টাকায় এক জিবি চাই না, নিরাপদ সড়ক চাই”, ছাত্র-ছাত্রীদের আপাতত রাস্তা সামলাতে দিন, মন্ত্রী পুলিশকে স্কুলে পাঠান শিক্ষিত করতে। ”

নিরাপদ সড়কের মানবিক আবেদনের গভীরতা ও সার্বজনীনতা ফুটে উঠে শ্লোগানের মধ্য দিয়ে, যেমন – “হয় নি বলে আর হবে না আমরা বলি বাদ দে, শত তরুণ চেঁচিয়ে বলে পাপ সরাবো, হাত দে,” “যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবেই তুমি বাংলাদেশ”, “আমাদের উস্কানি দিচ্ছে আমাদের বিবেক”। শ্লোগান গুলি হয়ে ওঠে বিবেকী মানবতায় সমৃদ্ধ। কিশোর বিদ্রোহ আবিষ্কার করে চেতনা দীপ্ত উজ্জ্বল শ্লোগান, “শাহবাগে রাত ভোর- স্মৃতিতে একাত্তর। ”

এক আন্দোলনরত কিশোর হিসেব করে দেখালো ১৯৭১এর অংশগুলোর যোগফল ১৮ এবং আঠারোর খপ্পরে পড়েছে সড়ক ও দেশ। ইতোমধ্যে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ১৮বছর নিয়ে লেখা কবিতা সামাজিক প্রচার মাধ্যমে আলোড়ন তোলে। কিশোর কবি সুকান্ত হয়ে ওঠে কিশোর বিদ্রোহের ভগীরথ।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ঘুম ভাঙানিয়া’ কবিতা পোষ্টারে তুলে ধরেছে এক কিশোর “আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?”, আরেক কিশোর কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহ বার্তা আবিষ্কার করলো, “আমি হবো সকাল বেলার পাখী, “। কিশোর বিদ্রোহ জানিয়ে দিলো সাহিত্য আর জীবন অবিভাজ্য।

আন্দোলনরত কিশোরের বাবাকেও ছাড় দেয়নি কিশোর, হাতে লেখা পোষ্টারে লেখা রয়েছে ” বাবা তোমার আয়ের উৎস কী? জানতে চাই। ” পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ, ও রাষ্ট্রকে কলুষমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় দেখালো কিশোর বিদ্রোহ। যা চালু ছিল সাতদিন ধরে। সরকারের নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতিতে তারা ফেরত যায় স্কুল সমূহে, আবার ফিরে আসার আগাম ঘোষণা দিয়ে।

কিশোর বিদ্রোহ তার কথা রেখেছে-তারা ফিরে এসেছে ২০২১সনের শেষার্ধে যখন মুনাফা-পাগল পরিবহন মালিকেরা আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত নিয়ে দুর্বল রাষ্ট্র যন্ত্রকে বাধ্য করে পরিবহনের শতকরা ২৮ভাগ ভাড়া বৃদ্ধিতে। পাশাপাশি এই সময়ে ঢাকা মহানগরীর দুটি পৌরসভার ময়লা পরিষ্কারের গাড়ির চালক অদক্ষ পরিচ্ছন্ন কর্মীর হাত কিশোর তরুণ দুই ছাত্রকে বেঘোরে হত্যা করে, এ ঘটনায় ক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল হয় পুনরায় পথঘাট, ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে পিলপিল করে পথে নামে ,দখল নেয় পথঘাট স্কুল ছাত্রছাত্রীরা পুনরায়। স্কুল ড্রেস পড়ে বইয়ের ব্যাগ পিঠে নিয়ে পথেঘাটে লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার-নামধারী খুনীদের চিন্হিত করে ও বিচারে বাধ্য করে সরকারকে, ছাত্র ছাত্রীদের অর্ধেক ভাড়ায় বাসে চলাচলের অধিকার আদায় করে। সর্বোপরি পুনরায় হুশিয়ার করেছে রাষ্ট্র যন্ত্রকে “রাজ পথে, জনপদে আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না,” “পরিবহন মালিকের লোভের জিহ্বা সংযত করাও”,নিয়মিত সড়ক, লঞ্চে,রেলে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বন্ধে ব্যবস্থা নাও”, এরূপ মহা সংকেত জানিয়ে ৩দিন মহা সড়ক দখল শেষে ফিরে যায় কিশোর বাহিনী শ্রেণিকক্ষে। আর এ কদিন পুলিশ ও প্রশাসন কাটায় গ্লানিময় অলস দিন।

ত্রিপুরেশ্বরীর বরপুত্র যিনি তাঁর কাব্য আভা ছড়িয়েছেন পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশে -সেই কবিবর গোবিন্দ ধরকে সবিনয়ে বলি, আপনি সাহিত্য বিশেষত প্রকাশনায় আমার মতো অভাজনের পরামর্শ ও মতামত চেয়েছেন যার বাধাধরা প্রামাণ্য জবাব আমার জানা নেই। আমি একজন প্রথাবিরোধী রাজনীতিক, সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী। মেঠো কর্মী হিসেবে ছয় দশকের বেশি সময়কাল কেটেছে আমার পথেঘাটে, দেশের আনাচে কানাচে, মিছিলে মিছিলে, আন্দোলন সংগ্রামে, গণ অভ্যুত্থানে এবং মুক্তি সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধে। কেটেছে দিন কারাগৃহে এবং আত্মগোপনে, দেহ ধারণের জন্য সাধারণ খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি মন মননের পুষ্টি বর্ধনে, মানসিক–মানবিক নিষ্ঠা ও শক্তি অর্জনে, হতাশা-বৈকল্য বর্জনে সাহিত্য-সঙ্গীত-নাটক-গল্প- উপন্যাস ছিল নিত্যসঙ্গী–আজো তার বিচ্ছেদ ও ব্যত্যয় ঘটেনি। এছাড়া অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের জীবন থেকে পাঠ নিয়েছি- নিত্যদিন নিয়ে চলেছি।

আপনজন ,প্রিয়জন, জীবন সাথী হারানোর দুঃখ, শোক, বেদনা সইবার শক্তি এভাবে অর্জন করেছি। চারপাশের হীনতা, দীনতা, নীচতা, হিংসা বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, শোষণ- বঞ্চনা-অবিচার, প্রতিবাদ-প্রতিরোধে সর্বোপরি মানবতার পতাকা পতপত করে ওড়াতে আমার বৃদ্ধ দেহে তারুণ্যের শক্তি সঞ্চারিত-সঞ্জীবিত করে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি।

আমি স্বপ্ন দেখি সুদিনের- সুন্দর দিনের- শোষণ মুক্ত ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজের। এই স্বপ্নের নায়কেরা আর কেউ নয় —উপরে বর্ণিত শিশু কিশোর বিদ্রোহী এবং যুব জাগরণের অগ্রসেনানীরা।
এই নব প্রজন্মকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে, মনোবল বাড়াতে, মানসিক পুষ্টি জোগাতে, দেশ- দশের দায়িত্ব কাঁধে নিতে, আদর্শিক -নৈতিক ও মানসিক শক্তিতে শক্তিমান হতে, সর্বোপরি অগ্রবাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে প্রয়োজন নিত্যনতুন সঞ্জীবনী সুধা -শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উদ্দীপক- উদ্ভাবক স্বপ্ন বীজ। 

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: রাজনীতিক। সভাপতি, ঐক্যন্যাপ। সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী

 

 

 

You might also like