এই দিনে ফ্রান্স থেকে পাবনায় চলে যাই

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: তিনি পেয়েছেন ফ্রান্সের নাইট উপাধি এবং ফ্রান্সের জাতীয় থিয়েটারের মলিয়ের অ্যাওয়ার্ড।তিনি বাংলাদেশের মাইমের পথিকৃৎ একুশে পদকপ্রাপ্ত পার্থ প্রতিম মজুমদার। ১৮ জানুয়ারি ছিল তাঁর জন্মদিন। এই সূত্রে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক ফোন করে ক্যারিয়ার, ব্যক্তিগত উপলব্ধিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাতকারটি হুবহু সত্যবাণী পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্নঃ শুভ জন্মদিন
ধন্যবাদ। অনেক অনেক আগে ফোন করেছিলে। ধরতে পারিনি, কিছু মনে করবে না।

প্রশ্নঃ এই দিনে আপনাকে পাওয়া তো সৌভাগ্যের বিষয়…

কী করব বলো। ফ্রান্সের সময় অনুযায়ী ভোরে ফোন খুলেছি। এরপর থেকে টানা বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফোন আসছে। তাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলছি। অনেকে অনলাইনে উপহার পাঠিয়েছেন। মাঝে আমার স্ত্রীকে (জয়শ্রী মজুমদার) নিয়ে একটু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এসে আবার শুরু হয়েছে ফোনে কথা বলা।

প্রশ্নঃ জন্মদিনটা কেমন কাটছে?

হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা ছাড়া কী আর আছে জীবনে। আমি সুখী মানুষ। সবাই ফোনে, ফেসবুকে মনে করছেন—এটাই আনন্দের। মানুষের মাঝে আছি।

প্রশ্নঃ বিশেষ কোনো আয়োজন আছে?

এখানে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছি না। অনেকেই আসতে চেয়েছিলেন, না করে দিয়েছি। আমার ছেলে নিকোলা সুপ্রতিম মজুমদার শুধু দেখা করার জন্য সাত–আট ঘণ্টার জার্নি করে আসছে। সে–ও ফান্সে থাকে। মেয়ে উপহার পাঠিয়েছে। আমার মনে হয়, সবাই উপহার না পাঠিয়ে দাতব্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পাঠালে আরও ভালো হয়। তবে আমাকে মনে রাখায় সবার জন্য ভালোবাসা।

প্রশ্নঃ ৬৭ পেরিয়ে ৬৮…

বয়স নিয়ে আমার আনন্দ এবং বেদনা দুটিই রয়েছে। দিনটাতে আমার ভালো লাগে, অতীতে ফিরে যাই। বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তরুণেরা বড় হচ্ছে। তারা দায়িত্ব নিচ্ছে। অনেকেই বলেন, আহা, বয়স বেড়ে গেল তোমার, বুড়ো হয়ে যাচ্ছ। অবশ্য এটা আমি কখনোই ভাবি না। মানুষ কর্মে বাঁচে। এটা আমার কাছে পবিত্র দিন মনে হয়।

প্রশ্নঃ এই দিনে দেশের কোনো ঘটনা মনে পড়ে?

বিদেশে থাকলেও মনটা দেশেই পড়ে থাকে। সকাল থেকেই ভাবছিলাম আমার পাবনায় কাটানো শৈশবের কথা। দাদা–বাবা–মায়ের সঙ্গে কাটানো দিনগুলো। আমি খুব দুরন্ত ছিলাম। আম–নারকেলগাছে চুরি করে উঠতাম। দুষ্টুমির জন্য মায়ের লাঠির বাড়ি খেতাম। গরুর গাড়ির পেছনে ঝুলতে ঝুলতে হারিয়ে যেতাম। আবার পথ খুঁজে হেঁটে আসতাম। দিনটিতে শৈশব আমাকে নস্টালজিক করে দেয়। এই দিনে ফ্রান্স থেকে আমি পাবনায় চলে যাই।

প্রশ্নঃ কোনো উপলব্ধি হয়?

জীবনটা অনেক ছোট। এই সময়ে চাইলে অনেক কিছু করা যায়। এই বিশ্বের এত নামীদামি সম্মাননা, মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি—এগুলো আমাকে ভাবতে শেখায় নতুন কিছু করতে। আর আমি নিজেকে এখনো তরুণ মনে করি। অনেকে বলেন, ৮০ সালে আমাকে যেমন দেখেছেন, এখনো তেমনই আছি!

 

প্রশ্নঃ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও নাসির উদ্দিন শাহর সঙ্গে ভারতে আ হোলি কন্সপেরেসি সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আপনাকে আমাদের বাংলাদেশের কোনো সিনেমায় কবে দেখব?

দেশের সিনেমায় তো কাজ করতেই চাই। বাংলাদেশের পরিচালকেরা হয়তো আমাকে যোগ্য মনে করেন না। অথবা আমাকে দেওয়ার মতো কোনো চরিত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। আমাদের সিনেমার বাজট কম থাকে, সেটাও হতে পারে। তবে বাংলাদেশের পরিচালকেরা প্রস্তাব দিলে অভিনয় করব।

প্রশ্নঃ দেশে আসা নিয়ে কী ভাবছেন?

আগে তো নিয়মিত দেশে আসতাম। দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে তরুণদের শেখাতাম। সরকার বা কেউ উদ্যোগ নিলে আমি যা জানি সেটা দেশের তরুণদের জানাতে চাই। আমি কখনো দেশে গেলে বাসায় থাকি না। হোটেলে থাকি, যেন সব সময় যে কেউ চাইলে আমার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। খুবই ইচ্ছে আছে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের মাইম ইনস্টিটিউট দেওয়ার।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলোর

You might also like