কমরেড শ্রীকান্ত ভাবনায় শাল্লার রাস্তা ও ফ্লাইওভার

ফিচার ডেস্ক                            সত্যবাণী

 

ইতিহাসের কথকে ভেড়ামোহনা পাড়ে শাল্লা হয়ে থাকলেও একটি পোস্ট বক্স ও পুলিশ স্টেশনের অবস্থানের ফলে ডুমরা-ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের মধ্যে ঘুঙ্গিয়ারগাওঁ কেন্দ্রিক গড়ে উঠে শাল্লা। যা কাগজে পত্রে শাল্লা উপজেলা সদর হিসাবে পরিচিত।

কমরেড শ্রীকান্ত দাশ ২০০২ সালে দুর্গম শাল্লার যোগাযোগে ‘রাস্তার ভাবনা’ নামে হাওর মাতৃকার বুকে স্থায়ী পাকা সড়কের বিপরীতে হাওর-বান্ধব ফ্লাইওভার বা উড়াল রাস্তার প্রসঙ্গে লিখে প্রকাশের মতামতে তৎকালীন সময়ে সিলেটের দৈনিক সংবাদ ও চ্যানেল-আই ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক আল আজাদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন। সেই দিনের কমরেডের লিখার পঠিত বিষয় স্মৃতি চারনের মাধ্যমে কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র ভাষ্য মতে –
শাল্লা কৃষি প্রধান বাংলার নির্জলা প্রান্তিক কৃষকদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এক সময়ে থানা সদরের দক্ষিন-পশ্চিমে আজমিরীগঞ্জ হতে ভৈরব-ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ঝুঁক থাকলেও পূর্বপ্রান্ত মার্কুলী বা এর একটু দক্ষিনে পাহাড়পুর হতে লঞ্চযুগে যোগাযোগ হতো সিলেট-ভৈরব-ঢাকা সহ সমগ্র বাংলার সাথে। কালক্রমে তা পরিবর্তন হয়ে সুনামগঞ্জ মহকুমা হতে জেলায় উন্নীত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ঝুঁক ঘুরে দাঁড়ায় দিরাই থানা হয়ে ৬৫ কি:মি দূরত্বের নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও বৃহত্তম নগড় সিলেটের সাথে। হেমন্তে পাও(পা)আর বর্ষায় নাও(নৌকা)ব্যতীত কোন যান ছিল না। দিরাই থেকে লঞ্চ যোগাযোগ থাকলেও দিরাই থেকে শাল্লার যোগাযোগ ভিন্ন। সভ্যতার বিবর্তনে মানুষ দল বেঁধে নিজ হাতে বাউয়া নৌকা ছেড়ে পয়সার বিনিময়ে বা ভাড়া দিয়ে গয়নায়(হাতে বাউয়া নৌকা)যাওয়া-আসা শুরু করে। প্রযুক্তির কল্যাণে নতুন যমানার ছোঁয়ায় ইঞ্জিন চালিত নৌকার প্রচলনের ফলে শুরু হয় আরেক নতুন ধাপের যাত্রা। যা বর্তমানে ট্রলার নামে পরিচিত।
সুনামগঞ্জ জেলা হতে ৬৫ কি:মি দূরত্ব শাল্লা উপজেলার অবস্থান হলেও দিরাই থেকে দূরত্ব প্রায় ১৮/১৯ কি:মি। বর্ষা মৌসুমে হাওরে আফাল হলে মহাসমুদ্রের ন্যায় চাঁনকপালী ঢেউ দেখা যেতো। হেমন্তে পায়ে হেঁটে যোগাযোগ হলেও নদী ভরে দেশের দক্ষিনাঞ্চল হতে পাল টাঙ্গিয়ে বড় বড় নৌকা ৩০/৪০ টা দাঁড়বেয়ে পদ্মা,মেঘনা,কুশিয়ারা সুরমা দিয়ে স্থানীয় নদীতে প্রবেশ করতো। মাঝে মাঝে লম্বা লম্বা দড়ি দিয়ে মাস্তুল হতে সংযোগ করে ৫/৭ জন মিলে গুন টানতো।
শাল্লা থেকে ১৮/১৯ কি:মি: মূল সড়কটি দিরাইয়ে যুক্ত হলেও বুঝাযায় কারেন্টের খুঁটি মূল সড়ককে লক্ষ্য রেখে বসানো হয়েছে। ঘুঙ্গিয়ারগাওঁ সদর হতে সুখলাইন,আঙ্গারুয়া,আঙ্গারুয়া-নওয়াগাওঁ,আনন্দপুর হয়ে ভোলানগড়,কাশিপুর হয়ে
দেখা যায় মূল সড়কটি নাচনী-চন্ডিপুরের মাথায় এসে একদিকে সরমঙ্গল-রাঙ্গামাটি হয়ে দিরাই আবার অন্যদিকে নাচনী-চন্ডিপুর বা সন্তোষপুর হয়ে ডাইয়ারগাওঁ-ভাঙ্গাডহর খালের(চামতি নদী)বিপরীতে বাউশি,বাউশি-নওয়াগাওঁ রাজাপুর হয়ে দিরাইয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে। অপরদিকে আনন্দপুর হতে আরেকটি রাস্তা নিয়ামতপুর জয়পুর হয়ে মিলন বাজারে যুক্ত হয়ে শ্যামারচর-দিরাইয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ও ভৌগলিকগত ভাবে বর্তমানে এই রাস্তাটি বহুলাংশে ১৮/১৯ কি:মি: রাস্তার তুলনায় নির্ভর,স্থায়ি ও সহজতর গ্রহনযোগ্যশীল। শাল্লা হতে মিলন বাজারের দূরত্ব ৬/৮ কি:মি। শাল্লা হতে দিরাই এই ১৮/১৯ কি:মি রাস্তা এক সময়ে ভরা বর্ষায় অস্থিত্ব হীন হুমকীর সম্মুখীন হয়ে গেলেও এখন আর তা হয় না। সেই সময়ে বাড়ি বাঁধা আড়ের গোড়ায় দেড় থেকে দুই তাল সমমান বা ৭/৮ হাত পানি জমতো। তবে এখনও বর্ষার হাওরে অবাদে পানি প্রবাহ থাকায় পানির ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ এমনকি বন্যার প্লাবিত ঢেউ-এ যে ক্ষতি করেনা তা কিন্তু ঠিক নয়। যার ফলশ্রুতিতে সরকারে প্রতি বছরের ভাটির সড়ক-উন্নয়নের মূল বরাদ্দের বৃহদাংশ টাকা সড়ক-উন্নয়ন নামে জলের সাথে মিশে যায়।
দিরাই-শাল্লার ১৮/১৯ কি:মি: রাস্তার সব অংশটাই যে নীচু তা ভাবাও মুশকিল। সুষ্টভাবে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাওয়া যায় প্রকৃতিগত ভাবে রাস্তাটি হাওরের অবস্থানের তুলনায় কান্দা টান বা জাঙ্গালের মতো উচুঁ অবস্থানে অবস্থিত। স্পস্টভাবে দৃশ্যমান শাল্লা সদর হতে আনন্দপুর পর্যন্ত কদাচিৎ অংশ ছাড়া প্রায় ডুবেনা। আঙ্গারুয়া, সুখলাইনের মধ্যখানে গইজ্যাখালি খাল,আঙ্গারুয়া-নওয়াগাঁও এর কাছে মাদাইরা কুঁড় ও আনন্দপুরের আখরার পেছনের হাটির কুঁড় ব্যতীত। আনন্দপুর হতে ভোলানগড় হয়ে কাশিপুর এরও সামান্য অংশ ব্যতীত ডুবেনা। কাশিপুর হতে নাচনী-চন্ডিপুর এর কিছু অংশ ডুবলেও গভীর হাওরের তুলনায় কান্দা টান হওয়ায় ঢেউয়ের ধাপট তেমন হয়না। আর নাচনী-চন্ডিপুরের মাথা হতে বাউশী-নওয়াগাওঁ,রাজাপুর হয়ে দিরাইয়ে সংযুক্ত অংশও প্রায় আবুরা বা ডুবে না। সেই হিসাবে এই ১৮/১৯ কি:মি: লম্বা রাস্তার মাঝে প্রায় অর্ধেক ৭/৮ কি:মি: রাস্তা ডুবেনা বললেই চলে। আর এখানেই কমরেডের চিন্তা হাওয়রকে রক্ষা করে ফ্লাইওভারের কথা।
কমরেড শ্রীকান্ত দাশ তখনকার সময়ে দৈনিক পত্রিকাতে দেখলেন ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার দিয়ে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে আর দিরাই হতে শাল্লার দূরত্ব মাত্র ১৮/১৯ কিলোমিটার । এর মাঝে ৭/৮ কি:মি: প্রায় ডুবেনা। আর মূল প্রশ্নও এই ৭/৮ কি:মি: রাস্তাকে নিয়ে। কেউ বলে ভাটি অঞ্চলের ভাগ্যের পরিহাস! কেউ বলে নিয়তি! আবার কেউ বলে-থাকেন খামখেয়ালী ! যাক এসব বিষয়।
কমরেড মনেকরেন হাওরমাতার বুক জুড়ে এভাবে পাকা রাস্তায় হাওরমাতার গর্ভাশয়কে বিনাশ করে দেওয়া। এই স্থায়ী পাকা সড়কের উভয় প্বার্শে জমি আর জমি এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাল বিল নদী। বর্ষার অবাদ পানি প্রবাহে নৈসর্গিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের চেয়েও জমির উর্বরতা বাড়িয়ে করে দ্বিগুন। অবাদে পানির প্রবাহে জলজ প্রাণি মৎস সম্পদেরও উৎপাদনে গুরুত্ব বহন করে অনেক। অথচ একটি অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থায় থমকে দিতে পারে আদিকাল হতে সৃষ্ট এই কৃষি প্রধান অঞ্চলের সমগ্র ব্যবস্থাকে। যা হাওয়র ভূ-প্রকৃতির বিরুদ্ধের সামিল। ভবিষ্যত প্রজন্মেকে কৃষি বান্ধবের বিপরীতে গড়ে তুলতে পারে অনীহা।
অথচ চক্ষু আড়ালে এই কৃষক ফলিত খাবারের জন্য আজ করোনা-বিশ্বে ক্ষুধার্থ, কোটি কোটি মানুষ অভুক্ততার জন্য জাতিসংঘের শাখা সংগঠন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামকে দেওয়া হলো ২০২০ এর শান্তি পুরস্কার। যদিও এর আগে কৃষি-বিপ্লব অর্থাৎ খর্বাকৃতির উচ্চফলনশীল জাত (উফশী) উদ্ভাবন জন্য ১৯৭০ সালে মার্কিন বিজ্ঞানি নরম্যান বোরলগ পেয়েছিলেন নোবেল।

১৫৪টি ছোট-বড় হাওয়রের সুনামগঞ্জে ১১টি উপজেলার মধ্যে শাল্লা অন্যতম। শাল্লাতে ফসলি জমির পরিমান ২৭হাজার ৬শত ৩২হেক্টর।
এই জেলার সাড়ে তিন লক্ষকৃষক সরাসরি বোরোধান উৎপাদনের সাথে জড়িত। বাংলাদেশে উৎপাদিত চালের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ আসে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান থেকে। আর উৎপাদিত বোরো ধানের শতকরা ২০ ভাগ পাওয়া যায় হাওরাঞ্চল থেকে। অথচ একটি স্থায়ী সড়ক যখন চলন্ত পানি প্রবাহকে ব্যাঘাত ঘটাবে তখন থাকবে কি হাওর মাতার মাতৃত্বের উর্বরতা? জেনেশুনে হাওরের গর্ভাশয়কে জন্মনিয়ন্ত্রের মতো বন্ধ্যা করে দিলে হাওয়র হারাবে তার মাতৃত্ব, জমি হারাবে উর্বরতা, নিমজ্জিত পানিতে প্রানিজ সম্পদ মৎস সঠিকভাবে করতে পারবেনা বিচরন ও বংশবিস্তার, উদাহরণ হিসাবে তুলেধরা যাবে না গুন্ডা গুন্ডা রুই কাতলা চিতলের কথা। কৃষক হারাবে ফসল ফলে উন্নয়নের নামে এক সড়কের জন্য আধুনিক বিশ্বের কৃষি উন্নতির দিকে না এগিয়ে পিছনে পরবে কয়েক যুগের সমমান এই অঞ্চলের আস্ত কৃষক সমাজ। অথচ জমি-জল-জলা-জীবনকে তছনছ করে খাদ্য জোগানের সকল স্বীকৃতি এই কৃষি প্রধান অঞ্চলের কৃষকদের। কাজেই এসবদিক বিবেচনায় হাওরের বুক ফাটা কান্না না করিয়ে স্থায়ী সড়কের বিপরীতে নির্দিষ্ট কিয়দংশ ব্যতীত ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়কের ভূমিকা হাওর বান্ধব,কৃষক ও কৃষিবান্ধব সহ সর্বোপরি হাওরের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে সহায়ককর হবে।

শুধু তাই নয় জলজ সম্পদ মৎসের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পাওয়া যায় বিশ্বজুড়ে মানুষের মাছ খাওয়া বেড়েছে ১২২ শতাংশ। ২০১০ সালের সর্বশেষ ‘খানা জরিপে’ উঠে এসেছে-বছরে বাংলাদেশে একেকজন মানুষ প্রায় ১২ কেজি মাছ খায়। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে। বিশ্বে গড়ে প্রাণিজ আমিষের ২০ শতাংশ কেবল মাত্র মাছ থেকে আসলেও বাংলাদেশে আসে ৫৮ শতাংশ। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ যার এক-চতুর্থাংশ অবদান এককভাবে মৎস্য খাতের। আবার সার্বিক কৃষি খাতের গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ হলেও মৎস্য খাতে প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের উপরে রয়েছে( ২২ জুলাই ২০২০যুগান্তর)। আরো দেখতে পাওয়া যায় বিবিসি বাংলার তথ্যমতে বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর সাড়ে ৪২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি মাছ উৎপন্ন হচ্ছে।এর মধ্যে নদী, বিল ও হাওরসহ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ২৫ শতাংশ। শহর ও গ্রাম দুইখানেই নদী-খালসহ সব ধরণের জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ কমার সঙ্গে দিনে দিনে কমছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পরিমাণও(১৭এপ্রিল২০১৯)।
শাল্লাতে নদীর সংখ্যা ৬টি। উপজেলা ওয়েব সাইটে সমবায় সংক্রান্ত তথ্যে সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া যায় এই মৎস সম্পদকে ঘিরে মৎসজীবি সমবায় সমিতি লি: নামে ৫৬টি সমবায় সমিতি। এখানে বাৎসরিক মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১১হাজার ৭শত ৯৯মেট্রিকটন। তারমানে কি এমন ভাবনা? যে-শাল্লা যোগাযোগ বিহীন সে-শাল্লা রাখতে চাওয়া? নিশ্চয় নয় । আবার এটা ওতো ভাবা কি উচিত নয়? সামান্য চাকচিক্যে কসমেটিক উন্নয়নে পরবর্তী প্রজন্মকে বাপদাদার মূল সত্বা বা ভাটি বাংলার মূল অর্থনীতি থেকে বিমুখ করা। উন্নয়ন চাই উন্নয়ন হউক তবে সেটা হউক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য স্থায়ীকরন নট সাময়িক। দিরাই-শাল্লার এই রাস্তার উল্লেখিত উঁচু কান্দা-জাঙ্গাল সড়ক ছাড়া বাকি অংশ ফ্লাইওভার হলে পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গা বিশেষ স্লুইচ-গেইট এবং বর্ষার দিনে নৌযোগাযোগের কথা লক্ষ্য রেখে ব্রীজ করলে বর্ষায় পানি প্রবাহের কোন সমস্যা হবেনা। জমিও হারাবে না উর্বরতা ফলবে ফসল,নদী নালা খাল বিলেও থাকবে পানি প্রবাহ,মাছ করতে পারবে অবাদে বিচরন থেকে বংশবিস্তার।

কমরেড শ্রীকান্ত দাশ তাঁর লেখা ও সাংবাদিক আল আজাদ’র আলাপচারিতা ২০০২ সালের। তখন ফ্লাইওভার ঢাকাতে থাকলেও বাংলার হাওয়র অঞ্চল খ্যাত এই ভাটিদেশের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ‘রাস্তার ভাবনা’য় প্রথম শুনা। তখন আজকের পরিকল্পনা দূরের কথা এই মন্ত্রী পরিষদও ছিলনা। তবুও সাধুবাদ জানাতে হয় দেরীতে হলেও সেদিনের হালকার উপড় ঝাপসা ‘রাস্তার ভাবনা’ সুনামগঞ্জের অন্য উপজেলাকে কেন্দ্র করে আলোচনায় উঠেছে। নগর যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়ক সম্পর্কে বিখ্যাত স্থপতি লে কর্বুসিয়ের ১৯২২ সালে প্রথম গ্রেড সেপারেটেড হাইওয়ের কথা বললেও আমেরিকানদের মাঝে এই ধারণা জনপ্রিয় করে তুলেছিলো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনারেল মোটরস করপোরেশন। তবে এটাও সত্য নগর যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়ক শহরকেন্দ্রিক প্বার্শপ্রতিক্রিয়া থাকলেও হাওয়র যোগাযোগের উন্নয়নে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ভাবে কোন গবেষনা বা গবেষনধর্মী জার্নাল এখনও চোখে পড়েনি। যদিও এর প্যারালাল হাওর-বান্ধব হিসাবে আন্ডার-গ্রাউন্ড ব্যবস্থাও চিন্তা করা যায়। যাক এ বিষয়ে পরে লেখা যাবে।

বলা যায় ব্রিটিশ আমল বাদ দিলেও পাকিস্তান আমল ১৯৬২ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পূর্ত নির্মাণ বিভাগ থেকে বিভক্ত করে গণপূর্ত এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময় থেকে বর্তমান অবধি পর্যন্ত কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে কোন সরকার কি আজকের এই আলোচিত রাস্তায় কাজ করেনি ? বা হাওয়র উন্নয়ন বা সড়ক ব্যবস্থাপনায় যোগাযোগের জন্য মাটি ফালানো হয় নি ? উত্তরে আসবে না, অবশ্যই মাটি ফালানো হয়েছে। বরং বলা চলে কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মাটি কাটা চলে। আর এই মাটি কাটার নামে সড়ক উন্নয়নের যে বরাদ্ধ আসে তা সিংহভাগ চলে যায় যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের টেন্ডারধারীদের পকেটে। ফলে সরকারের বরাদ্ধ কৃত টাকাতো যায়ই সংগে চলে যায় বর্ষার বান-ভাসা ঢেউয়ে সড়কের মাটিও। ফলশ্রুতিতে এই মাটি আবার ফিরে গিয়ে নদী,খাল,বিল জমি ভরাট করছে। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি করছে বন্যা।
কাজেই বার বার প্রতিবছর একই কাজ না করে বা হাওরের মধ্যখানে স্থায়ী পাকা রাস্তা দিয়ে হাওর মাতার গর্ভাশয় নষ্ট বা বন্ধ্যা না করে পানির প্রবাহ ও তার গতিপথে কোন বিঘ্নতা না ঘটিয়ে ফ্লাইওভার দিলে হাওরের পরিবেশেও ঠিক থাকবে পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মও কৃষিবিমুখ না হয়ে এর সুফল ভোগ করবে বলে আশা করা যায়। যেহেতু অঞ্চলটি পরিপূর্ন কৃষিপ্রধান সবকিছু বিবেচনায় ফ্লাইওভারের(উড়াল সড়ক)বিকল্প নেই।

You might also like