করোনা ভগবান (আল্লাহ বা গড)

 দিলীপ মজুমদার

 

কত দিন হয়ে গেল। কত মাস চলে গেল। বন্দি হয়ে আছি  আমি, আমরা। সাদা-কালো-মুসলমান- খ্রিস্টান- হিন্দু সব্বাই।  হতাশায়, ভয়ে, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আছি। হতাশা আর ভয়টা জানেন সবাই। আমার হতে পারে, আমার প্রিয়জনের হতে পারে, আমার প্রতিবেশীর হতে পারে। কিচ্ছু নেই , দিব্যি সুস্থ , হঠাৎ ধরা পড়ল।তারপরে আপনি নির্বান্ধব, অপাঙতেয়, অচ্ছুৎ। দেখতে যাবে না কেউ। ফোন করবে না। যে ডাক্তার বা নার্স দেখবেন, তাঁদের মানুষ বলে মনে হবে না। তাঁরা বর্মাবৃত,  তাঁরা পারতপক্ষে ছোঁবেন না আপনাকে, মমতার স্পর্শ তো দূরের কথা। আর যদি মরে যান, তাহলে আপনি আর মানুষ নন। মানুষের লাশ নন। মানুষের লাশকে কত যত্নে দাহ করা  বা কবর দেওয়া হয়। আমাদের প্রবচন আছে শত্রু হলেও মৃতকে শ্রদ্ধা করো। করোনায় মৃত্যু হলে? লাশ বেওয়ারিশ। কবর-টবর নয়, পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। কে আগুন ধরাচ্ছে?  তারা কি মানুষের ছেলে? সারা শরীরে বর্ম আঁটা, মানুষের মতো  দেখতে, কারা তারা? এসব হতাশার কথা।  ভয়ের কথা। আপনারা জানেন, কিন্তু যা জানেন না তার কথা বলি।

আজ কিছুক্ষণ আগে আমার প্রতীতি হল। এর আগে আমি করোনাকে মানুষের তৈরি বলে সন্দেহ করেছি অনেকের মতো। তারপরে মনে হয়েছে করোনা প্রকৃতির   প্রতিশোধ। জুনোটিক সংক্রমণ ঘটিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি। ভুল, সেসব ভুল। আজ, এখন আমি নিঃসংশয় যে করোনাই ভগবান, আল্লা বা গড। কেন? ভগবানকে আপনি-আমি দেখতে পাই না। করোনাকেও। বিজ্ঞানীরা কি দেখছেন তাঁদের যন্ত্র দিয়ে, আদৌ কিছু দেখছেন  কিনা, জানিনা। যা দেখছেন, তা তো মায়াও হতে পারে। সবার দেখার মধ্যে কি অক্ষরে অক্ষরে মিল আছে?  নেই তো। তাহলে?

ভগবান ছলনা করেন মানুষের সঙ্গে। তার ভক্তি যাচাই করেন। করোনার ছলনাও অন্ত্যহীন। দেশে দেশে তার রূপ বদল। চিনে এক, তো ইতালি-ইংল্যান্ডে আরেক তার রূপ।

ভগবান সর্বশক্তিমান। করোনাও। বিজ্ঞানীরা বলছেন সে নাকি এক ক্ষুদ্র অণুজীব। কিন্তু তার শক্তির কথা ভাবুন। সারা পৃথিবীকে নাচিয়ে বেড়াচ্ছে। যে মানুষ তার বুদ্ধির গর্ব করে, মনে করে সে তার কল্পনায় ভগবানের জন্ম দিয়েছে, যে মানুষ জলে-স্থলে-আকাশে বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে বলে গর্বে আত্মহারা, সে মানুষকে কি রকম নাকাল করছে করোনা, ভাবুন একবার। ভগবানের বরপুত্র বৈজ্ঞানিক আর শয়তানের সহচর রাষ্ট্রনেতা আজ কত অসহায়। গবেষণাগারের অমূল্য যন্ত্রপাতি, আর শক্তিশালী অস্ত্র ও রক্তচক্ষু সব বৃথা গেল। অদৃশ্য ভগবান প্রমাণ করে দিলেন, মানুষের শক্তির ফুটুনিকা ডিব্বা ফুটা হো গিয়া।

উপায় না পেয়ে কতগুলো জালি কথা বলা হচ্ছে।  কি না, লকডাউন। ঘোড়ার ডিম হচ্ছে তাতে। কিছু দিন কম থাকবে, খুলে দিলে আবার যেই কে সেই। কারণ সে ভগবান। তার মৃত্যু নেই। সে অমর। বলা হল, স্যানিটাইজার ব্যবহার করো, বারবার হাত ধুয়ে নাও। তাতে যদি করোনাভগবান মরত, তাহলে পিপে পিপে অ্যালকোহল পান করলেই তো হত। ওষুধ খেয়ে আমরা শরীরের ভেতরকার জীবাণু মারি। কোন ওষুধে করোনা মরবে?  কেউ জানে না। এক একটা ওষুধ বেরোচ্ছে, দু-দিন বাদে বাতিল হচ্ছে।

গতকাল স্বপ্ন দেখে আমি আঁতকে উঠেছিলাম। দেখি, করোনা ভগবান মানুষকে শাসাচ্ছেন, ‘ব্যাটা ভগবান হয়েছেন! সব রহস্য ধরে ফেলেছেন বিশ্বের?  শালা কীটানুকীট, আমার রহস্যের আদিঅন্ত্য বুঝবি কি করে রে ব্যাটা’।

লেখক: কলামিষ্ট, ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট। 

You might also like