কোম্পানীগঞ্জে বন্যা: কৃষি,শিক্ষা ও যোগাযোগ খাতে ১০৩ কোটি টাকার ক্ষতি

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ কোম্পানীগঞ্জে বন্যায় কৃষি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগ খাতে প্রায় ১০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ক্ষতির তালিকায় আছে প্রায় ৯৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক। তলিয়ে গেছে ১৭১ হেক্টর জমির ফসল।ভেসে গেছে ১১৫টি পুকুরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো। পাথারচাউলি হাওরসহ কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। ক্ষতির তালিকা ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি বলেন, উপজেলার ১৭১ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এরমধ্যে বোরো ধান ৫২ হেক্টর, আউশধানের বীজতলা ৮৪ হেক্টর এবং শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল ৩৫ হেক্টর। এতে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে, কৃষকরা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি।

উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের নতুন জীবনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মিয়া জানান, গতবছর তিনি ২২ কাঠা ধান (১১০ মণ) ঘরে তুলেছিলেন। আশা ছিল, এবার আরও বেশি পাবেন। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে বন্যার পানিতে ধান তলিয়ে রয়েছে। ধানগাছে পচন ধরেছে। ফলে এবার ফসল ঘরে তোলার কোন আশাই নেই তার।লম্বাকান্দি গ্রামের কৃষক ইকরামুল হক জানান, এবার তিনি ছয় একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছিলেন। ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পুরোটাই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। একই অবস্থা হয়েছে কাঁঠালবাড়ি গ্রামের কৃষক উসমান খাঁনের। ৭ একর জমিতে ফলানো বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার ৬ ইউনিয়নের অনেক কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের অনেকেই বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেন নি।সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফখরুল আহমেদ জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় পাথারচাউলি হাওরের দু’টি অংশ ভেঙে গেছে। এছাড়া, আরও কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। টাকার হিসেবে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ইমরান জানান, উপজেলার ১৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেক পুকুরের পাড় ও অবকাঠামো ভেঙে গেছে। এতে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।উপজেলার ৬১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল হক। তিনি বলেন, এগুলো সংস্কার করতে প্রায় ২২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। তবে আর্থিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাকা রাস্তা ও ব্রীজ-কালভার্টের। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহ আলম জানান, বন্যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৯৯ কিলোমিটার গ্রামীণ পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া, ২৫টি ব্রীজ ও ৭৫টি কালভার্টের এ্যাপ্রোচ ভেঙে গেছে। এতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

You might also like