গুজবে সয়লাভ ফেইসবুক, পরিত্রানের উপায় কি?

 সুমন দেবনাথ

পৃথিবীর জনসংখ্যার ৪২% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, তন্মধ্য ২৯% সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত এবং ২৩% সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে। অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের অনেকগুলো প্লাটফর্ম রয়েছে যার সিংহভাগই যে কোন ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত চাইলে শুধুমাত্র একটা আসল অথবা ভুয়া ইমেইল একাউন্ট থাকলেই সে যে কোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে যে কোন অপরাধমুলক কর্মকান্ড সাধন করতে পারে। তাই বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্তিতির কারনে আমাদেরও সময় এসেছে যতটা সম্ভব নিরাপদ সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করা যাতে করে সহজেই যে কেউ চাইলেই এই সুন্দর সোশাল মিডিয়ার অপব্যাবহার করতে না পারে।

টেলিকমিউনিকেশন ও সোশাল মিডিয়া ডেভেলাপমেন্টে কার্যকরী পদক্ষেপের জন্য ও বর্তমান সময়কাল বিবেচনা করে সোশাল মিডিয়া মনিটরিং করা রীতিমত একটা চেলেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যার কারনে ইদানীং দেখলাম সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের ছয় পৃষ্টার গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে যার উদ্দেশ্য হলো সোশাল মিডিয়া ভালোভাবে মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রন করা। কিন্তু বলবাহুল্য উক্ত ছয় পৃষ্টার গাইডলাইনটি (http://d30fl32nd2baj9.cloudfront.net/media/2016/03/20/social-media-guideline-2016.pdf/BINARY/Social+Media+Guideline-2016.pdf) পড়ে আমার মনে হয়েছে এই গাইডলাইন দ্বারা সোশাল মিডিয়া সঠিক ভাবে মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়! পৃথিবীর অনেক দেশেই দেখবেন সোশাল মিডিয়া কঠোরভাবে মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রন করা হয় যেমন ধরেন চায়নাতে সেখানে যদি আপনি অনলাইনে কোন অপরাধমুলক কোন কথাবার্তা বলেন অফলাইনে দেখবেন আপনার বাসায় পুলিশ হাজির! যেহেতু আমরা (বাংলাদেশ) গনতান্ত্রীক দেশ এবং আমরা গনতন্ত্রে বিশ্বাসী সেহেতু আমরা এমন কঠিন নিয়মনীতি বা আইনকানুন করতে পারবো না, তাই আমাদের সরকারের হাতে যে সমস্ত রিসোর্স আছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা কিভাবে নিরাপদ সোশাল মিডিয়া ব্যবহার, মনিটর ও নিয়ন্ত্রন করতে পারি তা কেন এবং কিভাবে কার্যকর করতে পারি সেটা এখন আলোচনা করছি।

এক, ফেইসবুকে আমরা এখন প্রচলিত নিয়মে মানে ব্রাউজারে www.facebook.com টাইপ করলেই ফেইসবুকের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সহজেই ফেইসবুক ব্যবহার করতে পারি! না এখানে পরিবর্তন আনতে হবে, এমন একটা ব্যবস্তা করুন যাতে কেউ ফেইসবুকে ঢুকতে চাইলেই সেটা অটোমেটিক রি-ডাইরেক্ট হয়ে চলে যাবে www.facebook.com/verify/ নামক পেইজে সেখানে থাকবে ভেরিফিকেশন অপশন এবং সেখান থেকে প্রত্যেক ফেইসবুক ইউজার নিজের রেজিস্টেশন করা মোবাইল নাম্বার কিংবা এনআইডি নাম্বার দিবে তখন ঐ ভেরিফিকেশন পেইজ থেকে একটা কোড আসবে মোবাইলে যা এনটার করতে হবে ভেরিফিকেশন পেইজে যদি কোডটি সঠিক হয় তবে মাত্রই উক্ত ব্যবহারকারী ফেইসবুক ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন! আর এভাবে প্রত্যেকবার ফেইসবুক ব্যবহার করতে হবে সবাইকে এবং প্রতি ফেইসবুক আইডির লগ ডিটেইল্স থাকবে BRTC এর সরকারি সার্ভারে। তাহলে সহজেই বুঝা যাবে উক্ত আইডিটি কখন কে কোথা থেকে ব্যবহার করছে! যা সনাতন পদ্ধতিতে ফেইসবুক ফেইক আইডি IP address ট্রাক করাটা জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার কে সহজ করে দিবে। এই পদ্ধতিটি চালু করলে ফেইসবুক ব্যবহার করে অপরাধের পরিমান ৯৯% কমানো সম্ভব হবে কারন এ থেকে ফেইক আইডি ব্যবহার করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহজেই বেড় করতে পারবে এর নারী নক্ষত্র যেহেতু ব্যবহারকারীকে নিজের রেজিস্টেশন করা মোবাইল সীম ব্যাবহার করেই ফেইসবুক ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ফেইক আইডির মালিক ধরা পরলেও আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে বেড়িয়ে যায় বলে যে ঐ আইডিটি তার নয় বা হ্যাক হয়েছে বলে উক্ত অপরাধের দ্বায় এড়িয়ে যায়! মোবাইল ফোন ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে ফেইসবুক ব্যবহার করলে এধরনের পরিস্তিতি সম্পূর্নরুপেই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব যেহেতু উক্ত নাম্বারটি তার নামেই রেজিষ্টেশন করা! ঠিক একই পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনাদের গাইডলাইনে উল্লেখিত সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম যেমন ফেইসবুক, টুইটার, গুগুল+, ইউটিউব, স্কাইপ, ভিমো, লিংক্ডইন ও পিনটারেষ্ট এর ব্যাবহার কার্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রন ও মনিটরিং করতে পারবেন।

দুই, ইউটিউব থেকে যে কেউ যে কোন ধরনের অডিও ভিডিও ফেইসবুক সহ যে কোন সোশাল মিডিয়া সাইটে খুব সহজেই শেয়ারিং করতে পারি! পরিবর্তন এখানেও আনতে হবে! ভাবছেন কিভাবে? শুধুমাত্র ইউটিউব থেকে শেয়ারিং প্লাগইনটা ডিজেবল করে দিন যাতে করে ইউটিউব থেকে কেউ সহজেই ভিডিও শেয়ার দিতে পারবে না! এখন যদি কেউ কোন ভিডিও শেয়ার করতে চায় তাকে তার ফেইসবুক একাউন্ট থেকেই আপলোড করে শেয়ার করতে হবে! সে ক্ষেত্রে কেউ অপরাধমুলক কোন ভিডিও আপলোড করলে তাকে সহজেই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনে খুব সহজেই ঐ ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হবে। ঠিক এভাবেই ইউটিউব থেকে সকল সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও শেয়ারিং করার প্লাগইন ডিজেবল করে রাখতে হবে। যাতে করে ইউটিউব থেকে অনাকাঙ্খিত কোন ভিডিও সহজেই কেউ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ারিং করতে না পারে।

পরিশেষে, আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি যদি লেখাটি যথাযত কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তাহলে আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন যার সুফল আমরা একটু দেড়িতে হলেও পাবো যেহেতু বিষয়টা অনেক জটিল ও অনেকগুলো বড় বড় সোশাল মিডিয়া কোম্পানির সাথে ফলপ্রসূ আলোচনার ব্যাপার তাই আশা করছি একটু দেড়ি হলেও আমাদের ও পরবর্তী জেনারেশনের জন্য নিরাপদ সোশাল মিডিয়া করার স্বার্থই কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।

লেখক: সুমন দেবনাথ
ইংল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক ও অনলাইন এক্টিভিষ্ট।

You might also like