পাকিস্তানে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কবরস্থান ধ্বংস করে দিয়েছে

মতিয়ার চৌধুরী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সত্যবাণী

লন্ডন: পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ১৬ টি কবর ও একটি কবরস্থানে কবরের পাথরগুলি গুড়িয়ে দিয়েছে একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী। কবরস্থানে ইসলামিক প্রতীক ব্যবহার অভিযোগ এনে কবরস্থানটি ধ্বংশ করা হয়। উগ্রমতাদর্শে বিশ্বাসী কবরস্থানে হামলাকারীরা মনে করে আহমদিয়া সম্প্রদায় অমুসলিম আর একারণে কবরস্থানে হামলা চালানো হয়। আহমদিয়া জামাত পাঞ্জাবের মুখপাত্র আমির মাহমুদের মতে, ২২শে আগস্ট, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা লাহোর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে ফয়সালাবাদ জেলার চক ২০৩ মানাওয়ালায় একটি প্রাচীর ঘেরা কবরস্থানে আহমদীয়া মুসলিমদের ১৬ টি কবর সম্পুর্ণ ভাবে ধ্বংশ করে দেয় অন্য আরেকটি কবরস্থানের নাম ফলক ধ্বংশ করে।
পিটিআই-এর সাথে আলাপকালে মাহমুদ বলেন, এই কবরস্থানের বয়স ৭৫ বছর। এবং এর আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি অভিযোগ করেছেন যে এলাকার মুসলিম ধর্মগুরুরা আহমদীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন যার ফলশ্রুতিতে ধর্মীয় চরমপন্থীরা কবর স্থানে হামলা চালায়। এই ঘটনায় পাঞ্জাবের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। পাকিস্থানের উগ্রপন্থি মুসলিমরা মনে করে পাকিস্থান একটি ইসলামিক রাষ্ট্র এখানে অন্য কোন ধর্মের স্থান নেই। স্থানীয় কয়েকজন ধর্মজাজক ফতোয়া দিয়েছেন পাকিস্থান শুধু মুসলিমদের জন্য, অন্যধর্মের জন্য নয়। ওই ধর্মজাজকদের মতে শিয়া, আহমদিয়া, ইসমাইলিয়া, এজিদিয়া সম্প্রদায় মুসলিম নয়। তাদের ভাষায় ওয়াহাবি এবং সুন্নি ছাড়া আর কেউ মুসলিম হতে পারেনা।

পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা ন্যায়বিচারের জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে অতীতে ধর্মীয় উগ্রদের দ্বারা আহমদী সম্প্রদায়ের সদস্যদের কবর ধ্বংশ করা হয়েছিল। মাহমুদ বলেন, “এই বছরেই মোট ১৮৫ টি আহমদী কবর ধ্বংশ করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, “এই ক্রমাগত নিপীড়ন” আহমদী সম্প্রদায়ের অধিকারের সম্পূর্ণ অবজ্ঞার সাক্ষ্য দেয় এবং সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি করে। তিনি এই হামলা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দোষীদের জবাবদিহিতার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পাকিস্তানের সংসদ ১৯৭৪ সালে আহমদী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করে। এক দশক পরে, তাদের নিজেদেরকে মুসলিম বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাদের ধর্মপ্রচার এবং তীর্থযাত্রার জন্য সৌদি আরব ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তানে, ২২০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১০ মিলিয়ন অমুসলিম। রক্ষণশীল মুসলিম সখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরা প্রায়ই চরমপন্থীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এমন শত শত অভিযোগ রয়েছে। পাকিস্তানের মাইনরিটি হিন্দু, শিখ, খৃষ্টান এবং মুসলিম সংখ্যালঘু শিয়া, আহমদিয়া, এজিদিয়া এবং ইসমাইলিয়া মুসলিমরাও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেছেন।

You might also like