বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসংখ্য কর্মী গড়ার কারিগর আ.লীগ নেতা নুরুল আমিন

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তাানের শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও বর্বর অত্যাচার থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আপোষহীন সংগ্রাম পরিচালনা করার অগ্নি শপথপুষ্ট চেতনায় দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত আমাদের স্বাধীনতা আর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাঙালি জাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তেমনি একজন একাত্তরের রণাঙ্গনের অকুতোভয়় টগবগে তরুণ, মুক্তিযুদ্ধের সূর্য সন্তান, স্বাধীনতার বীর সেনানী ছিলেন নুরুল আমিন। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার খুরমা দক্ষিন ইউনিয়নের চৌকা গ্রামে তাঁর জন্ম। ২০২০ সালের ৩০ শে জুন। এই দিনে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। কেটে গেলো একটি বছর। প্র্রথম মৃত্যু বার্ষীকিতে অসংখ্য হিতৈষী, শুভাকাক্সক্ষী গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরন করেছেন। কোমল, কাক্সিক্ষত ও দুরন্ত অনুভুতি অনুভব করে আমি অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত হয়েছি। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা প্রকাশে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

ছাতক-দোয়ারা জনপ্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সভাপতি, খুরমা দক্ষীন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন আমার দেখা একজন দেশপ্রেমিক ও সৃজনশীল অসাধারন মানুষ ছিলেন। ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থা পট পরিবর্তন, উন্নয়ন বঞ্চিত সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি আমৃত্যু সচেষ্ট ছিলেন। স্থানীয়ভাবে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন অগ্রভাগের সৈনিক। আমি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ ছাতক উপজেলা শাখার আহবায়ক দায়িত্ব প্রাপ্ত হই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বে”্ছাসেবকলীগকে সুসংগঠিত করার জন্য তিনি আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে অনুষ্টিত সম্মেলনে অংশগ্রহন করে উৎসাহ প্রদান করেছেন। আওয়ামী ঘরানার কোন সভা-সমাবেশ হলেই সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ সময় দেখা না হলে খোঁজ নিতেন। শুধু ভালবাসা বা আদর শাষন নয়, একজন নেতা দেশপ্রেম,দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে কর্মী গড়ে তোলেন। প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসংখ্য কর্মী গড়ার কারিগর ছিলেন। কিছু সত্য অপ্রিয় হলেও সত্য। যদিও অপ্রিয় সত্য বলতে মানা। তবুও না বললেই নয়। তাদের মধ্যে দু’একজন চেনা পথে পথ হারিয়েছেন। কিন্ত তিনি বার বার তাদের আগলে লাখার চেষ্টা করেছেন। কখনো রাগ করেন নি, অভিশাপ দেননি। তাঁর প্রথম মৃত্যু বার্ষীকিতে এমন দু’একজনের চোখে জল দেখে আবেগ আপ্লত হয়েছি। তবে চোখের জল যেনো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য না হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিধ ছিলেন। জীবনে লোভ-লালসা তাকে স্পর্শ করেনি। ক্ষনজন্মা নুরুল আমিনের শুন্যতা পুরন হবার নয়। দীর্ঘ দিন পর হলেও তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে সে জন্য ধন্যবাদ জানাই। নুরুল আমিন একটি কথা প্রায়ই বলে থাকতেন, বঙ্গবন্ধুর তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। স্থানীয় ভাবে ছাতক-দোয়ারা বাজার আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের নেতৃত্ব আমাকে আশাহ্নিত করেছে। তাতে জীবন সায়াহ্নে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখে যেতে পারবো এই আশা পোষন করতেই পারি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকালীন ছাতক-দোয়ারার বিভিন্ন স্পর্ট ঘুরের দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অধ্যক্ষ ইদ্রিশ আলী (বীর প্রতীক) ও আব্দুল মজিদ (বীর প্রতীক) এর সঙ্গে একান্ত পরিবেশে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিনের মুক্তিযুদ্ধের কিছু অভিজ্ঞতা আমার জানার সুযোগ হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর দুপুরে হঠাৎ আমাকে ফোন করে তাঁর বাসায় যেতে বলেন। এভাবে তিনি আর কখনো বলেননি। তাই আমিও একটু দ্রুত ছুটে গেলাম। তখন ছাতক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটি গঠন করা হবে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। আমার হাতে একটা ডায়রী দিয়ে বলেন, যুদ্ধকালিন কিছু স্মৃতি আমি বলবো তোমাকে নোট করতে হবে। আমার মন বলছে তোমাকে দিয়েই যুদ্ধকালিন স্মৃতিচারন লিপিবদ্ধ করি। অবশ্যই তিনি ছাতক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটির সভাপতি মনোনিত হয়েছিলেন।

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধকালিন ঘটে যাওয়া সংক্ষিপ্ত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করার সুযোগটি আমি হাতছাড়া করতে চাইনি। সেই দিন টানা ১৬ ঘন্টা চা বিরতির মধ্য দিয়ে যুদ্ধকালিন ঘটনা শুনছিলাম এবং লিখছিলাম। আমাকে সহযোগীতা করেন তাঁর মেয়ের জামাই সিলেট জেলা বারের আইনজীবি এডভোকেট মনিরুজ্জামান সেলিম। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন যখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তখন সেটা আমাকে কতটা কৌতূহলী করে তুলেছিল ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

মানুষের যতগুলো অনুভুতি আছে তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর অনুভুতি হচ্ছে ভালোবাসা। আর এই পৃথিবীতে যা কিছুকে ভালোবাসা সম্ভব তার মাঝে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসাটুকু হতে পারে শুধুমাত্র মাতৃভূমির জন্যে। যারা কখনো নিজের মাতৃভূমির জন্যে ভালোবাসাটুকু অনুভব করেনি তাদের মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই। আমাদের খুব সৌভাগ্য আমাদের মাতৃভূমির জন্যে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল তার ইতিহাস হচ্ছে গভীর আত্মত্যাগের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস এবং বিশাল এক
অর্জনের ইতিহাস। যখন কেউ এই আত্মত্যাগ, বীরত্ব আর অর্জনের ইতিহাস জানবে, তখন সে যে শুধুমাত্র দেশের জন্যে একটি গভীর ভালোবাসা আর মমতা অনুভব করবে তা নয়, এই দেশ, এই মানুষের কথা ভেবে গর্বে তার বুক ফুলে উঠবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বুকের ভেতরে ছিল সীমাহীন সাহস আর মাতৃভূমির জন্যে গভীর মমতা। এই মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা বলে কখনো শেষ করা যাবে না। আমাদের মাতৃভূমির যে মাটিতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, ওপরে তাকালে যে আকাশ আমরা দেখতে পাই কিংবা নিঃশ্বাসে যে বাতাস আমরা বুকের ভেতর টেনে নেই, তার সবকিছুর জন্যেই আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঋণী। সেই ঋণ বাঙালি জাতি কখনোই শোধ করতে পারবে না।পরিশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের নিকট বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিনের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তাকে যেনো জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন। আমিন

লেখক: শামীম আহমদ তালুকদার সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী।

You might also like