বাংলাদেশে ইভ্যালীর প্রতারনা: এর শেষ কোথায়?

 সুমন দেবনাথ

“মাগনা পাইলে মানুষ আলকাতরাও খায়”! এই লাইনটিকেই প্রতিপাদ্য করে ইভ্যালীর রাসেল ভাইয়েরা দাঁড় করিয়ে ছিলেন অনলাইনে ঈসার টুপি মুসাকে পড়ানোর ব্যবসা! টার্গেট ছিলো সেই আলকাতরা খাওয়া মানুষগুলো!

আরেকটু খুল্লামখুলে বললে; রাসেল ভাইয়েরা হট ধামাকা টাইপের অফার দিয়ে, আঁই মিন যে কোন প্রোডাক্টের ম্যানুফ্যাকচারিং কস্টের চেয়েও কম দামে ধামাকা অফার দিয়ে আলকাতরা খাওয়া সেই মানুষগুলোকে এক করা! তবে শর্ত থাকে যে ৪৫ দিনে তারা প্রোডাক্ট ডেলীভারি দিবেন!!

ওঁকে এবার শুরু হলো রাসেল ভাইয়ের ধামাকা, এবার প্রথম ব্যাচের (৪৫ দিন পর্যন্ত) যে আলকাতরা খাওয়া পাবলিক রাসেল ভাইদের পকেটে ধরেন ৫০০ কোটি দিলেন। তখন রাসেল ভাই, সেই ৫০০ কোটি দিয়ে প্রথম দিনের গ্রাহকদের পন্য ডেলিভারি দিয়ে দিলেন! ব্যাস হয়ে গেলো মার্কেটিং এর বিখ্যাত কনসেপ্ট Words of mouth এর ম্যাজিক। পন্য পাওয়া সেই গ্রাহকগুলো অনলাইনে পজেটিভ রিভিউ দিলেন সাথে সাথে ঐ যে ‘আলকাতরা খাবে কিনা’ এ নিয়ে দুটানায় ছিলো যারা তারাও খাওয়ার দলে যোগ দিলেন! ব্যাস চারদিকে রাসেল ভাই দেশের জ্যাঁক ম্যাঁ ম্যাঁ হয়ে গেলেন! এবার উনাদের আটকায় আর সাধ্য কার? এভাবে তিনি সাধারন মানুষের শত শত কোটি টাকা নিজের পকেটস্থ করে ফেললেন।

প্রথম ব্যাচের পরে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ক্রস করে শত শত ব্যাচ হলো ঠিক এভাবেই রাসেল ভাইদের ব্যাংক একাউন্ট ফুঁলে বটগাছ হলো আর ভাইয়া মনে মনে গান ধরেন; “আমার আনন্দের আর সীমা নাই গো প্রাণবন্ধুয়া আসিয়াছে ঘরে তে”! পানির মত টাকা আসতেছে দেখে রাসেল ভাই শুরু করলেন কৈ মাছের তৈলে কৈ ভাজা! কিভাবে? তিনি গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির পেডিকিওর ম্যানিকিওর করাতে লাগলেন আঁই মিন, কোম্পানির সমূদয় খরচ গ্রাহকদের টাকা থেকে খরচ করতে লাগলেন খুশিতে ঠেলায়!

রাসেল ভাইয়েরা ভেবে ছিলেন তাদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে পানির মত পই পই করে টাকা আসা জীবনেও বন্ধ হবে না! তাই ভাবীদের বিউটিপার্লারেও যাতায়াত বেড়ে গেল! টাকা কে দিবে? ঐ যে বাংলার নতুন গৌড়ি সেন রাসেল ম্যাঁ ম্যাঁ… অর্থ্যাৎ গ্রাহকদের টাকা তিনারা নিজের মনে করে দেদারছে খরচ করতে লাগলেন!

এবার রাসেল ভাই গান ধরলেন, হাজার হাজার সাপ্লাইয়ার নিয়ে পরছি আমি ফাঁন্দে, একটারে পেইড করলে আরেকটায় কাঁন্দে!! অর্থ্যাৎ ঝামেলা শুরু হয়ে গেলো! এবার আর গ্রাহকদের তিনি পন্য ডেলিভারী দিতে পারছেন না ১০০ দিন পার হয়ে গেলেও! কেন? ঐ যে তিনি টাকা সব খরচ করে ফেলেছেন কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে! এতে করে সাপ্লাইয়ারও আর বাকিতে মাল বিক্রির টাকা পাচ্ছে না সাথে করে নতুন মালও দিচ্ছে না! এভাবে ভেঙ্গে পরলো রাসেল ভাইয়ার প্রতিষ্ঠিত বাটপারি সাপ্লাই চেইন! এখন কেউই আর অর্ডার করা পণ্য পাচ্ছেন না! রাসেল ভাইয়ার দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরছেন আর বলছেন; ছাঁইড়া দে মা আর আলকাতরা চাই না! কিন্তু হায় এখন অনেক লেইট হয়ে গেছে রাসেল ভাইয়ার পকেট অলরেডি ফাঁকা কোম্পানির একাউন্টেও নাই কোন টাকা!

এখন রাসেল ভাইয়ের ঘাড় ধরে বানিজ্যমন্ত্রনালয় বলে, এক দফা এক দাবি টাকা গেলো কোথায় বলো! ই-ক্যাবও বলে কি করেছিস ব্যাটা খুলে বল এবার!

সম্মানিত রিডির; ধন্যবাদ কষ্ট করে এই পর্যন্ত পড়ে আসার জন্য। এবার আসুন আলোচনা করি বাংলাদেশে এই সমস্ত অনলাইন বিজনেস এর নিয়ন্ত্রন নাই কেন? এসব ব্যাঙের ছাতারমত অনলাইন বিজনেসের জন্য দায়ী কারা? এর থেকে পরিত্রানের উপায় কি?

এক) বানিজ্যমন্ত্রনালয়: বাংলাদেশে সব ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে বানিজ্য মন্ত্রনালয়। কে কোন ধরনের ব্যবসা করে, কি পন্য নিয়ে করে, তাদের গ্রাহক সেবা কি অর্থ্যাৎ তাদের বিজনেস মডেল কি, তাদের ব্যবসা কিভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারন করে বানিজ্য মন্ত্রনালয়। এবার প্রশ্ন হলো রাসেল ভাইয়েরা মিলে কিভাবে এই ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমতি পেলো? তাদের মূলধন কেমন ছিল? তাদের ব্যবসা পরিচালনা কারা মত পিজিক্যাল ও ফিনান্সিয়াল ক্যাপাসিটি আছে কিনা তা কেন বানিজ্যমন্ত্রনালয় যাচাই করে দেখেনি?

দুই) ই-ক্যাব: যারা দেশের অনলাইন মার্কেটপ্লেসের দেখভাল করে থাকেন। ইনারাও কি চোখ বন্ধ করে ছিলেন ইভ্যালীর বাটপারি কাম প্রতারণা তাদের চোখে পড়েনি?

যে কোন ব্যবসায় যদি আপনি ৪০% প্রোফিট করতে না পারেন তাহলে আপনি লং রানে মার্কেটে টিকতে পারবেন না ফর শিউর। এখানে ইভ্যালী প্রোফিটের বদলে হিউজ ডিসকাউন্টে পন্য বিক্রি করেছে যাকে বলে আনফেয়ার কম্পিটিশন! এই আনফেয়ার কম্পিটিশন হল, যখন বাজার ধরার আশায় আপনি যে কোন পণ্য উৎপাদন খরচের চেয়েও কম খরচে বিক্রি করে থাকেন অর্থ্যাৎ লসে পণ্য বিক্রি করেন যাতে মার্কেট থেকে কম্পিটিটর বিদায় হয়ে যায়! তখন আপনি মার্কেটে মনোপলি সৃষ্টি করে হিউজ প্রোফিটে পণ্য বিক্রি করে আগের লস তুলে নিবেন! এটাও ইলিগ্যাল অনেক দেশে! এটাকে বলে আনফেয়ার কম্পিটিশন।

আজকের খবর; ইভ্যালীর প্রতারনা থেকে সাধারন মানুষকে মুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইভ্যালীর রাসেলকে গ্রেফতার করেছে। আশা করি এর মাধ্যমে সাধারন মানুষ তাদের বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পাবেন ও বাংলাদেশে অনলাইন প্লাটফর্ম যাতে নিরাপদ থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

লেখক: ইংল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক।
Sumon_lus@yahoo.com

You might also like