বাউন্ডুলের ‘স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী’ ভাবনা

 চৌধুরী ফরহাদ

 

রাজনীতি মানে শ্রেষ্ঠনীতি। রাষ্ট্রের সেবা, রাষ্ট্রবাসীর সেবা এর নাম হল রাজনীতি।

টাকা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, বাড়ি-গাড়ি, সুন্দরী নারী অর্জন এর নাম রাজনীতি নয়; অতীত রাজনীতি আর বর্তমান রাজনীতি মাঝে ব্যবধান আকাশ আর পাতাল।

হাল আমলে রাস্তায় রাস্তায় বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টানিয়ে কিংবা কতিপয় ক্যাডার বাহিনী নিয়ে শো-অফ করার নাম রাজনীতি নয়। যদি এর নাম রাজনীতি হত তাহলে ক্ষুদিরাম-সূর্যসেনকে ফাঁসিতে ঝুলতে হত না। ব্রিটিশের শাসনের অবসান হত না। সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারদের রক্ত দিতে হত না; বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন হত না!
যদি এর নাম রাজনীতি হত তবে ৬৯-এ আসাদের বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হত না; আইয়ুবের পতন হত না। যদি এরই নাম হত রাজনীতি তবে, মুক্তিযুদ্ধ হত না; লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানী শাসন থেকে মুক্ত হয়ে একটি বাংলাদেশ রাষ্ট্র হত না। যদি এরই নাম রাজনীতি হত তাহলে স্বৈরাচার নিপাতে ডাঃ মিলন, তাজুল, নুর হোসেনদের আত্মাহুতি দিতে হত না।

আজ রাজনীতির নামে যা হচ্ছে তার সবটাই ভন্ডামী, ৯৯% মানবকে ১% দানবেরা যেনতেন উপায়ে শাসন-শোষনে লিপ্ত। কিন্তু, যে আকাংখা নিয়ে একুশের চেতনাকে বুকে ধারন করে বাঙালী জাতিসত্তা জাগরিত হয়েছিল, যে বাঙালিরা একটি মানবিক-বৈষম্যহীন-প্রগতিশীল কল্যান রাষ্ট্রের অমোঘ স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল তা আজও পূরন হয়নি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চলেছে।
১৯৭১ সালের মহা গৌরবময় রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত এই ২০২১ সালে বাংলাদেশে বসে এখন প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনীতির সংজ্ঞা বিশ্লেষন করতে হয়? আত্মদানকারী মহান বীর শহীদদের জন্য এর থেকে চরম লজ্জার অপমানের আর কি থাকতে পারে?

সব কিছু উল্টে দিয়ে রাজনীতি থেকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের নির্বাসনে পাঠিয়ে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ঘটানোই হল বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাস!! এই রাজনীতির (পড়ুন অপরাজনীতি) নামে শুধু কতিপয় শ্রেনীর খাই-খাই, কতেক শ্রেনীর ভাগ-বাটোয়ারা আর কতেকের লাভের গুড় সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে বা কানাডায় বেগমপাড়ায় আলিশান বাড়ি তৈরি হয়েছে!! এর জন্য কি ত্রিশ লাখ মানুষ আত্মদান করেছিল? এমন রাষ্ট্রের জন্য কি মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি?

কোন সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্রে কেউ রাজনীতি করে কোটি-কোটি টাকার মালিক হলে রাষ্ট্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচারের আওতায় এনে বিচার করত। উন্নত দেশে রাজনীতিবিদদের টাকার মালিক হওয়া একটি গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য হয়। দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ উদাহরন। আবার শুদ্ধ রাজনীতির সমসাময়িক বড় উদাহরন তৈরি করেছেন জার্মানীর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। যেহেতু, বাংলাদেশ জাতিসংঘের ঘোষনা অনুযায়ী এখন থেকে ‘উন্নত দেশে’ তাই আমি বাংলাদেশের সূবর্ণ জয়ন্তীতে আশাকরি যে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ-জনপ্রতিনিধি-আমলা-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নৈতিক চরিত্রের যথার্থ উন্নতি ঘটবে।

পরিশেষে- একটা গানের লাইন মনে পড়ছে- ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে…….!
দেশের অর্থনীতির চাঁকা সচল রাখে কৃষক-শ্রমিক-প্রবাসীরা অথচ মোটা হয় হালের নেতা-খেতারা!! তাদের সাগরেদরা। এই ঘুনপোকাদের দমন করা অতীব জরুরী।

চৌধুরী ফরহাদ: রাজনীতিক, হবিগঞ্জ জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক

You might also like