রাজনৈতিক হিংসা,আইনশৃঙ্খলা ও ৩৫৬
দিলীপ মজুমদার
পশ্চিমবাংলার রাজনীতি জগতে এখন চাপান-উতোরের খেলা।বিষয়: রাজনৈতিক হিংসা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ।অভিযোগকারী বিজেপি,যাঁরা এখন রাজ্যের একমাত্র বিরোধী দল।তাঁদের বক্তব্য নির্বাচনের পরে তৃণমূলের অত্যাচারে তাঁদের প্রায় ৪০ জন মানুষ মারা গেছেন,হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া।তৃণমূল অর্থাৎ শাসক দল বিজেপির এই অভিযোগকে মনগড়া বলছেন।দুই পক্ষই একপেশে কথা বলছেন,এবং রাজনৈতিক তরজা করছেন । এটা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগ । সেই মিডিয়ায় মারধোরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, শাসক দলের পতাকা দেখা যাচ্ছে।আবার কোথাও কোথাও,বিশেষত বিজেপি যে জায়গায় জিতেছিল, সেখানে আক্রান্ত হচ্ছে শাসক দলের কর্মীরা।আইন-শৃঙ্খালর অবনতির কথা বলে রাজ্যের বিজেপি নেতারা ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের ওকালতি করতে শুরু করেছেন ।
বিজেপির অভিযোগের সত্যতা কিছু যে নেই তা নয় । কিন্তু নির্বাচনে ভরাডুবির পরে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে অভিযোগ ছাড়া তাঁদের আর কি করার আছে ! এর সঙ্গে এখন নতুন যুক্ত হয়েছে ইয়াস-পরবর্তী দুর্নীতি, এবং টিকা সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ ।তাঁরা ঘোষণা করেছেন করোনাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে গেলেই আন্দোলনের পথে নামবেন ।বিজেপির অভিযোগের সত্যতা মেনে নিয়েও তৃণমূলের পক্ষে কিছু যুক্তি উথ্থাপন করা যায় ।নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত, এরকম ধারনা করে বিজেপি নেতারা, বিশেষ করে রাজ্য সভাপতি, দলবদলু মিঠুন চক্রবর্তীরা দারূণ উস্কানিমূলক কথা বলেছিলেন বিভিন্ন সভায় । শাসক দল বলছেন যে বর্তমানের কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা সেইসব উস্কানিমূলক কথারই জের । একথা বলা মানে হিংসার ঘটনা যে ঘটছে, তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেওয়া ।
যে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সেই নির্বাচনে পরাজয়ের জ্বালা বিজেপি নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছেন না।একথা ঠিক যে ফলাফল ঘোষণার একেবারে পরের দিন থেকেই বিজেপি রাজনৈতিক হিংসা ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ করে আসছিল।নিয়মিতভাবে টুইট বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন রাজ্যপাল । এবার এই ফাঁদটাই পাত্ছে বিজেপি।দুর্ভাগ্য,শাসকদল সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।বিজেপির বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলছেন।মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পথ গ্রহণ করলে তাঁরা আখেরে লাভবান হতেন।বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের টুইট পড়ে চন্দ্রিমা তাঁর কাছে ঘরছাড়াদের তালিকা চান,এবং তাঁদের ঘরে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দেন।রাজনৈতিক হিংসার বলি কে কে হয়েছেন,কারা কোথায় ঘরছাড়া, সে তালিকা বিজেপির কাছে চাইতে পারেন শাসক দল,তা পর্যালোচনার জন্য কয়েকজন বিজেপি ও কয়েকজন তৃণমূল সদস্যের একটা কমিটি গড়তে পারেন, এবং সেই কমিটির হাতে সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন।তাহলে বিজেপির ফাঁদটা নিরর্থক হয়ে যাবে ।
লেখক: কলামিষ্ট, ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।