স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল

 আকবর হােসেন

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল বা স্বাস্থ্যই সম্পদ – নীতি কথাগুলাে আমরা সবাই জানি।এই জানা কথার আলােকেই আমার আজকের লেখা। নীতিবাক্য বিলানাের আগে নিজেকে তা পালন করতে হয়। আমি আজ যা লিখবাে তার অনেক কিছুই পালনের চেষ্টা করি। গুণীজনরা বলেছেন সবকিছু পালন করতে না পারলেও ভালাে কথা,যা সবার জন্য উপকারি তা ছড়িয়ে দেয়াই কল্যাণকর। সেকারনেই লিখতে হচ্ছে।দুনিয়ায় অঢেল ধন সম্পদ থাকার পরও যদি কারো মন ও শরীর ভালাে না থাকে তাহলে সবকিছুই বরবাদ। যেমন নৌকাডুবির সময় সাতার না জানলে ষােল আানাই মিছে। শরীরের সাথে মনের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জীবিকার তাগিদে যে যে পেশায়ই নিয়ােজিত থাকিনা কেনাে শরীর ও মনের দিকে যথেষ্ট খেয়াল নজর রাখা উচিত। আমরা যতাে ওয়াজ নসীহত বা বক্তৃতা শুনি সেখানে মন ও শরীর নিয়ে আলােচনা খুব কমই শােনা যায়। অথচ আমরা জানি শরীর ভালাে না থাকলে কাজে কর্মে এমনকি ইবাদাত বন্দেগীতেও মন বসানাে খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

আমীরা আইয়াদ লিখিত শরীর ও মন বিষয়ক খুবই সুন্দর একটি বই – হিলিং বডি এন্ড সউল পড়ে আমি অনেক উপকার পেয়েছি। এছাড়া কােয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত কাের্স থেকেও অনেক কিছু জানতে পেরেছি। সম্ভবতঃ দুই হাজার সাত/আট সালে দেশে গেলে তাদের সাথে পরিচয় হয় আমার বন্ধুর ছােট ভাই প্রভাষক আশিকুজ্জামানের (বর্তমানে কানাডা প্রবাসী) মাধ্যমে। সিলেট রােজভিউ হােটেলে আয়ােজিত চারদিনব্যাপী মেডিটেশন কাের্সে আমার মাকে নিয়ে গেলে আমরা যথেষ্ট উপকার পাই। প্রথমদিকে আমি যােগ না দিলেও দুদিন সেখানে আসা যাওয়া করেই আমি বুঝতে পারি যে এই কাের্স আমার মতাে সবারই করা প্রয়ােজন। তাই দ্বিতীয় দিন থেকে আমিও যােগদান করি এবং কাের্স সমাপ্ত না করেই আমাকে ফ্লাইটের কারণে লন্ডনে চলে আসতে হয়। কােয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মূল আকর্ষণ গুরুজীর কথাগুলাে যেনাে সব সময় কানে বাজতে থাকে। ধীরে ধীরে দম নিন, ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। সুস্থ শরীর, প্রশান্ত মন, কর্ম ব্যস্ত সুখী জীবন। ওই দমের খেলায় তিনি লাখাে মানুষকে মাতিয়ে রেখেছেন। তিনি এক বিষ্ময়কর মানুষ। যার সান্নিধ্যে না গেলে কেউ বুঝতে পারবেনা কী অসাধারণ ব্যক্তি তিনি। শরীর ও মন নিয়ে এতাে ভালাে একটি প্রােগ্রাম তিনি সাজিয়েছেন যা আমাদের সবারই জানা এবং অনুশীলন করা উচিত যদিও এ নিয়ে ভিন্নমতও আছে। আমার জীবনে এটি একটি মােড় পরিবর্তনকারী সবক ।

আরেকটি শিক্ষা পেয়েছি প্রি ডায়াবেটিস কাের্স থেকে। সেটাও আমাদের সকলের স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য খুবই জরুরী। কভিড19 এর ক্রান্তিকালে যেভাবে এথনিক মাইনােরিটি কমিউনিটি সাদা মানুষ থেকে কয়েকগুন বেশি হারে আক্রান্ত হচ্ছে সেক্ষেত্রে নিজেদের লাইফ ষ্টাইল পরিবর্তন করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে যদিও এর সাথে বর্ণবাদসহ আরাে নানাবিধ কারণ রয়েছে।সর্বশেষ টিপস্ পেয়েছি ডাঃ জাহাঙ্গীর কবীর সাহেবের ভিডিও থেকে। তিনি বিনা ঔষধে দৈনন্দিন খাবারদাবার পরিবর্তন করে কিভাবে রােগ মুক্তি লাভ করা এবং সুস্থ থাকা যায় তার সবক দিয়ে যাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি যেখানে ঔষধের উপর ভাসছে সেখানে মানুষকে লাইফ ষ্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকার পরামর্শ দেয়া নিঃসন্দেহে একটি ভালাে কাজ। যদিও পুরাে দেশ যেখানে অসুস্থ সেখানে শুধু উপদেশ দিয়ে রােগ সারানাে একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু মানুষ তাে ভালাে হচ্ছে, সুস্থতা ফিরে পাচ্ছে ঔষধ ছাড়াই। সর্বােপরি ডাক্তার বাণিজ্য আর ঔষধ বাণিজ্যের খপ্পর থেকে মানুষ মুক্তি পাচ্ছে।

আরাে কিছু ন্যাচারাল ফুড সাপ্লিমেন্ট আছে যা খেলে আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। অবশ্য এটি নিয়েও বিতর্ক আছে – ফ্রেশ ফুড না সাপ্লিমেন্ট। ফরএভার লিভিং প্রােডাক্টস বিশেষ করে আলােভেরা জেলের এর কথা অনেকেই শুনেছেন। আমি আর বিস্তারিত তথ্যে যাচ্ছিনা। এবার সুস্থ থাকার কিছু টিপস এবং আমাদের খাদ্য তালিকা নিয়ে কিছু আলােচনা করতে চাই। লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় শুধু জরুরী বিষয়গুলােই উল্লেখ করবাে। তবে যারা অসুস্থ যেমন হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস কিংবা অন্যকােন রােগে অসুস্থ তারা কােন অবস্থাতেই চােখবুজে আমার দেয়া খাবার তালিকা বা টিপসগুলাে আমলে না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।

ইতিবাচক চিন্তাঃ
জীবন ও জগত সম্পর্কে মন থেকে সর্বপ্রকার নেতিবাচক চিন্তাকে পরিহার করে ইতিবাচক চিন্তার বীজ বপন করতে হবে। নেতিবাচক চিন্তা মনকে খুড়ে খুড়ে খায়। কােন কাজের শুরুতে ভালাে করে নিয়ত করুন, কাজটি সুচারুরূপে করুন এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। এটি অসুখ বিসুখের বেলায়ও প্রযােজ্য। ইতিবাচক চিন্তা ভালাে থাকতে অনেক সহায়তা করে।

রাগ কমানঃ গুরুজীর কাছ থেকে শিখেছি – রেগে গেলেন তাে হেরে গেলেন। কাজটি খুবই কঠিন। তবে সাধনা করলে একসময় সহজ হয়ে যাবে। রাগের মাথায় কােন সিদ্ধান্ত নেবেন না। যে রাগ বা ক্রােধ সংবরণ করতে পারে সেই হচ্ছে প্রকৃত বীর। রাগ উঠলে আপনি স্থান পরিবর্তন করুন। দাঁড়ানাে থাকলে বসে পড়ুন, বসেও না কমলে শুয়ে পড়ুন। এমনকি অজু করুন তাহলে রাগ কমে যাবে।

টেনশন করবেন না, মাথা ঠান্ডা রাখুনঃ নাে টেনশান। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করুন ভালাে ফল পাবেন। দুঃশ্চিন্তা করে ঘুম হারাম করবেননা। যে জিনিষের কােন নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে নেই তা নিয়ে অযথা দুঃশ্চিন্তা করে সময় নষ্ট করবেননা। আমাদের দেশে মাথা গরম মানুষের সংখ্যা অনেক। ঠাস্ করে মানুষ রাগ করে ফেলে এবং ঝগড়া ফাসাদে লিপ্ত হয়ে যায়। এগুলাে পরিহার করতে পারলে জীবন অনেক সুন্দর হবে। শিক্ষা মানুষকে অমায়িক, নম্র ও ভদ্র বানায়। পাশ্চাত্যের দেশে ছােটখাটাে জিনিষ নিয়ে ঝগড়া ফাসাদ খুব কমই দেখা যায় অথচ আামাদের দেশে তরকারীতে লবন কম হলে স্বামীর গায়ে যেনাে আগুন জ্বলে।

পুরনাে দুঃখ মনে বয়ে বেড়াবেন নাঃ যা হবার হয়ে গিয়েছে। এটি নিয়ে অযথা মন খারাপ রাখবেন না কিংবা বারবার টেনে আনবেননা।এতে মনে কষ্ট পাবেন। অতীতের ভূল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করুন।যদি এভাবে করতাম তাহলে ফলাফল এরকম হতাে এ জাতীয় চিন্তা করে এখন আর লাভ হবে না। যখন যেটা করবেন তখন মনকে সেখানেই আটকিয়ে রাখবেন এবং সেকাজে মনােনিবেশ করবেন। মনকে নিয়ন্ত্রণও একটি বিরাট কাজ।

শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি দমের ব্যায়ামও করুনঃ নাক দিয়ে দম নেবেন পেটে এবং ছাড়বেন মুখ দিয়ে। এটিকে এ্যাবডােমিনাল ব্রিদিং বলে। প্রানায়াম এবং নাসায়ান করুন। ধীরে সুস্থ্যে মন দিয়ে নামাজ পড়ুন। নামাজের পর দােআ, জিকিরের মাধ্যমে মনের গভীরে যেতে পারেন। নিয়মিত ধ্যান, মােরাকাবা বা মেডিটেশন করুন অনেক ভালাে লাগবে। কােয়ান্টাম মেডিটেশন ইউটিউব থেকে শিখতে পারেন।

সর্বদা হাসিখুশি থাকুনঃ মন খারাপ না করে সর্বাবস্থায় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। আল্লাহর শুকরগােজারী বান্দা হতে পারলে মন খারাপ থাকবেনা। অন্যের ভালাে দেখলে দুঃখিত না হয়ে নিজেও খুশি হােন। অন্যের কল্যাণ কামনা করুন তাহলে আপনিও কল্যাণপ্রাপ্ত হবেন। অল্পে তুষ্টি মনে শান্তি আনে।ভালাে করে হাসাও একটি ব্যায়াম। আবার মাঝে মাঝে কান্নাও বেশ উপকারী। এতে দীল নরম হয়। আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা, কােরআন তেলাওয়াত করে ইমােশনাল হওয়া। গান/নাশিদ, কবিতা, প্রকৃতির সৌন্দর্যও মানুষকে ইমােশনাল বানায়।

চ্যারিটির কাজ করুনঃ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত রাখুন। এতে অনেক ভালাে থাকবেন। পরােপকারী মানুষের জন্য অনেকেই দােআ করে। সব কাজ সহীহ নিয়ত অনুযায়ী সাদকায়ে জারিয়া হবে যা আপনার পূণ্যকে অনেক বাড়িয়ে দেবে। দান খয়রাতে বালামুসিবতও দুর হবে।

পরিমিত পানি পানঃ প্রতিদিন পরিমিত পানি পান করুন। ডাবের পানি খুবই ভালাে। ফিজি ড্রিংক্স যেমন কােকাকােলা, পেপসি বা জুসের নামে মিষ্টি শরবত পরিহার করতে পারলে সুগার থেকে মুক্ত থাকা সহজ হবে। জুস খেলে ফ্রেশ জুস খাবেন। সকালে খালি পেটে এক দুই গ্লাস পানি সাথে এক চামস মধু এবং লেবুর রস পান ফ্যাট কমাতে সহায়তা করে । এটি রাতেও পান করা যায়। কুসুম গরম পানি পান করুন। ঠান্ডা পানির চাইতে গরম পানি ভালাে। চায়ের মতাে শুধু গরম পানিও পান করতে পারবেন।

কার্বের পরিমাণ কমানঃ ভাত, রুটি, পাস্টা, কেক, বিস্কিট ইত্যাদিতে অনেক সুগার ও কার্ব থাকে। একবেলা ভাত তরকারী খেলে পরের বেলায় অন্যকিছু খান। ডিম, স্পিনিচ, আনসল্টেড মিক্সড নাটস্, আভােকাডাে ইত্যাদিতে ভালাে ফ্যাট থাকে যা শরীরে শক্তি যোগায়। ড. জাহাঙ্গীর কবীরের ভিডিও দেখতে পারেন। খাবার সময় ভাতের চাইতে তরকারীর পরিমাণ বেশি হবে।

চিনি হচ্ছে হােয়াইট পয়জনঃ সাদা চিনি খাওয়া বাদ দিতে পারলে খুবই ভালাে। সবকিছুতেই কিছুনা কিছু চিনি থাকে। তার উপর অতিরিক্ত চিনি খুবই ক্ষতি করে। কম পরিমাণে ব্রাউন সুগার বা গুড় খেতে পারেন চা কফির সাথে। অতিরিক্ত চিনি ছাড়তে পারলেতাে অনেক অসুখ বিসুখ থেকে বাঁচা যাবে। গ্রীন টি, পেপারমিন্ট টি চিনি ছাড়া পান করতে পারেন। পিওর মধুও যােগ করতে পারেন একটু মিষ্টি স্বাদের জন্যে।

অতিরিক্ত লবনঃ চিনির মতাে লবনও ক্ষতিকর। কুকিংয়ে যে লবন দেয়া হয়েছে সেটা ছাড়া অতিরিক্ত আর কােন লবন নেবেন না। ব্লাড প্রেশারের রােগীদের লবন খাওয়া প্রেশার বাড়িয়ে দেয় বলে জানি।

প্রসেস্ড/ ফাষ্ট ফুডের ক্ষতিঃ ঘরের রান্না করা খাবার হচ্ছে উত্তম। প্রসেস্ড ও ফাষ্ট ফুড যতাে কম খাবেন ততােই ভালাে। এগুলাের পুষ্টিমান কম এবং এতে লবন ও চিনির পরিমাণ বেশি। ফুড কালারের ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। কারণ এগুলােতে ক্যামিকেল থাকে। মিষ্টির লােভ সামলাতে না পারলে সাদাগুলাে যেমন ছানার মিষ্টি খেতে পারেন। যারা চকলেট প্রেমিক তারা ডার্ক চকলেট খাবেন এতে নাকি হার্টের উপকারিতা রয়েছে।

সিজনাল ফ্রুটস, সব্জি ও সালাদঃ ফলমুল খাবেন বিশেষ করে যে সিজনে যেটা বের হয় সেই ফলে অনেক রােগের ঔষধও নাকি থাকে। খাবারের সাথে সালাদ, সব্জি আইটেম রেখে ব্যলেন্সড ডায়েট করা যায়। খেজুর, ফিগস, অলিভ, শসা, এপরিকট, তরমুজ, রম্মান, আপল, কলা ইত্যাদি ফলমুল খাবেন। শুধু আলু না রেখে ওর সাথে ব্রকলি, মাশরুম, কিডনী বিন, উরির বিচু, বেগুন ইত্যাদি সব্জি খাবেন। সকালে খালি পেটে মেথি খুবই উপকারী যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্যে। এছাড়া ইসবগুলের ভুসিও ভালাে। সকালে খালি পেটে খেতে পারবেন।

খাবারের রুটিনঃ খাবারের রুটিন ঠিক রাখাও সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়। বলা হয়ে থাকে নাস্তা হবে রাজার মতাে, লাঞ্চ খাবেন প্রিন্স এর মতাে এবং ডিনার হবে ফকিরের মতাে অর্থাৎ পরিমাণে খুবই কম। কিন্তু আমাদের অবস্থা তার উল্টাে। বার বার চা বিস্কিট কমাতে হবে। ঘনঘন স্ন্যাকিং ভালাে নয়। এতে পানক্রিয়াস সব সময় ইনসুলিন বানাতে ব্যস্ত থাকে। পানক্রিয়াসের রেষ্টের প্রয়ােজন। তবে হ্যাঁ, ক্ষিদে পেলে ফ্রি ফুডস যেমন শসা, টমেটাে, গাজর ইত্যাদি খেতে পারবেন। যেই মূহূর্তে শরীরে চিনি ঢুকলাে তখন থেকে পানক্রিয়াস সক্রিয় হয়ে উঠে। দুধ চিনি ছাড়া চা কফিতে তেমন সমস্যা নেই। দুধ যে একেবারে খাবেন না তা বলছিনা তবে মনে রাখবেন এর মধ্যেও সুগার আছে। টক ন্যাচারাল দই খাবেন। কফিতে বাটার মিল্ক দিতে পারেন। এসব বিষয়ে এনএইচএস এর স্বাস্থ্যসম্মত ব্যালান্সড খাবারের গাইডলাইন ফলাে করা ও ডা. জাহাঙ্গীর কবীরের ভিডিও দেখতে পারেন। রাতের খাবার অবশ্যই ঘুমােনাের অন্ততঃ দুই ঘন্টা আগে শেষ করা খুবই জরুরী। ডিনার থেকে ব্রেকফাষ্ট পর্যন্ত একটি লম্বা সময় পেট খালি রাখা শরীরের জন্য ভালাে।রেড মিটের পরিমাণ কমিয়ে দেবেন। চিকেন, মাছ, সব্জি, ডাল খান। দােকান থেকে কেনার সময় হােলমিল প্রােডাক্টস্ দেখে কিনবেন। যেমন ব্রাউন বা সিডেড ব্রেড সাদা ব্রেডের চাইতে ভালাে।

রােজা রাখাঃ আমরা সবাই জানি রােজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। রামাদ্বানে রােজা রাখা সুস্থ্য ও সাবালক সব মুসলিমদের জন্য ফরজ। অন্যান্য ধর্মেও উপবাস বা ফাস্টিংয়ের কথা আছে। প্রি ডায়াবেটিস এওয়ারনেস কাের্সে গিয়ে রােজার ফায়দার কথা আরাে ভালােভাবে জেনে নফল রােজা রাখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেছে। কারণ রােজা রাখায় যে অটােফেজি হয় তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকার। এই কাের্সে জানলাম খাওয়া দাওয়া ছাড়া কয়েকদিন থাকা যায় এবং পানি ছাড়াও দুএকদিন থাকা যায়। সুতরাং খানাপিনা ছাড়া আমরা যখন রােজা রাখি তাতে আমরা শারিরীক ফায়দা পেতে থাকি। এদেশে এমনিতেই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা ফাষ্টিং করে অথবা খাওয়া স্কিপ করে। কেউ তিনবেলার পরিবর্তে দুবার এমনকি একবারই খায়। আমাদের দেশেও একাহারী মানুষ আছে। আমরা চাইলে সুন্নাতী তরীকায় প্রতি সােম ও বৃহস্পতিবার এবং মাসে আইয়ামে বীজের (চন্দ্র মাসের মাঝখানের তিনদিন) তিনটি রােজা রাখতে পারি। এতে সাওয়াবও পাবাে আর শরীরও ভালাে থাকবে। দৈনিক খাবারের সংখ্যা বা বেলা কমাতে পারলে ভালাে। এক খাবার থেকে আরেক খাবার পর্যন্তএকটি ভালাে গ্যাপ রাখতে হবে।

খাবার তৈরিতে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ বা রেপসীড ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। মার্জারিনের পরিবর্তে পিওর বাটার বা ঘি অনেক ভালাে। এতে ভালাে ফ্যাট রয়েছে। তবে তেলে ভাজার চাইতে গ্রীল করে খাওয়া ভালাে। আর রােদে ভিটামিন ডি আছে। তাই শরীরে রােদ লাগানাে প্রয়ােজন। এছাড়া কালি জিরা ও এর তেল, ভিনিগার ইত্যাদি ঘরে রাখবেন।

শরীরে ওজন কমানােও একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। মেদ ভূড়ি কী করি?! শরীরের সাইজ অনুযায়ী ওজন না হলেই সমস্যা। তাই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ঘরে বসেও ব্যায়াম করা যায়। ভারী জিনিষ লিফ্ট করুন, কিছু একটা টানুন বা কতক্ষন ধাক্কাতে থাকুন। বাইরে দৌড় কিংবা দ্রুত হাঁটতে বের হােন। মনে অনেক প্রশান্তি আসবে, ভালাে ঘুম লাগবে। ভালাে স্বাস্থ্যের জন্য ভালাে ঘুম প্রয়ােজন। এটি হতে হবে অন্ধকারের ঘুম অর্থাৎ রাতে ঘুমানাের সময় বাতি নিভিয়ে ফেলুন এবং গভীর ঘুমে রাত কাটান।চােখের জন্যও ব্যায়াম আছে। চােখকে নানাদিকে ঘুরিয়ে এ ব্যায়াম করা যায়। দুরদিগন্তে তাকিয়ে থাকুন, সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকান এবং স্ক্রীন টাইম কমানাের চেষ্টা করুন। ইন্টারনেটে বই পুস্তক পড়া কমিয়ে হার্ড কপি পড়লে চােখ স্ক্রীন থেকে দুরে থাকবে। চােখের মতাে দাঁতে ও কানেরও যত্ন নিন। আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে জানিনা।

কােনকিছুতেই হতাশ হবেন না। সবসময় আশাবাদী থাকার চেষ্টা করুন। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের বিখ্যাত একটি গানের কটি লাইন এখানে উল্লেখ করতে চাই। “না হয় হলাে মন শুকনাে কােন মরুভূমি, আশাহত হয়াে নাকাে তুমি। ….. আশাহত মনটারে দেখাও আকাশ, কী করে বিহানে হয় আলাের প্রকাশ”।আজ এ পর্যন্তই। এই লেখার সাথে কেউ দ্বিমত পােষণ করলে কিংবা কােন কিছু যােগ করতে চাইলে দয়া করে আমাকে লিখলে খুব কৃতজ্ঞ থাকবাে। সবাই ভালাে থাকুন সুস্থ থাকুন এ কামনা করি।

সূত্রঃ হিলিং বডি এন্ড সউল, কােয়ান্টাম মেথড, ইটিং উয়েল

(আকবর হোসেন: সাংবাদিক)

You might also like