স্মরণে ও শ্রদ্ধায় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল
আজ ১১ নভেম্বর, মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ৯৩তম জন্মদিন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে দিনটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন এক সময়কার তুখোর আমলা, সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। সাথে আছেন দেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। এ ধরনের সংগঠনগুলোর বেলায় যেমনটি হয়ে থাকে, ভালো কিছু কাজ করে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের স্মরনে ও শ্রদ্ধায় অম্লান করে রাখা আর তার বিশেষ দিনগুলোতে তাকে যথাযথভাবে স্মরণ করা, এমনটাই এই সংগঠনটিরও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আর এর কার্যকরী পরিষদে আমার অন্তর্ভুক্তি আমার কাছে অত্যন্ত সন্তুষ্টির।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে কর্মরত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর পোস্টিং ছিল পাকিস্তানের নয়া দিল্লী হাইকমিশনে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি তার বাসভবনে প্রেস কনফানেন্স করে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তার আনুগত্য ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের হয়ে দুতিয়ালীতে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উধ্র্বতন কর্মকর্তা হিসেবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একের পর এক দেশের স্বীকৃতি আদায়েও তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন।
‘হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। চাইলেই একজন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী হওয়া যায় না। তবে তার জীবনের কিয়দংশও যদি ধারণ করা যায় তাহলেও জীবন অন্য উচ্চতা ছুতে পারে। বিশেষ করে দেশের ক্লান্তিলগ্নে ৭১ আর ৭৫’এ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তার যে অবিচল অবস্থান, তা-ই অনায়াসে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে অমরত্বের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ করবে। ’
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। দায়িত্ব পালনে তার দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন মহাত্মা গান্ধী শান্তি পদক ও উ থান শান্তি পদক। জাতীয় রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সিলেট সদর আসন থেকে এবং পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার। তার সভাপতিত্বেই ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বাতিল হয় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, অপসারিত হয় সপরিবারে জাতির জনকের খুনিদের বিচারের আইনী বাধা। কাজেই প্রয়াত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্মরণে একটি স্মৃতি সংসদ থাকাটাই সাধুবাদযোগ্য, না থাকাটাই বিস্ময়বোধক।
তবে শুধু এখানেই থেমে গেলে তা হবে প্রয়াত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে খাটো করার শামিল। তিনি এ দেশের ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে এর চেয়ে ঢের বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ছিলেন পশ্চিম জার্মানীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। প্রয়াত জাতির পিতার প্রবাসী দু’কন্যা, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, সেদিন পশ্চিম জার্মানীতে তার বাসায় আতিথেয়তা পেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির সাথে যোগাযোগ করে তিনি তাদের ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। আর এসব কারণেই হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাবেক সফল কূটনীতিক, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাবেক সভাপতি, মাননীয় সাংসদ কিংবা মাননীয় স্পিকার -এসব পরিচয়কে ছাপিয়েও তিনি তাই আরো বড়। আর সে কারণেই তার জন্মদিনে বাণী প্রদান করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর মহামান্য রাষ্ট্রপতি।হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। চাইলেই একজন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী হওয়া যায় না।তবে তার জীবনের কিয়দংশও যদি ধারণ করা যায় তাহলেও জীবন অন্য উচ্চতা ছুতে পারে। বিশেষ করে দেশের ক্লান্তিলগ্নে ৭১ আর ৭৫’এ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তার যে অবিচল অবস্থান,তা-ই অনায়াসে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে অমরত্বের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ করবে।
লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।