ইতিহাসের রঙ বদল
দিলীপ মজুমদার
এবার ভারতের ইতিহাসের রঙ বদল হচ্ছে।নানা রঙা ইতিহাস এক রঙা হচ্ছে।সে রঙ গেরুয়া।দেশের শাসকের রঙ।তাই রবীন্দ্রনাথের মহামানবের সাগরতীরের ভাবনাটাও বদলাবে।এক দেশ এক জাতি,এক ভাষা,এক ধর্ম।বিবিধের মাঝে আজি মিলন মহানও পরিত্যক্ত হবে।সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্নাতক স্তরে ইতিহাসের যে পাঠক্রম প্রকাশ করেছেন, তা দেখেই মালুম হয়,বদলাচ্ছে ভারত ইতিহাসের রঙ । ভারতের প্রাচীন ইতিহাস রাখা হয়েছে ৫৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।মধ্যযুগে ছিল মুসলমান রাজত্ব । তাই সে যুগ প্রায় বাদ । বাবর সেখানে ‘আক্রমণকারী’,আকবর বাদ গেছেন,আওরঙ্গজেব আছেন কিন্তু সে শুধু শিবাজির প্রতিপক্ষ বলে।শিবাজির কথা আছে বিস্তৃতভাবে।আছে মরাঠাদের কথা । এই পাঠক্রমের রচয়িতারা পুরাণকে ইতিহাস বলেই মনে করেন বোধহয়।তাই পাঠক্রমে জোর পড়েছে পুরাণের উপর।সেই সঙ্গে আছে বেদ,উপনিষদ।আছে ভজন, হরিকথা, পঞ্চতন্ত্র, রামচরিতমানস।এই তো ‘কনসেপ্ট অব ভারত’ ।
পরিষ্কার বোঝা যায় এই পাঠক্রম রচয়িতারা শাসকের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত । তাঁরা ‘সরস্বতী সভ্যতা’ কে তুলে ধরতে চান পৃথিবীর সামনে।এই সরস্বতী সভ্যতা কোন ঐতিহাসিকের ভাবনার নয়, এর দাবিদার গেরুয়া শিবির ।তাঁদের মতে স্বরস্বতী সভ্যতা হল হিন্দুদের সভ্যতা।তাই ভারতের ইতিহাসে থাকবে হিন্দু তীর্থক্ষেত্র,হিন্দুদের ধর্মীয় মেলা, হিন্দুদের স্থাপত্য-ভাস্কর্য, হিন্দুদের রীতি-নীতি ।বিদ্যালয়ের ইতিহাস বইতেও সেই পরিবর্তন।এনসিইআরটি সেই পাঠক্রম রচনা করেছেন।কটফার ইচ্ছায় কর্ম করেছেন আর কি!প্রতিবাদ করেছেন ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেস।বলেছেন যে পাঠ্যবইতে প্রতিফলন ঘটেছে পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির।আমাদের দেশের খভাতনামা ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব,সতীশ চন্দ্র,বিপান চন্দ্রদের সঙ্গে আলোচনার কোন তাগিদ অনুভব করেন নি এই পাঠক্রম রচয়িতারা ।
লেখক: ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক,সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।