অজন্তা বিশ্বাসের অপরাধ

 দিলীপ মজুমদার

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা অজন্তা বিশ্বাস।জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁর গবেষণাপত্র স্বীকৃত ও প্রশংসিত।তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলায়’ ( যেটি ২১ জুলাই থেকে দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ) একটি প্রবন্ধ লিখেছেন।নাম :‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তির জাগরণ’।তিন কিস্তির সেই প্রবন্ধ শেষ হল আজ,৩১ জুলাই।শেষ কিস্তিতে আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনা।ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকেই অজন্তা মমতার রাজনৈতিক উথ্থানের আলোচনা করেছেন। প্রসঙ্গত এসেছে নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের আন্দোলন।একা এক নারী কি ভাবে নানাবিধ বিরুদ্ধতা অতিক্রম করে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করেছেন,তার আলোচনা আছে ।বিশেষ করে নারীদের জন্য মমতা সরকার যে সমস্ত প্রকল্প চালু করেছেন, তার আলোচনাও অজন্তা করেছেন।

অজন্তা প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের কন্যা । তিনি নিজেও সিপিএমের সঙ্গে জড়িত । তাই সিপিএম দলের নেতারা মনে করেন তিনি অপরাধী । লেখাটির প্রথম কিস্তি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই সিপিএম নেতারা অপেক্ষা করেন বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তির জাগরণ বিষয়ে অজন্তা মমতা সম্পর্কে কিছু বলেন কি না । আজ যখন তিনি বললেন, তখন তাঁকে সেন্সর করার তোড়জোড় শুরু হল ।সিপিএমের এই আচরণ প্রমাণ করে যে তাঁরা ইতিহাসকে সম্মান দিতে জানেন না । মমতা সম্পর্কে তাঁদের যত অনীহাই থাকুক না কেন, বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তির আলোচনায় মমতার স্থান কেড়ে নেওয়া যাবে না । তাঁকে বাদ দিয়ে যদি সে ইতিহাস লেখা হয়, তবে তা খণ্ডিত হতে বাধ্য । ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুজফফর আহমেদ বলতেন, ইতিহাসে যার যা স্থান, তাকে তা দিতে হবে । মুজফফরের লেখা ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ বইটি পড়লে সে কথা বোঝা যাবে ।সিপিএমের এই অনৈতিহাসিক, সংকীর্ণতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বহুবার দেখা গেছে । ভারতবর্ষে গান্ধিজির ঐতিহাসিক ভূমিকা তাঁরা একসময় স্বীকার করতে চান নি । হীরেন মুখার্জী যখন জওহরলাল সম্পর্কে বই লিখলেন, তখন তাঁকে বিশ্রিভাবে সমালোচনা করা হয়েছিল । পরে অবশ্য তাঁরা সংসদীয় গণতন্ত্রের চাপে পড়ে এসব ‘ঐতিহাসিক ভুল’ স্বীকার করেন ।

পশ্চিমবঙ্গে মমতা তাঁদের পরাজিত করেছেন, এটা তাঁরা ভুলতে পারেন নি । তাই এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব আবিষ্কার করে কেল্লাফতে করতে চেয়েছিলেন ।তার ফল হাতে হাতে পেয়েছেন । ভারতে মমতা যে এখন মোদিবিরোধী মুখ এটা দেখতে হচ্ছে ।এখানেও সিপিএমের আভয়ন্তরীণ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে । জাতীয় স্তরে মোদি বিরোধিতায় তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্যের কথা বিমান বসু বললেও সুজন চক্রবর্তী, বিকাশ ভট্টাচার্যরা বলছেন একেবারে বিপরীত কথা ।আমরা মনে করি, অজন্তা বিশ্বাস কোন অপরাধ করেন নি । নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বঙ্গের রাজনীতিতে নারীশক্তির জাগরণের দিকটি তুলে ধরেছেন তিনি । সিপিএমে থেকেও তিনি যে dogmatism কাটাতে পেরেছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ ।

You might also like