আর কত খাব আত্মঘাতী গোল ?
দিলীপ মজুমদার
প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বাংলার বিজেপির নেতারা মনে মনে এই কথা বলছেন।আর কত খাব আত্মঘাতী গোল।কিন্তু তাঁদের ট্রাজেডি হল এসবকে হজম করতে হচ্ছে।কারণ তাঁরা নাবালক।দিল্লি থেকে উড়ে এসে কেন্দ্রীয় নেতারা রাজ্যের দল পরিচালনা করেন। তাঁদের মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হয়।একে তো ভরাডুবি হল ভোটে।কিছুদিন চুপচাপ থাকলে ভালো হত।করোনার ঢেউ ছিল।কিন্তু চুপচাপ থাকতে দিলেন না কেন্দ্রের নেতারা । চাণক্য নামে খ্যাত অমিত শাহ মশাই এখানকার ভোটের ফল বেরোবার পরে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন।দরজায় খিল দিয়ে বাড়িতেই ছিলেন।কিন্তু চুপচাপ বসে থাকবার মানুষ তিনি নন।বড্ড লেগেছে তাঁর আঁতে।বাংলার মানুষ তাঁর ‘চাণক্য’ উপাধিটাকে মিশিয়ে দিয়েছে ধুলোয়।তাই তিনি রুদ্ধঘরে বসে ভাঁজতে লাগলেন কী করে মমতা ব্যানার্জীকে টাইট দেওয়া যায়।মোদি সাহেবের সঙ্গে তাঁর গলায় গলায় ভাব । যুগলবন্দি তাঁরা।তাই নিশ্চয়ই
মোদি সাহেবের সঙ্গে টাইট দেবার ব্যাপারে পরামর্শ করেছেন ।তাই তাঁরই নির্দেশে ভোটের পরের দিন থেকেআইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু । রাজ্যপাল তো পোঁ ধরেই আছেন । রাজ্যপালের কাজকর্মে বাচ্চাছেলেও বুঝতে পারে তিনি কাদের স্বার্থসাধন করছেন । রাজ্যপালকে এরকম উদোম করে দেওয়ার ব্যাপারে বঙ্গ বিজেপির নেতারা খুব স্বস্তিতে ছিলেন না । তারপরে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখার্জী, মদন মিত্র, শোভন চ্যাটার্জির গ্রেপ্তার । এখানে নায়ক সিবিআই । যে সময়ে এবং যেভাবে গ্রেপ্তার, তাতে পক্ষপাতিত্বটা সহজেই বোঝা যায় । তার মানে সিবিআইকেও উদোম করে দেওয়া হল । সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও মুখ পুড়ল সিবিআইএর ।সাম্প্রতিক ঘটনা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে । তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব । মে মাসের শেষে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে । কোভিদ ও ঝড় মোকাবিলায় তাঁকে দরকার । তাই রাজ্য সরকার তাঁকে তিন মাসের এক্সটেনশন দেওয়ার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিল।গত ২৪মে কেন্দ্রের কাছ থেকে অনুমোদন এসেছে । কিন্তু চার দিন বাদে ২৮ মে কেন্দ্র অন্য সুর ধরল।আলাপনবাবুকে ৩১মে দিল্লিতে গিয়ে নর্থ ব্লকে রিপোর্ট করার নির্দেশ দিল।আইনের কচকচি বাদ দিয়ে
সাদা চোখে দেখলে বোঝা যায় প্রতিহিংসার রাজনীতিকে।দলবদলু শুভেন্দু অধিকারীর মুখ দিয়ে যতই বলানো হোক প্রোটোকল ভাঙার কথা।দলবদলু শুভেন্দুকে এভাবে গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারটাকে বঙ্গ বিজেপির পুরাতন নেতারা মনে মনে মেনে নিতে পার্ছেবন না । বাংলার চাণক্য মুকুল রায় একদম চুপচাপ।তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু আবার বোমা ফাটিয়েছেন । ফেসবুকে লিখেছেন ,জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনার আগে নিজেদের আত্মসমালোচনা করা দরকার।এসবই তো আত্মঘাতী গোল।দলবদলুরা আবার দলবদল করতে শুরু করে দিয়েছেন।জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটছে।কংগ্রেস ও বামদল রাজ্য সরকারের সমর্থনে এগিয়ে আসছেন।মমতা হয়ে উঠছেন মোদিবিরোধী মুখ ।
লেখক: কলামিষ্ট, ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।