ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ও বিজেপি
দিলীপ মজুমদার
গত ২১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বঙ্গ বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন।সেই ইশতেহারে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর ( ১৮৬১—১৯২৩) উল্লেখ ছিল । আসলে শাসক দলের ‘বহিরাগত’ স্লোগান প্রতিহত করার জন্য বিজেপি বাঙালি আইকনের সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।সেই সূত্রেই কাদম্বিনীর আগমন । মনে হয় বিজেপির সাংসদ ডাক্তার সুভাষ সরকারের উদ্যোগ ছিল এ ব্যাপারে । বিজেপি নির্বাচনী ইশতেহারে কাদম্বিনীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচনে জয়লাভ করলে গঠন করা হবে ‘কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তহবিল’ । এটি ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ।বলা হয়েছিল প্রতি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল তৈরি হবে ; প্রতি ব্লকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হবে ; প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হবে।নির্বাচনে বিজেপি জিততে পারে নি । তাই ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পও আলোর মুখ দেখতে পারল না ।
যোগী আদিত্যনাথ ও তাঁর সতীর্থ, সহযোগীদের কাণ্ডকারখানা প্রমাণ করে দেয় যে বিজেপি নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতাকে মান্যতা দিতে নারাজ । তাই কাদম্বিনী গাঙ্গুলীকে তাঁদের নীতি ও আদর্শের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অসম্ভব । আমার মনে হয় নির্বাচনে জিতলেও তাঁরা এই রকম এক নারীকে বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারতেন না । এঁদেরই পূর্বসূরীরা কাদম্বিনীকে কি রকম অপমান করেছিলেন, ইতিহাসের পাতায় তা লেখা আছে । ভাগ্যিস দ্বারকানাথের মতো উদারমনা, প্রগতিশীল স্বামী ছিল কাদম্বিনীর ; তা না হলে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী রক্ষণশীল সমাজ কাদম্বিনীর টুঁটি চেপে ধরত ।কাদম্বিনী ছিলেন এ দেশের নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী যোদ্ধা । সমাজের বাধা অগ্রাহ্য করে তিনি স্নাতক হলেন । ভর্তি হলেন মেডিক্যাল কলেজে । বাধা সেখানেও ।কটূক্তি পুরুষ ছাত্রদের । অনীহা কিছু শিক্ষকের । যাতে তিনি কৃতকার্য হতে না পারেন, তার চেষ্টা করে গিয়েছেন ডা: আর সি চন্দ্র । বিদেশ থেকে ডাক্তারিবিদ্যার শংসাপত্র নিয়ে দেশে ফিরে তিনি যখন প্র্যাকটিশ শুরু করলেন, তখন রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিরা তাঁকে ‘বেশ্যা’ বলতেও দ্বিধা করলেন না । ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকার মহেশচন্দ্র পাল কাদম্বিনীর চরিত্রহননের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় নিযুক্ত ছিলেন । তাই ১৮৯১ সালে কাদম্বিনী মহেশচন্দ্রের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে বাধ্য হন ।পরিবারকে উপেক্ষা না করেও এই সাহসিনী নারী ডাক্তারি করেছেন, সংস্কার আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন ; বিরুদ্ধবাদীদের সমালোচনা করেছেন ।
লেখক: ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।