রবীন্দ্রনাথ ও আমার শত্রুতা…
জুয়েল রাজ
রবীন্দ্রনাথ প্রথম পাঠ, খুব সম্ভবত আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে…
এরপর তো পরীক্ষা পাশ, প্রথম আটলাইন মুখস্থ, , সারাংশ, জন্মসাল, মৃত্যুসাল মুখস্থ করতে করতেই জান শেষ….
রবীন্দ্রনাথ কিংবা সাহিত্য ভালো লাগা, আর প্রেমে পড়ার সময় কই!
ন্যাকা ন্যাকা প্যানপ্যানানি গান, শুনলেই ঘুম পায় কি একটা অবস্থা!!
বাড়িতে সবাই টুকটাক গান শিখলে ও এই প্যানপ্যানানি গান আমার আর কন্ঠখড়ি ( হাতেখড়ি) হয় নাই। আরেক টু হেভি মেটাল কিংবা দুই চারটা ব্যান্ডের গান গাইলে বা লিখলে হয়তো গানটা শিখা হয়ে যেতো…..
খুব সম্ভবত এইট বা নাইনে থাকতে ক্যামনে ক্যামনে জানি Taslima Nasrin হাতে পড়ে যায়, গোগ্রাসে পড়েছি সে সব। লজ্জা, ফেরা, নিমন্ত্রণ, নির্বাচিত কলাম, এবং তাঁর প্রেমের কবিতা। ততোদিনে তিনি দেশান্তরি….
রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম রচনাবলি সেলফ থেকে নামিয়ে খুলে আর সাহসে কোলায় নি, সেই বয়সে দাঁত ভাঙার অবস্থা। শরৎচন্দ্র সেই ফাঁকে পড়া হয়ে গেছে।
এস এস সির পর টানা পড়েছি হুমায়ুন আহামেদ… কোন এক প্রকাশনী সংস্থা অথবা অন্য কোন সংগঠন একটা তালিকা করেছিল মনে হয় বই হুমায়ুন আহামেদের প্রকাশিত বইয়ের একশোর উপরে নাম ছিল সেখানে, পড়তাম আর দাগ দিতাম। বোতল ভূত নামে একটা বই খুঁব খুঁজেছিলাম কিন্তু সেই সময় পাই নাই। এই নামটা তাই মনে আছে,বইটা আর কখনো পড়া হয়ে উঠেনি আজ পর্যন্ত। এখন ইচ্ছেটা ও মরে গেছে, কিন্তু বইয়ের নামটা মনে আছে।
যাই হউক কথা সেটা না…
কথা হইলো
এই ঠাকুর সাব পইড়া এন্টিনার উপর দিয়ে গেছে…
শেষের কবিতা আমি ভাবতাম কোন কবিতার বই! বহু পরে জানছি বিখ্যাত উপন্যাস, অমিত লাবণ্য -র সাথে পরিচয়।
আমাদের বিভোর করে ছিল হুমায়ুন, মিলন,রোমেনা আফাজ, সেবা প্রকাশনী, ফাল্গুনি, সুনীল, সমরেশ, অথবা বুদ্ধদেব। এই সময়ই পরিচিয় হয়, সঞ্জীব, বিমলমিত্র আমাদের দেশে হুমায়ুন আজাদদের সাথে একটু একটু করে পরিচয় এবং কবিতায় হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা এদের বই কিনতাম অন্য বই হাত বদল করে পড়লে ও বন্ধুদের কেউ কবিতার বই কিনতো না, তাই খাবিকার মতো নিজে কিনে পড়তে হইতো।
ঠাকুর দা প্রথম ভাবায়, রাজর্ষী দিয়ে নিষ্ঠুর বলি প্রথা ( কোরবানী) , সনাতন ধর্মে যদি ও এখনো বন্ধ হয়নি।
এরপর “গোরা”
তারপর কেটে যায় কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা…
মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলীর সাথে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না আর।
প্রেমপত্র লেখা শিখে গেছি ততোদিনে। শুধু কি নিজের জন্য, নিজের চেয়ে বেশী লিখেছি বন্ধুদের জন্য, নাম বললে চাকরী থাকবে না। ভাবমূর্তির বিষয় আছে, তাঁদের অনেকেই বিশেষ ব্যাক্তির তালিকায় আছেন। তো যে জন্য বলা, সেই প্রেমপত্রে যতো টুকলি ছিল সে সবের ৮০ ভাগই নেয়া উনার কাছ থেকে। যা লিখতে যাই, যা লিখতে চাই দেখি তিনি আগেই এমন একটা লেখা লিখে বসে আছেন মৌলিক প্রেমপত্র আর হয়ে উঠেনি। প্রেমগুলো মনে হয় এর জন্য মৌলিক হয় নাই। একবার তো প্রেমপত্র সহ মেয়ের মা এক বন্ধুর বাসায় আইসা কয় আমার মাইয়া বুঝবো কি আমিইতো বুঝি নাই এতো কঠিন ভাষায় লিখছে।
পত্র লেখকের ভাব আরো বেড়ে যায় মার্কেটে…
চা সিঙারা তে আর হয়না তখন, সিগারেট কোক ইত্যাদি ও লাগে লিখতে হইলে।
কবিতার লাইন, চুরি চামারি কইরা পত্র লিখা বন্ধ হয়ে যায়। ডিজুস, এয়ারটেল জয় আইসা সব বন্ধ হয়ে যায়।
পত্র লেখকের মহান পেশাটি লুপ্ত হয়ে যায়।
হিন্দি ফিল্মের গানে তখন বাজার সয়লাব। চারপাশে চিজ বড় হে মাস্ত মাস্ত….
আধুনিক, ব্যান্ড এইসব এবং জোয়ার ছিল আরেক ধরণের গান যাকে বলা হইতো মর্ডান ফোক। রুপের মাইয়া একবার চাইয়া গো টাইপের গান। সে সব ও এক সময় পানসে লাগতে শুরু করে। নিজেই লেখতে শুরু করি কিন্তু যাই লিখি ঘুরে ফিরে দেখি ভদ্রলোক লিখে গেছেন। নতুন কিছু লেখার নাই। যা আছে তাঁর ভাষাকে নিজের ভাষায় প্রকাশ করা শুধু।
কবি গীতিকার কিছুই আর হয়ে উঠার সুযোগ নাই। সেই আরেক শত্রুতা। কিছু কম লেখলে আমাদের মতো কিছু লেখক কইরা খাইতে পারতাম। কি দরকার ছিল এতো লেখার!!
আমার গান শোনার ইতিহাস তো ঐতিহাসিক। আমি বাসায় আছি মানে টেপ রেকর্ড বাজতে আছে। আমার বাসায় গান বাজছে না! মানে আমি বাসায় নাই অথবা বিদ্যুত নাই। কারণ বাংলাদেশে বিদ্যুতের প্রাগৈতিহাসিক যুগে বাস করতাম আমরা। পরে শুরু হয়েছিল খাম্বা যুগ ।
কিন্তু বিষয় হইলো…
যা বলতে চাইছিলাম আসলে…
এক সময় আইসা তাঁর প্যানপ্যানানী গান মাথা দখল নিয়ে নেয়। এখনো এই গান সেই গান শোনার পর বিছানায় গিয়ে মোবাইলে তাঁর প্যানপ্যানানি ছাড়া শান্তি নাই….
তো যার জন্য এতো ভূমিকা সেইটা হইলো, জীবনে এই ভদ্রলোক কে এড়িয়ে যাওয়ার কোন চান্স পাইলাম না। আমার আর গীতিকার হওয়া হইলো না , কবি হওয়া হইলো না। প্রেমিক হওয়া হইলো না। সব মেয়েরাই দেখি এখনো তাঁর প্রেমেই হাবুডুবু খায়। কৈশোর, তারূন্য পেরিয়ে চালশে তে ঢুকে গেছি। আমাদের দেশে রাজনীতির মাঠে অবশ্য ৬০ পর্যন্ত তারুণ্যের অহংকার থাকার চান্স আছে। আমার তো আর সেই চান্স নাই।
কিন্তু প্রেমে, অপ্রেমে, হতাশায় আকুল হয়ে তাঁর পানেই চেয়ে থাকি। দেখি ওস্তাদ কি বলে গেছেন…
স্বমহিমায় আর উদ্ভাসিত হওয়া হয় না।
হায় রবীন্দ্রনাথ তুমি শুধু আমাকেই ডুবাইলে না। তুমি না থাকলে আরো কতো কবির জন্ম হইতো এই বাংলায় দুষ্টলোকে অবশ্য আরো অনেক কিছু বলে। শ্রীকৃষ্ণ আর আপনার মাঝে ও নাকী মিল আছে, দুইজনেই পরকীয়াকে শিল্প হিসাবে মর্যাদা দিয়েছেন।
আর আমাদের হুজুর রা তো আপনাকে নিয়ে রীতিমতো গবেষণাই করে। আপনার লেখা জাতীয় সংগীত বাদ দেয়ার চেষ্ঠা চিন্তা চলছে দেখা যাক.., অচিরেই লেখা হয়ে যাবে হয়তো।
শুধু কি জাতীয় সংগীত, আপনি গান কবিতা গল্প উপন্যাস সব তো লিখছেনই আমাদের চান্স না দিয়া। তার উপড়ে আমরা যে শিক্ষিত হইমু সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আপনে হইতে দিতে চান নাই। কি জেলাস ছিলেন আপনি। আমরা শিক্ষিত হইলে তো জাতীয় সংগীত লিখতে পারতাম। এর জন্য এইটা করছেন। এইটা হুজুর রা গবেষণা কইরা বের করছেন অবশ্য। মিথ্যাচার যে শিল্প এইটা আপনি থাকলে শিখতে পারতেন উনাদের কাছ থেকে।
তো, যাই হউক, এতো এতো শত্রুতার পর
কলকাতায় গেলাম, ভাবলাম জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি টা দেইখা যাই। শত্রু ভিটায় ঘু ঘু চড়ে কি না!!
কলকাতায় সেইবার দূর্গা পূজার দীর্ঘ ছুটি। গিয়া দেখি সদর দরজায় বিশাল তালা। নোটিশ লাগানো। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ মানে। ঠাকুর বাড়ি দর্শন থেকে বঞ্চিত। ব্যার্থ মনোরথে ফিরে আসলাম।
১ বছর পরে দ্বিতীয়বার যখন গেলাম ভাবলাম এইবার আর মাফ নাই। বুড়াকে দেখেই যামু। গেলাম…
অহ মাই মাই….
এইবার ও তালা। এইবার গিয়া দেখি কালি পুজার বন্ধ!!! যে রাজর্ষী -র কালী পুজায় বলি বন্ধের আবেদন সেই কালী পুজায় নিজের বাড়ির গেইট ও বন্ধ, হইলো কিছু।
সমইস্যা কি বুঝলাম না। মইরা গিয়া ও আমার সাথে শত্রুতা জিইয়ে রাখার মাজেজাই বুঝলাম না। ভাইরে, আপনি তো আর আমার প্রতিযোগী না…
দুইজন দুই লেভেলের আমরা। আমার লগে আপনার যায় না।
কি আর করমু ছবি তুলে, রাস্তার পাশে মাটির ভাড়ে চা খেয়েই চলে আসতে হয়েছে….
নেক্সট টাইম এক্কেবারে শান্তি নিকেতন সহ হবে আটকাইতে পারবেন না স্যার।
তো মূল কথা তো এখনো বলা হইলো না।
এই ভদ্রলোকের জন্মদিন ছিল আজকে।
শুভ জন্মদিন বস……
বাংলা শিল্প সাহিত্যে আপনিই সব চেয়ে বড় কতুব… আর বাকী সব ধইঞ্চা।
এই বিশাল আকাশে রবি রবির মতোই উজ্জ্বল শক্তিশালী।
লেখক: সাংবাদিক।