শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি
দিলীপ মজুমদার
বঙ্গ বিজেপির সভাপতি আগেই বলে রেখেছিলেন নির্বাচনে পরাজয়ের পরেও তাঁরা চুপ করে বসে থাকবেন না। তা তাঁরা বসেও থাকেন নি। বিধানসভায় শাসকের শ্বাসরুদ্ধ করার ঘোষণা তাঁরা করেছিলেন। প্রথম অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কথা নেই বলে তাঁরা হট্টগোল বাধিয়েছিলেন। রাজ্যপাল তাঁর ভাষণ শেষ না করে সভা ত্যাগ করেন। তারপরে পি এ সির চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে ঝামেলা বাধানো হল। এই পদটি মুকুল রায়কে দেওয়া হয়েছে। খাতায়-কলমে মুকুল বাবু এখনও বিজেপির লোক। সেটাই শাসকের যুক্তি। শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলির মতো। এর প্রতিবাদে বিজেপি সমস্ত কমিটি থেকে পদত্যাগ করে রাজ্যপালের কাছে ডেপুটেশন দেয়।
কিন্তু বিজেপির ভেতরে একটা বিশৃঙ্খলা চলছে। দলবদলুরা তো আছেন, তার সঙ্গে যুক্ত আছেন আদি বিজেপির কিছু সদস্য। আদি-নব’র দ্বন্দ্বে বিজেপি জেরবার। সৌমিত্র খান, সব্যসাচী দত্ত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি দলবদলুরা দলের প্রতি মোটেই আনুগত্য দেখাচ্ছেন না। কখনও দিলীপ ঘোষকে, কখনও শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ পড়েছেন যে বাবুল সুপ্রিয়, তিনিও বাঁকা কথা বলছেন। এ সব নিয়ে আলোচনার জন্য রাজ্য সভাপতি জে পি নড্ডা সাহেবের ডাকে দিল্লি গিয়েছিলেন। এ বার না কি কঠোরভাবে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা হবে।
শাসক দলও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। অনেকগুলি মামলা ঝুলছে। আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে আদালতের তিরস্কার শুনতে হয়েছে। তার উপর উপনির্বাচন না হলে মমতার মুখ্যমন্ত্রীত্ব থাকবে না। বিজেপি’র নির্দেশে নির্বাচন কমিশন গড়িমসি করে যদি ছ’টা মাস পার করতে পারে, তা হলে মমতা ব্যানার্জীকে সরে দাঁড়াতে হবে। তখন একটা নতুন সংকট সৃষ্টি হবে। এদিকে আবার অর্থমন্ত্রীর পদ নিয়ে দেখা দিয়েছে সমস্যা। অমিত মিত্র অসুস্থ। কিন্তু তাঁর মতো সুযোগ্য মানুষ মমতা ব্যানার্জী খুঁজে পাচ্ছেন না।
বিজেপি যেমন তাঁদের দলীয় সংগঠন ঢেলে সাজাবার পরিকল্পনা করেছেন, শাসকদলও সে পথে হাঁটছেন। অভিষেক ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তরুণদের টেনে আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বিজেপির যাত্রাভঙ্গের কাজও শুরু হয়েছে। যে শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি নিয়েছে, সেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে শাসকদল অস্ত্র শানাচ্ছে। নানা মামলায় তাঁকে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। সংঘ পরিবার হাল ধরার চেষ্টা করছে। তাদের চেষ্টা সফল না হলে বঙ্গ বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়বে। তার সুফল পাবে শাসকদল।
লেখক: ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।