সাধারণ মানুষের চোখে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল
দিলীপ মজুমদার
জগদীপ ধনখড়।পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল।২০১৯এ এই পদে এসেছেন তিনি।কিন্তু মাত্র দু বছরেরই বিখ্যাত হয়ে গেছেন।বিখ্যাত ও বিতর্কিত।সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে থাকেন তিনি।রাজ্যের শাসকদল,বাম ও কংগ্রেস দল,শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ইদানীং বলতে শুরু করেছেন যে রাজ্যপাল তাঁর এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন।কিন্তু তাঁর কাজকে সমর্থন জানি্য়ে যাচ্ছেন বিজেপি।সাধারণ একজন মানুষ কি ভাবে দেখচেন রাজ্যপালকে ? সংবিধান ও এক্তিয়ারকে দূরে সরিয়ে রেখে,শুধু রাজ্যপালের কার্যক্রমের কালানুক্রমিক বিবরণে কোন সত্য ধরা পড়ছে সাধারণ মানুষের চোখে ?২০১৯ এ রাজ্যপাল এলেন রাজ্যে।লোকসভা ভোটের পরে।লোকসভা ভোটে বিজেপি বিপুল সাফল্য পায়।তারপর থেকে বিজেপির পাখির চোখ এই রাজ্য,২০২১ সালের বিধানসভা ভোট।সাধারণ মানুষ পরে বুঝতে পেরেছে বিধানসভা ভোটের ভিত্তি তৈরির জন্য জগদীপ ধনখড়কে আনা হয়েছে রাজ্যে । সেটা স্পষ্ট হল পরে পরে।যখন বোঝা গেল রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের অ্যান্টাগনিস্টিক কনট্রাডিকশন প্রথম থেকেই ।
রাজ্যের প্রতিটি কাজেই তিনি ছিদ্রান্বেষণ করেন।কখনও চিঠিতে, কখনও টুইটে প্রকাশ পায় তাঁর সমালোচনা।বিশেষ করে টুইটে।এ যাবৎ প্রায় ৩০০০ এর বেশি টুইট করেছেন তিনি।শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসনের গাফিলতি এসবই তাঁর টুইটের বিষয় । রাজ্য প্রশাসন করোনা মোকাবিলা করতে পারছে না, বন্যা পরবর্তী ত্রাণে দুর্নীতি আছে, এসব তিনি ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন।তাঁর বক্তব্য আর বিজেপি দলের বক্তব্য মিলে যাচ্ছে ।মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি রাজধর্ম পালনের ব্যর্থতার জন্য হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন ।এপ্রিল মাস জুড়ে যে ভোট হল,সে সময়ে তিনি নীরব ছিলেন । ভোটের ফলাফল ঘোষণার ঠিক পরের দিন থেকে তিনি সরব।শাসক দল বিরোধীদের মারধোর করছে, ঘরছাড়া করছে – এই অভিযোগ।ফল ঘোষণার পরের দিন থেকে একই অভিযোগ করে যাচ্ছে বিজেপি।মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেবার দিনেও রাজ্যপালের খোঁচা । সেই আইন-শৃঙ্খলা।তারপরে সাত দিনের মধ্যে নারদ কাণ্ডে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখার্জী, মদন মিত্রদের গ্রেপ্তার।সিবিআইকে সবুজ সংকেত দিলেন রাজ্যপাল । অভিযুক্তদের সিবিআই অফিসে আনার পরে সমর্থকদের প্রতিবাদ ও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালের অভিযোগ । বিজেপি ও সিবিআইএরও একই সুর ।
ভোটে শোচনীয় পরাজয় বিজেপি মেনে নিতে পারে নি । বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জিতে আসা সরকারকে কিভাবে ফেলে দেওয়া যায় তার পরিকল্পনা শুরু হয়।অস্ত্র সেই একটাই । আইনশৃঙ্খলার অবনতি । তোলা হতে লাগল একটা ‘গেল গেল’ রব।রাজ্যপালের ক্রমাগত টুইটে সেই অবনতির ধারাবিবরণী । শুধু বিবরণী নয়, এসবের পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি।সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির কিছু মুখপাত্র এবং বিরোধী দলনেতা বলতে লাগলেন রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা ।অতি সম্প্রতি রাজ্যপাল গেলেন দিল্লি।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, কয়লামন্ত্রী,পর্যটন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন । রাজ্যকে টাইট করার পন্থা নির্ধারণ করা সম্ভবত।শুধু তাই নয়,তিনি মানবাধিকার কমিশনেও গেলেন।কেন না,রাজ্যের শাসক দল মানবাধিকারকে পদদলিত করে চলেছে।এ ক্ষেত্রেও বিজেপি দলের সঙ্গে তাঁর সুর অভিন্ন ।এতগুলো মিল কি কাকতালীয় বলা যায় ?এত মিল দেখে,মাননী্য় রাজ্যপাল, আপনাকে যদি সাধারণ মানুষ বিজেপির এজেন্ট বলে,তাহলে কি খুব অন্যায় হবে মহাশয় ?