সুনামগঞ্জে আওয়ামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ

 শামীম আহমদ তালুকদার

সম্প্রতি সময়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্টিত হয়ে গেলো। সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলার সকল উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের সময় ও তারিখ বেধে দেওয়া হয় ওই সভায় থেকে। এতে করে জেলায় আওয়ামী রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠে। ছাতক-দোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলার ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে ব্যস্ত সময় পার করেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ঠিক সেই সময়ে আবারো ঘূর্ণিপাকের আবর্তে জেলায় আওয়ামী ঘরানার রাজনীতি। পরবর্তিতে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আকষ্কিক বন্যার কারনে উপজলা কমিটির সম্মেলন স্থগিত করা হয়।

প্রায় দুই যুগের অধিক সময় ধরে ছাতক-দোয়ারা আওয়ামীলীগ দুই বলয়ে বিভক্ত। এক বলয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক। অপর বলয়ে জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী ও তার অগ্রজ ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী। উভয় বলয় পৃথক ভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্ততি কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান এবং গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ভিপি আওয়ামীলীগ নেতা আওলাদ আলী রেজার মধ্যে অন্তর্দলীয় বিবাদ সৃষ্টি হয় মাস খানে পূর্বে। এই দই নেতা-ই এমপি মানিক বলয়ের। এরপর গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনের দিন এমপি মানিকের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন আওলাদ আলী রেজা। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক কতৃক কটুক্তির প্রতিবাদে গত ১লা জুন গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা অওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী ও সভাপতিত্ব করেন আওলাদ আলী রেজা। এই সভা থেকে নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে স্পষ্টত অন্তর্দলীয় বিবাদের কথা উঠে এসেছে। আওলাদ আলী রেজা, সাবেক যুবলীগ নেতা আব্দুস সহিদ মুহিত ও গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পীর মুহিবুর রহমান টুনু এই তিন নেতাকে নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ফের চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নানা ধরনের অজানা আশঙ্কা মনে দানা বাঁধছে বর্তমান এই অস্থির রাজনীতিকে ঘিরে। কিছুটা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন বটে স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে। রাজনীতির গতিপথ তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় থাকবে একথাটি এখন বিশ্বাস করতে পারছিনা। কারন দীর্ঘদিনের দ্বিধা-বিভক্তি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না শীর্ষ নেতারা। বরং অন্তর্দ্বন্ধ ও কোন্দল দিন দিন বাড়ছে।

দেশবরেণ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট-লেখক ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক প্রয়াত পীর হাবিবুর রহমান স্মরণে সুনামগঞ্জে নাগরিক শোকসভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর দিয়ে শকুনেরা উড়ছে। এরা পীর হাবিব ভাইদের মানচিত্রে থাবা দিতে চায়। তাঁর এই বক্তব্যটি বেশ কয়েকবার শুনেছি। আসলেই এ শকুন স্বাধীনতাবিরোধীরা। যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। তারাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে চায়। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে থাকেন, আমার কাছে সুনামগঞ্জ আর গোপালগঞ্জ একই। সরকার সব সময় হাওরবাসীর পাশে আছে। আমার মনে হয় শকুনেরা এখন সুনামগঞ্জকে টার্গেট করেছে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগকে তারা দূর্বল করে দিতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গর্ব করে বলেন, আমার কাছে সুনামগঞ্জ আর গোপালগঞ্জ একই । হাওরবাসীর প্রতি তাঁর সেই আস্থা ও ভালবাসার জায়গাটুকু ধবংস করে দিতে চায় এই শকুনেরা। সামনে আওয়ামীলীগের কঠিন অগ্নি পরীক্ষা। এ পরিক্ষায় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ উত্তীর্ণ হতে পারবেতো ?

১৯৯৭ সালে ডা. হারিছ আলীকে সভাপতি ও ছানাউর রহমান ছানাকে সাধারণ সম্পাদক এবং অপর পক্ষে আবরু মিয়া তালুকদারকে সভাপতি ও ফারুক আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে সে সময় ছাতক উপজেলা আওয়ামীলীগের পাল্টা পাল্টি কমিটি গঠন করা হয়। দলীয় সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালে উভয় গ্রুপকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে উভয় কমিটি ভেঙে দিয়ে ডা. হারিছ আলীকে আহ্বায়ক ও লুৎফুর রহমান সরকুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেন। কিন্তু প্রায় ২১ বছরে গ্রুপিং কোন্দলের অবসান না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। ডা. হারিছ আলী মৃত্যুর পর লুৎফুর রহমান সরকুম আহবায়ক পদে আসীন হন। ২০১৬ সালের শেষের দিকে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লুৎফুর রহমান সরকুম মৃত্যুবরণ করেন। উপজেলা আওয়মীলীগে আরেকটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। এমপি মানিক বলয়ে ছানাউর রহমান ছানাকে আহবায়ক ও সৈয়দ আহমদকে যুগ্ম আহবায়ক এবং মেয়র কালাম বলয় থেকে আবরু মিয়া তালুকদারকে আহ্বায়ক ও কল্যাণব্রত দাসকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে উপজেলা আ’লীগের পৃথক দুটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। মুহিবুর রহমান মানিক এমপি ও পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী বিভক্ত থাকলেও দীর্ঘদিন এখানে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বা হানাহানির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই ছাতক উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় উপজেলা আওয়ামী ঘরানার রাজনীতি। একটি পক্ষ সম্মেলন প্রতিহত করার ঘোষনা দেন। অবশেষে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন কেন্দ্র্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সহ-সভাপতি বাবু সুব্রত পুরকাস্থ্যের মধ্যস্থতায় বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে সম্মেলন শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট মোল্লা মো: আবু কাওছার। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুহিবুর রহমান মানিক এমপি। আলহাজ¦ ওবায়দুর রউফ বাবুলু কে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর দিঘলী ও শিবনগর গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মসজিদের মুয়াজ্জিন ইয়াকুব আলী নিহত হয়। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ওবায়দুর রউফ বাবলুকে ইয়াকুব হত্যা মামলার প্রধান আসামী করা হয়। এ ঘটনায়ও উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।

উপজেলা পরিষদের মাসিক একটি সমন্বয় সভা শেষে উপজেলা হলরুমে থেকে বের হয়ে পরিষদ চত্বরে যাওয়ার সময় এমপি মানিক গ্রুপের উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদের সঙ্গে মেয়র কালাম গ্রুপের সিংচাপইড় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মো. সাহেলের কথা কাটাকাটির হয়। দীর্ঘদিন ধরে সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেল ও উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদের মধ্যে রাজনৈতিক গ্রুপিংসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও দু’চেয়ারম্যানের মধ্যে একাধিকবার মুখোমুখি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ বাদী হয়ে সেই সমেয় দ্রুত বিচার আইনে ছাতক থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন।

এর পূর্বে ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী ছাতক শহরে সুন্নি-কওমি পন্থীদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে বাগবাড়ি গ্রামের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আব্দুল বাছিত বাবুল ও গণেশ পুর গ্রামের রুবেল মিয়া নিহত হয়। নিহত বাবুল মিয়ার ভাই কবির মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আসামী করা হয় যুবলীগের দেলোয়ার হোসেন। এবং নিহত রুবেল মিয়ার পক্ষে তার ভাই আহমদ আলী বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় সেচ্ছাসেবকলীগের সাদমান মাহমুদ সানীকে আসামী করা হয়। দুজনেই মেয়র কালাম গ্রুপের।

অপর দিকে রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারনে ও রাজনৈতিক কাঁদা-ছুঁড়াছুঁড়ি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করে উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দেন এমপি মানিক বলয়ের সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকন। এ পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। পরবর্তীতে তিনি অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে চলে যান। এর পর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জাউয়া বাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন।

সিংচাপইর ইউপির কালিপুর ও খাসগাঁও এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মো: সাহেলের বিরুদ্ধে ইউনিয়নের ২, ৫ ও ৮নং ওয়ার্ড সদস্যের উপর হামলা ও উন্নয়ন কাজে ব্যঘাত সৃষ্টির অভিযোগে ৩টি ওয়ার্ডবাসির ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন চলাকালে কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসব ঘটনায় ছাতকের জনপ্রতিনিধিরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। এমপি মানিক সমর্থক ৭ ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান যৌথভাবে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেলকে বিরুদ্ধে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করেন। অন্যদিকে, মেয়র কালাম সমর্থকরা সাহেলকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়ানো হয়েছে দাবি করে কর্মসূচি পালন করেন।

অন্যদিকে ২০২১ সালে অনুষ্টিত ইউনিয়ন নির্বাচনে উপজেলার সিংচাপইড় ইউনয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রের মনোনয়ন লাভ করেন এমপি মানিক বলয়ের মো. মোজাহিদ আলী। সিংচাপইড় ইউনিয়নে এর পূর্বে নির্বাচনে এবং পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বদ্বিতা করে ছিলেন মুজাহিদ। কিন্তু ২০২১ সালে অনুষ্টিত ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে পর পর দুই বারের বিদ্রোহী প্রার্থীকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রের মনোনয়ন দিয়ে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে উপজেলা জোড়ে শুরু হয় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। কিন্ত মুজাহিদ আলীকে মনোনয়ন দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মাথায় তার মনোনয়নের সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে এখানে সাবেক চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেলকে প্রার্থী মনোনয়ন করে আওয়ামীলীগের কেন্দ্র্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। এবং চেয়ারম্যান পদে সাহাব উদ্দিন সাহেল বিজয়ী হন।

অনেক সিনেমায় দেখা যায়, নায়ক একাই লড়ে চলেছেন ডজন ডজন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। ছুরি-বল্লম-পিস্তল-তলোয়ার নিয়ে যত লোকই তাঁকে আক্রমণ করুক না কেন, নায়ক ঢিসুম ঢিসুম কিলঘুষি আর উড়ন্ত লাথি দিয়ে সবাইকে কুপোকাত করে ফেলেছেন নিমেষেই। মাঝেমধ্যে অবাক হই, কী করে একজনের পক্ষে এতগুলো লোককে পিটিয়ে কাবু করে অক্ষত অবস্থায় টিকে থাকা সম্ভব! সিনেমায় এটাই হয়। এভাবেই লেখা হয় চিত্রনাট্য। কিন্ত রাজনীতি কোন সিনেমার গল্প নয়। নেতা হওয়া কোন সিনেমার নায়কের চরিত্রে অভিনয় করা নয়। এত নায়কের ভিড়ে একজন নেতা কেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই নেতার নাম মুহিবুর রহমান মানিক। অনেক পুরোনো একটি বটবৃক্ষ। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯০ সালে প্রথম ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতীয় নেতা মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ ১৯৭৩ সালে এই আসনে বিজয়ী হওয়ার পর আসনটি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচন অনষ্টিত হয় এবং ১৯৭৩ সালে এই আসনে নৌকা প্রথম পরাজিত হয়। ১৯৭৯, ১৯৮৬ সালেও নৌকা পরাজিত হয়। সেই সময়ে ১৫ দলীয় জোটের নেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য বলেন মুহিবুর রহমান মানিককে এবং তিনি মনোনয়ন লাভ করেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯৯১ সালে অনুষ্টিত সাধারন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। সুনামগঞ্জের ৫ টি আসনের মধ্যে ৪ টিতে নৌকা বিজয়ী হলেও প্রতিকুল অবস্তার কারনে মুহিবুর রহমান মানিক (নৌকা) পরাজিত হয়। নেত্রীর নির্দেশে তিনি কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন এবং ১৯৯৬ সালে অনুষ্টিত সাধারন নির্বাচনে তিনি আবারো নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন লাভ করেন। ১৯৯১ সালে একটা অপশক্তি পান পাতা প্রতীক নিয়ে নৌকাকে পরাজিত করে, ১৯৯৬ সালে তারাই পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মুহিবুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে। কিন্ত ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিপুল ভোটে মুহিবুর রহমান মানিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে মুহিবুর রহমান মানিক এমপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে লড়াই সংগ্রাম করে মাটি ও মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জানেন তিনি সঠিক পথে আছেন। তাই ২০০১, ২০০৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সহ ৭ বার মুহিবুর রহমান মানিককে মনোনয়ন দিয়েছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে যারা আওয়ামীলীগের সুবিদা নিয়েছে তারাই নৌকা ডুবিয়েছে। একটি ষড়যন্ত্র মুলক ঘটনা ও মামলায় মিথ্যা স্বাক্ষি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আমলে মুহিবুর রহমান মানিককে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। বছরের পর বছর তিনি কারা বন্ধি ছিলেন। মুক্তিলাভের পর ১/১১ এর কারনে আরো দীর্ঘদিন করাগারে ছিলেন মুহিবুর রহমান মানিক এমপি। এর পর প্রতিটি নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা টানা ১৩ বছরে বিশেষ উন্নয়নের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেস উল্লেখযোগ্য। সারা দেশের ন্যায় সুনামগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ও চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের জন্ম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ বৃহৎ একটি রাজিৈনতক সংগঠন। কোন্দল স্মৃষ্টি হতেই পারে। তবে তাৎক্ষনিক নিরশন করা আবশ্যক। সামনে আওয়ামীলীগের কঠিন অগ্নি পরীক্ষা। উন্নয়নের ধারাবাহিতা বজায় রাখতে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগে সিনিয়ির সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুরুল হুদা মুকুট, সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক এমপি দু’জনের-ই যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আভ্যন্তরিন দন্ধ পরিস্থিতি নিরশনে আরো আন্তরিক হবেন এই প্রত্যাশা।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী

You might also like