ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ ভাষাসংগ্রামী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেছেন, শত বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। প্রতিবছর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন মেধা, নতুন নতুন প্রতিভা যুক্ত হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার লাভের সূচনায় এশিয়ার মধ্যে আধুনিক ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রবর্তনে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি অগ্রদূত বিশ্ববিদ্যালয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় শতবর্ষ’ শিরোনামে ওই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী আরও বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অসীম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় যে কাজটি করতে পারেনি, সেই কাজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করে দেখিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বাধীন ও অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বেগবান করেছে, বাংলা ভাষাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় উন্নীত করেছে। আজ বাংলা একাডেমিতে বাংলা ভাষা নিয়ে যত গবেষণা হয়, তার অধিকাংশই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা করে থাকেন।তিনি বলেন, গত শতকের পঞ্চাশের দশক ছিল বাংলাদেশের বাঙালির রেনেসাঁর কাল। এটি ছিল শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান চর্চায় পূর্ব বাংলার বাঙালির নব-উন্মেষের কাল। এতে নেতৃত্ব দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই দশকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ত্রিশের দশকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন শুরু হয়।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বিখ্যাত ব্যক্তিদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলিবর্ষণের পরেই রফিকের লাশ দেখে আমি আমার গানটি লিখি। এটি এখন ভাষা আন্দোলনের গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি?’।এর আগে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেজেছিল বর্ণিল সাজে। বিশেষ দিনটি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, কলা ভবন, স্মৃতি চিরন্তন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, প্রশাসনিক ভবনসহ কয়েকটি ভবন লাল, সবুজ, নীল রঙের রঙিন বাতির আলোয় সাজানো হয়।

অন্যান্য বছর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে যেমন বর্ণাঢ্য আয়োজন হয়, এবার করোনার কারণে তার কিছুই সম্ভব হয়নি। তবে দেশ ও প্রবাসের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ১০১তম জন্মদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুভেচ্ছা জানান ও তাদের স্মৃতিকথা, আবেগ ও উচ্ছ্বাসের পঙক্তিমালা তুলে ধরেন। পোস্ট করেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নানা স্মৃতিসংবলিত ছবি।বিকেলে আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ।শুভেচ্ছা বক্তব্যে এ. কে. আজাদ শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গণহত্যার শিকার হয়নি আমার জানা মতে। কিন্তু, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এ দেশের দোসররা সার্চলাইট নামে যে অপারেশন চালায় তার মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিশেষত, জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থাপনাই আক্রমণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়াও পতাকা উত্তোলন করে একটি জাতিরাষ্ট্রের উত্থান এটিও বিশ্বের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এই দুটি মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে।এর আগে সকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড্ডয়নের মাধ্যমে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রতীকী কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।পরে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান কার্জন হল প্রাঙ্গণে একটি বুদ্ধ নারিকেল গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে শত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন।

You might also like